আমরা জানি শিয়ালের কামড় থেকে বাঁচতে ভয়ে থাকে হাঁস, মুরগী, ছাগল। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো তারা সবাই থাকে একসাথে। বুধবার সকালে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের নয়নকান্দি গ্রামে গিয়ে এমনই চিত্র দেখা গেছে। এসব হাঁস, মুরগী, ছাগল ও শিয়ালের মালিক ওই গ্রামের আজিজুল হক। তবে তাদের লালন পালন করেন তার স্ত্রী সুমা আক্তার। আদর করে শিয়ালটির নাম রাখা হয় লালু। লালু থাকে পশু-পাখির সাথে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় পর তা দেখতে সম্প্রতি ওই বাড়িতে উৎসুক জনতার ভীড় যেন লেগেই আছে। বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, লালুটি বাড়ির পাশে একটি টিলায় বসে আছে। উঠানে ১২টি ছাগল ও বেশ কয়েকটি হাঁস-মুরগী রয়েছে। গৃহিনী সুমা আক্তার একটি পাত্রে খাবার দিলে হাঁস-মুরগী ও লালু তারা সবাই ওই পাত্রে খাবার খাচ্ছে। আর ছাগলগুলো তাদের চারপাশে ঘোরাঘুরি করছিল। দেখে মনে হচ্ছিল যেন তারা একই পরিবারের সদস্য। এসময় লালুকে নিয়ে কথা হলে সুমা আক্তার বলেন, গত দেড় বছর আগে তার স্বামী আজিজুল হক নাজিরপুর ইউনিয়নের লোহারগাও এলাকায় কাজে যান। সেখানের একটি জলাশয়ে মাছ ধরছিলেন কয়েক জন আদিবাসী নারী। তারা দেখেন পাশের একটি জঙ্গলে তিনটি শিয়ালের বাচ্চা পড়ে আছে। পরে তারা বাচ্চাগুলোকে উদ্ধার করে দুইটি নেন আরেকটি বাচ্চা দেন আজিজুলকে। সেইসময়ে শিয়ালটির বয়স প্রায় তিন মাস হবে। শিয়ালটি বাড়িতে আনার পর বোতলে ভরে পনের দিন শুধু দুধ খাওয়ানো হয়। পনের দিন পর বাড়ির লোকজনের মত শিয়ালটিও সবধরণের খাবার খাওয়ানো হয়। পরে তার নাম রাখা হয়। লালু বর্তমানে লালুর বয়স প্রায় দুই বছর। আজিজুল হকের বাড়িতে একটি শিয়াল ছাড়াও রয়েছে ১২টি ছাগল ও বেশ কয়েকটি হাঁস-মুরগী। তাদের রাখার জন্য উঠানে রয়েছে একটি ছোট টিনের ঘর। রাতে পশু-পাখি ও লালু এই ঘরেই থাকে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আকবর আলী বলেন, প্রতিদিনি সকালে শিয়াল, ছাগল, হাঁস, মুরগীগুলো ছেড়ে দেওয়ার পর তারা বাড়ির পাশে একটি টিলায় চলে যায়। সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় খাওয়া-ধাওয়া শেষে সন্ধ্যার আগেই শিয়ালটি হাঁস-মুরগী ও ছাগলগুলোকে তাড়িয়ে বাড়িতে আনে। এটি দেখে মনে হয় যেন শিয়ালটি মালিকের আদেশ পালন করছে। এই শিয়ালটি ঠিক মানুষের মতোই পোষ মেনেছে। প্রতিবেশী থেকে শুরু করে কাউকেও কামড়ানো বা কোন ধরণের অত্যাচারের ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেটেরিনারী সার্জন আনোয়ার পারভেজ বলেন, আমরা জানি শেয়াল হচ্ছে মাংসাশী প্রাণি এবং যেসব প্রাণির জলাতঙ্ক বা রর্্যাবিস (জুনোটিক রোগ) হয় বা জীবাণু বহন করে তাদের মধ্যে শেয়াল অন্যতম। সেক্ষেত্রে জলাতঙ্ক টিকা শিয়াল ও পালনকারী দুজনকেই নেওয়া উচিত। আবার শেয়ালের প্রধান খাবার প্রাণির মাংস, খরগোশ, ইঁদুর, টিকটিকি, মুরগি, হাঁস, ইত্যাদি সেক্ষেত্রে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রচলিত প্রবাদ শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা” যেন না হয় খেয়াল রাখতে হবে।