বাংলাদেশে হার্টের পেসমেকার, ভালভসহ মেডিকেল ডিভাইস আমদানিমূল্য এবং রোগীদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে দামের বিস্তর ফারাক রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, এটি চাল-ডালের কোনো ব্যবসা নয়, এটি জীবন রক্ষাকারী পণ্যের ব্যবসা। এক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা প্রয়োজন।
গতকাল রোববার (৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সভাকক্ষে মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্যদের নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। ভোক্তার ডিজি বলেন, মেডিকেল ডিভাইসের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি ও দামের যে তথ্য আমরা পেয়েছি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাটা এনালাইসিস করে যে ইনফরমেশন (তথ্য) পেয়েছি, এ দুইয়ের দামের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলাদা একটি স্টাডি করেছি, সেখানেও এসব পণ্যের দামে বিস্তর ফারাক পেয়েছি।
এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, প্রতিবেশী দেশেও চিকিৎসাখরচ অনেক কম। কিন্তু আমাদের দেশে কেন এত বেশি হবে তা ভালো করে দেখার সুযোগ আছে। আমরাও পেসমেকার-ভালভ যেসব দেশ থেকে আমদানি করি, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও সেসব দেশ থেকেই আমদানি করে। তাহলে দুই দেশের মধ্যে এত দামের ফারাক হবে কেন, সেটি জানা খুবই জরুরি। ভোক্তার ডিজি বলেন, হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত মেডিকেল ইকুইপমেন্টের দাম ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ঠিক করে দেওয়া। আমরা যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের থেকে আমদানির তথ্য নিলাম তখন দেখতে পেলাম ৩০ ডলার থেকে ৭ হাজার ডালারের ইকুইপমেন্ট রয়েছে। এক্ষেত্রে ৩০ ডলারের ইমপোর্ট করে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কি না সেটা দেখতে হবে। এটি চাল-ডালের ব্যবসা নয়, এটি জীবন রক্ষাকারী একটি পণ্যের ব্যবসা। এক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, মেডিকেল ইকুইপমেন্টের বিষয়টি সরকারের একটি নির্দিষ্ট বিভাগ দেখছে। সাম্প্রতিক সময়ে এখানে কিছু অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। একটি প্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত মূল্যের থেকে ৭০ হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রয়ের প্রমাণ পেয়েছি। ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসেছি। কোনো পণ্যের আমদামিমূল্য কত, আর বিক্রয়মূল্য কী রাখা হচ্ছে, তা জানার প্রয়োজন। আজ সোমবার ৭ আগস্ট দাম পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে এবং আগামী এক মাসের মধ্যে কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী অবস্থা জানানো হবে বলেও জানান এ এইচ এম সফিকুজ্জান। এসময় জীবন রক্ষাকারী এ পণ্যে যেন মনোপলি তৈরি না হয় সেটিই তাদের প্রত্যাশা বলেও জানান তিনি।
এসময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ক্লিনিক শাখার সহকারী পরিচালক ডা. মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা থেকে যেটি করে থাকি, জেলা হাসপাতাল থেকে বিশেষায়িত হাসপাতাল পর্যন্ত যন্ত্রপাতিগুলো ফলোআপ করি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে মেডিকেল ডিভাইস বিশেষ করে স্টেন্টের দামগুলোর বিষয়ে নিয়মিত তদারকি করি। এক্ষেত্রে সমস্যাটা হলো প্রাইভেট হাসপাতালগুলো। সেগুলোর সঙ্গে আমদানিকারক কোম্পানিগুলোর একটা মিউচুয়াল আন্ডার্সেন্ডিং (পারস্পরিক বোঝাপড়া) থাকে। তারা নিজেরা ইচ্ছেমতো দাম দিয়ে সেগুলো কেনাকাটা করে এবং বিক্রিও সেই অনুযায়ী একটা দাম নির্ধারণের মাধ্যমে করে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালে সব যন্ত্রপাতি টেন্ডারের মাধ্যমে কেনাকাটা করতে হয়। তবে স্টেন্ট, পেসমেকারের ক্ষেত্রে কোনো টেন্ডারে হয় না। বিষয়টি নিয়ে আমাদের একটু ভাবা যেতে পারে। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে হাসপাতালগুলোতে যাই, ক্যাথল্যাবগুলো দেখি এবং নিয়মিত মনিটর করার চেষ্টা করি। বিশেষ করে হৃদরোগ হাসপাতালেও যেন এ কেনাকাটাসহ সব কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে হয়, সেগুলো আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখবো।
ডা. মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, আমরা চেষ্টা করবো কোনোভাবেই যেন রোগীর স্বার্থ ব্যাহত না হয়। তাদের স্বার্থ সংরক্ষণই আমাদের মূল দায়িত্ব। বাংলাদেশ মেডিকেল ডিভাইস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের দামের পার্থক্য আছে এটা ঠিক, তবে আমরা পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হলেও তারা নয়। ভারতে পর্যাপ্ত স্টেন্ট তৈরি হয় বিধায় তারা কমমূল্যে রোগীদের দিতে পারে। তারা পাঁচ বছর আগেই স্টেন্টের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়, এর বেশি রোগীদের থেকে নেওয়া যাবে না। কিন্তু আমাদের দেশে এমন কোনো পদ্ধতি নেই।
যেহেতু আমাদের দেশ পুরোপুরি আমদানিনির্ভর, আমরা চাইলেই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটা সিদ্ধান্ত দিয়ে দিতে পারি না। তাছাড়া এ মেডিকেল ডিভাইসগুলো কেনার আগে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে আমাদের একটি অ্যাপ্রুভাল নিতে হয় এবং আমদানির পর ইনডেন্ট অনুযায়ী ইনভয়েসের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হয়। সবশেষে একটা দাম নির্ধারণ করা হয়। যে কারণে এখানে মাত্রাতিরিক্ত দাম রাখার কোনো সুযোগ নেই।