এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে বেড়েছে ডিমের দাম। আজকে এক ডজন ডিম পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। গত সপ্তাহে যা ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। আজ খুচরা বাজারে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪ টাকায়। আর প্রতি হালি ৫৫ টাকা করে। রাজধানীর নিউ মার্কেট, কাওরান বাজার, হাতিরপুল বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
নিউ মার্কেট কাঁচা বাজারের মায়ের দোয়া স্টোরের মালিক রহমত আলি জানান, গত ৬-৭ দিন ধরে ডিম বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমি এক ডজন ডিম পাইকারি ১৫০ টাকায় বিক্রি করছি। খামারি থেকে ডজন ডিম কিনেছি ১৪৪ টাকা করে। প্রতিটি ডিমের দাম কেনা পড়ছে ১২ টাকা। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ, নিজের খরচ, দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল এসব রয়েছে। ১৫০ টাকায় বিক্রি করে সামান্য লাভ হয়। ১৫৫ বিক্রি করতে পারলে ভালো হতো। ডিম কিনতে বাজারে আসা সংবাদকর্মী আবু হাসান বলেন, পরিবারের জন্য ডিম কেনা লাগে। অন্য অনেক প্রয়োজনীয় জিনিসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডিমের দামও বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগেও এক ডজন ডিম ১৪০ টাকায় কিনেছি। আজ কিনলাম ১৫০ টাকা দিয়ে। আমাদের বেতন তো মাসে মাসে বাড়ে না!
হাতিরপুলের দোকানি মিজানুর বলেন, আড়ত থেকে প্রতি পিস ডিম ১২ টাকায় কিনেছি। এরপর গাড়ি ভাড়া আছে, গরমে অনেক ডিম নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি পিস ১৪ টাকায় বিক্রি না করলে লাভ হয় না। তবে ডজন হিসাবে নিলে ১৬০-১৬৫ টাকা নিই। অপরদিকে একাধিক খামারি জানান, ডিমের দাম বেড়েছে এটা সত্যি। তারপরও মুরগীর খাদ্যের দাম অনেকগুণ বেড়ে যাওয়ায় তারা লোকসানে রয়েছেন। তারা প্রতিটি ডিম ১৩ টাকা করে বিক্রি করতে পারলে কিছু লাভ হতো বলেও জানান একাধিক খামারি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নরসিংদীর এক খামারি বলেন, আমরা সারা বছর কষ্ট করি। মুরগীর পেছনে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। অথচ লাভের বেশিরভাগটাই খায় দুই-তিনটি চিহ্নিত খামারি। এদের নাম সবাই জানে, কেউ কিছু বলে না। তারা একটা সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয়। আর দোষ হয় আমাদের মতো সাধারণ খামারিদের।
গাজীপুর জেলার খামারি রাসেল আহমেদ বলেন, বর্তমানে ডিম উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে গত মাস তিনেক ধরে আমি এই ব্যবসা নিজে না করে মুরগীর শেড অন্য একজনকে ভাড়া দিয়েছি। এখন যে দামে বিক্রি হচ্ছে, সেই দাম তো আর প্রান্তিক খামারিরা পায় না। কয়েকদিন পর দাম কমে যাবে। মাঝের এই সময়ে কোটি কোটি টাকা ৩-৪টি কোম্পানি মেরে দেবে।
রাসেল জানান, প্রতিদিন তার খামারে পাঁচ হাজার ডিম উৎপাদন হতো। প্রতি পিস ডিমে উৎপাদন খরচ পড়তো ১০ টাকা ৪০ পয়সা। তাদের কাছ থেকে ওই ৩-৪টি কোম্পানি পাইকারি ১১ টাকায় কিনে নিয়ে তা বিক্রি করতো ১২ টাকায়। আমরা লাভ পেতাম প্রতি ডিমে ৫০-৬০ পয়সা, আর তারা লাভ করতো ১ টাকা। এ কারণেই মুরগীর খামার ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানান রাসেল।