বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩০ অপরাহ্ন

যার চরিত্র মাধুর্যে বিমুগ্ধ পৃথিবী

আবুল মায়ামীন আশরাফী
  • আপডেট সময় শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩

বাদশাহ জুলানদি। ওমানের বাদশাহ। সত্যানুসন্ধানী বিচক্ষণ ব্যক্তিত্ব। তার কাছে রাসূলুল্লাহ সা: ইসলামের দাওয়াত পাঠান। নবীজী সা:-এর নির্দেশে সাহাবি আমর ইবনুল আস রা: ইসলামের দাওয়াত নিয়ে যান। বিচক্ষণ এই বাদশাহ নবীজী সা:-এর অনন্য চরিত্র মাধুর্যে বিমোহিত হয়ে মন্তব্য করেন- ‘আল্লাহর কসম! সে (দূত) আমাকে এমন একজন উম্মি নবীর কথা বলেছে- তিনি যখনই কোনা ভালো কাজের আদেশ করেন প্রথমে তিনিই সেই কাজটি করেন। আর যে কাজ হতে তিনি নিষেধ করেন, প্রথমে তিনিই তা বর্জন করেন। তিনি বিজয়ী হয়েও অহঙ্কার করেন না। কেউ তাঁর উপর প্রতাপ দেখালে রুষ্ট হন না। তিনি ওয়াদা পালন করেন। চুক্তিসমূহ বাস্তবায়ন করেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিঃসন্দেহে তিনি একজন সত্য নবী’ (কাজী ইয়াজ রচিত আশ-শিফা : ১/২৪৮)।
রাসূলুল্লাহ সা:-এর চরিত্র মাধুর্যের খানিকটা ঝলক বাদশাহ জুলানদির মন্তব্যে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। রাসূলুল্লাহ সা:-এর আখলাক-চরিত্র ছিল পূর্ণতা ও পরিব্যাপ্তিতে বিভাসিত। তাঁর চরিত্রের প্রতিটি দিক ছিল পূর্ণাঙ্গ ও সমপর্যায়ের। পাহাড়সম ধৈর্য ও দুর্বার সাহসিকতার অপূর্ব সমন্বয় ছিল তাঁর যাপিত জীবনের ছত্রে ছত্রে। দয়া-মায়া, সহনশীলতা ও আমানতদারিতার সর্বোচ্চ চূড়ায় ছিল তাঁর অবস্থান। সময়ের আবর্তনে তাঁর চরিত্রের মাঝে তারতম্য ঘটেনি। জীবনের কোনো সময়ে একটু বেশি আবার কখনো একটু কম এমনটা ঘটেনি। মুহাম্মদ সা: ছাড়া জগতের আর কোনো মানুষের মাঝে একসঙ্গে এতগুলো চারিত্রিক গুণের সমাবেশ পরিলক্ষিত হয়নি।
রাসূলুল্লাহ সা:-এর উত্তম চরিত্রাবলির মূল উৎস কী ছিল? কোন সে প্রেরণায় চরিত্র মাধুর্যে তিনি আকাশের উচ্চতাকেও হার মানিয়েছেন? কুরআনুল কারিমই ছিল তাঁর অনন্য চরিত্র মাধুর্যের অনুপম উৎস। তিনি কুরআন মাজিদ থেকেই তাঁর চারিত্রিক গুণাবলী আহরণ ও সমৃদ্ধ করেছেন। ফলে কুরআনই তাঁর পূর্ণ গুণাবলীকে পৌঁছে দিয়েছে অনন্য উচ্চতায়। তাঁর সুন্দর শিষ্টাচারকে করেছে আরো সৌন্দর্যময়, আরো বিভাময়। আর এটা সম্ভব হয়েছে কুরআনের প্রতি তাঁর আত্মনিবেদনের বদৌলতে। কুরআনের অনুপম নির্দেশনামালা নবীজী সা:-এর যাপিত জীবনে বাস্তবায়িত চমৎকারভাবে। যেন তিনি ছিলেন কুরআনের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তাই তো হজরত সাদ ইবনে হিশাম ইবনে আমের রা: যখন উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রা:কে রাসূলুল্লাহ সা:-এর চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন তখন উম্মুল মুমিনিন জবাবে বলেছিলেন- তুমি কি কুরআন পড়নি? সাদ ইবনে হিশাম বললেন, পড়েছি। হজরত আয়েশা রা: বললেন, ‘কুরআনই ছিল রাসূলুল্লাহ সা:-এর আখলাক চরিত্র’ (মুসলিম : ৭৪৬)।
রাসূলুল্লাহ সা: নিজে যেমন উত্তম চরিত্রের সর্বোচ্চ চূড়ায় ছিলেন ঠিক তেমনি অন্যদেরকে উত্তম চরিত্রবান হওয়ার নির্দেশনা দিতেন। তিনি বলেন- ‘নিশ্চয়ই মুমিনদের মধ্যে তার ঈমান পরিপূর্ণ, যার চরিত্র সর্বোৎকৃষ্ট এবং যে তার স্ত্রী-পরিবারের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল’ (তিরমিজি : ২৬১২)।
রাসূলুল্লাহ সা:-এর উত্তম চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাঁর পরিবারের সাথে, তাঁর সাথী সঙ্গী মুমিনদের সাথে, সমাজে বসবাসরত অমুসলিমদের সাথে এমনকি যুদ্ধরত শত্রু দলের সাথেও তাঁর সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতাপূর্ণ আচরণ তাঁর চরিত্রকে নিয়ে গেছে অনন্য এক উচ্চতায়। রাসূলুল্লাহ সা:-এর উত্তম চরিত্র এতটা ব্যাপক যে, তাঁর চরিত্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করে বিস্মিত ও বিমুগ্ধ হয়েছেন মুসলিম থেকে শুরু করে বিশ্বের অনেক অমুসলিম প-িতও। বিখ্যাত ইংরেজ দার্শনিক উইলিয়াম ম্যুর (১৮১৯-১৯০৫) বলেন- ‘তাঁর পুরো জীবন ছিল সহজ ও স্বাভাবিকতার নান্দনিক চিত্র। তাঁর অনন্য রুচি ও ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাঁর বহু অনুসারীর কথায়। বিনয়, নম্রতা, সহানুভূতি, ধৈর্য, অন্যকে নিজের ওপর প্রাধান্য দান এবং প্রচুর দানশীলতা তাঁর চরিত্রকে দিয়েছিল এক অনন্য সাধারণ সৌন্দর্য। তাঁর ভালোবাসার আকর্ষণ চার পাশের সবাইকে মোহিত করে রাখত…’ (হায়াতু মুহাম্মদ : উইলিয়াম ম্যুর)। তিনিই আমাদের প্রিয় রাসূল সা:, যার চরিত্রমাধুর্যে বিমুগ্ধ পৃথিবী। যাকে নিয়ে গর্ব করি আমরা, গর্ব করে পুরো মানবসভ্যতা। লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া মাখযানুল উলুম টঙ্গী, গাজীপুর




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com