মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ১০:২০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন ৫ টাকার নোটে মুদ্রিত নওগাঁর কুসুম্বা মসজিদ ভালুকায় কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ মেলান্দহে অভ্যন্তরীণ বোরো ধান:চাল সংগ্রহের শুভ উদ্বোধন জলঢাকায় কৃষকদের ফসলি জমির ধান নষ্ট পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র নেই তবুও চলছে ইট ভাটা ভোটারদের আস্থা চেয়ারম্যান প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকের এস এম মুইদুল ইসলামের উপর কালীগঞ্জে ৪ কোটি টাকার রাস্তায় নিম্নমানের ইট ব্যবহারের অভিযোগ খাদ্য ও শস্য পণ্য উৎপাদন বাড়াতে পারলে,দেশের আর্থিক অগ্রগতি বাড়বে-এস এম শাহজাদা এমপি আবারও ‘আওয়ামী লীগের সাজানো বিষ্ফোরক মামলায়’ পিরোজপুর জেলা যুবদলের সদস্য সচিব সহ যুগ্ম আহ্বায়ক-১ কারাগারে জগন্নাথপুরে মাদ্রাসার ফলাফল সন্তোষজনক জমে উঠছে পিরোজপুরে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা

চট্টগ্রাম নগরবাসীর চরম দুর্ভোগ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০২৩

টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ডুবে গেছে সড়কের আশপাশের দোকানপাট। নগরীর কোথাও কোমরপানি, কোথাও হাঁটুপানি। পানিবন্দি কয়েক হাজার পরিবার। অনেকের ঘরের চুলাও জ্বলছে না। পানি ঢুকেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বহদ্দারহাটের বাসায়। তার বাসার সামনের সড়কে কোমরপানি। এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরীর বাসিন্দাদের।
অথচ জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলমান। এর মধ্যে অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পথে। তবে শেষ সময়ে এসে একটি প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। প্রকল্পগুলোর কাজ শেষের পথে থাকলেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না। আগের মতোই অল্প বৃষ্টিতে ডুবে যাচ্ছে নগরী। ফলে প্রকল্পগুলোর কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নগরবাসী। তবে জলাবদ্ধতার কারণে নগরবাসীর দুর্ভোগের দায় নিতে রাজি নন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড। এক পরিমাণ উন্নয়নকাজ করার পরও কেন জলাবদ্ধতা হচ্ছে, সে বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবে।’
চার প্রকল্পের কাজ শেষের দিকে: নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চার প্রকল্পের মধ্যে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনরায় খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক সিডিএর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী। ২০১৭ সালের আগস্টে প্রকল্পটির অনুমোদন হয়। পরের বছর কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৯ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে; যা অনুমোদনের অপেক্ষায়। বাকি তিন প্রকল্পের মধ্যে এক হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ‘নগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পাশাপাশি দুই হাজার ৭৪৬ কোটি ৩৯ লাখ ৪৭ টাকায় ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুঘাট সেতু থেকে চাকতাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। এ ছাড়া এক হাজার ৩৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বহদ্দারহাটের বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খননের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিটি করপোরেশন।
সিডিএ’র কর্মকর্তারা জানান, পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। ২০১৮ সালের এপ্রিলে কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের অধীনে নগরীর ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টির সংস্কার ও সম্প্রসারণের কথা রয়েছে।
এই প্রকল্পের পরিচালক সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, ‘প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ। ৩৬টি খালের মধ্যে ১৬টির সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। ৯টি খালের কাজ চলমান। বাকি ১১ খালের কাজ শেষ করতে সময় লাগবে। কারণ এসব খালের জমি অধিগ্রহণ শেষ করতে পারেনি সিডিএ। কাজ পুরোপুরি শেষ হলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। সুফল পাবেন নগরবাসী।’
দুই হাজার ৭৪৬ কোটি ৩৯ লাখ ৪৭ টাকার প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাস বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। আগামী বছরের জুনের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের অধীনে খাতুনগঞ্জসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার জলবদ্ধতা নিরসনে ১২টি খালের মুখে রেগুলেটর ও পাম্প হাউস স্থাপনের কথা রয়েছে। বর্তমানে চাকতাই, খাতুনগঞ্জ, বলিরহাট ও নয়াখালে মোট চারটি খালের মুখে রেগুলেটর ও পাম্প হাউস বসানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি আট খালের কাজ চলমান আছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর তিন দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে।’
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, সময় মতো অর্থ ছাড় না পাওয়া এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পে ধীরগতি দেখা দিয়েছিল। প্রকল্পের অধীনে কালুরঘাট থেকে চাকতাই পর্যন্ত এলাকার মানুষকে বন্যা থেকে রক্ষা করার জন্য সাড়ে আট কিলোমিটারের বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ কমবে বলে আশা করা যায়।’ এক হাজার ৩৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খাল খননের কাজ প্রায় ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। দুই পাশের ওয়ালের কাজ চলমান আছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে পারবো বলে আশা করছি। প্রকল্পের অধীনে ২০ একর জমির মধ্যে ১৫ একর জমি বুঝে পেলেও এখনও পাঁচ একর বুঝিয়ে দেয়নি জেলা প্রশাসকের এলএ অফিস। খাল খননকাজ সম্পন্ন হলে নগরীর জলাবদ্ধতা অনেকাংশ কমে আসবে। খননকাজ শেষ হওয়ায় আগের মতো জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।’
রবিবার বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর চাকতাই-খাতুনগঞ্জ, রিয়াজুদ্দিন বাজার, নগরীর বাকলিয়া মিয়াখান নগর, মাস্টারপোল, বগারবিল, চকবাজার, ষোলশহর, হালিশহর, বহদ্দারহাট, কমার্স কলেজ সংলগ্ন এলাকা, ছোট পুল, বড় পুল, রঙ্গিপাড়া, সিডিএ আবাসিকসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার কারণে নগরবাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এসব সড়কে যানবাহন চলাচল অচল হয়ে পড়েছে।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, ‘নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার-হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান। ২০১৭ সালে এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও এখনও বিন্দুমাত্র সুফল মিলছে না। বরং জনদুর্ভোগ ও ভোগান্তি বেড়েছে। মেগা প্রকল্পের নামে দুর্নীতি হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে আর বাজেট দ্বিগুণ হচ্ছে। অথচ এসব প্রকল্পের কোনও সুফল দেখছি না। প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও সুফল মিলবে বলে মনে হচ্ছে না।’
নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মুবিন বলেন, ‘নগরীতে বসবাসকারী বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে ১৭ শতাংশ করে টেক্স নিচ্ছে সিটি করপোরেশন। অথচ জলাবদ্ধতা থেকে শুরু করে মশা নিধন কোনও কাজই করছে না। নগরবাসীর দুর্ভোগের দায় সিটি মেয়রকেই নিতে হবে।’- বাংলা ট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com