বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক কাঁচপুর শাখা স্থানান্তর দাউদকান্দিতে ১৭ বছরেও পাকা হয়নি ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তা: সেবা নিতে আসা মানুষের চরম দুর্ভোগ রংপুরে সড়ক পরিবহন আইন ও ট্রাফিক সংক্রান্ত সচেতনতা মুলক সভা শ্রীমঙ্গলে লোকালয় থেকে রেসাস বানর উদ্ধার আওয়ামীল লীগ ক্যাডার নজরুল সিন্টিকেটের দখলে ৩০ একর বনভূমি দেওয়ানগঞ্জে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা গলাচিপায় নবাগত উপজেলা প্রশাসনের সাথে রাজনৈতিক দলের মতবিনিময় সভা বাউফলে সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের ইট ব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগ কেরানীগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের মাসিক সমন্বয় সভা

আমানত সুরক্ষায় কঠোর বিএসইসি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৩

২০২৬ সালের মধ্যে টেকসই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে রূপান্তরে কাজ করছে সরকার। এ সময়ের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ৪৮০ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ বিনিয়োগ। বিশেষজ্ঞরা জানান, এই বিশাল অর্থ জোগানের সূতিকাগার হবে দেশের শেয়ারবাজার। এ লক্ষে কাজ করছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। জানা গেছে, বিগত ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ছিল বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবর্ণ সময়। ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে স্মরণকালের বড় ধসের আগ পর্যন্ত কমবেশি সবাই মুনাফা করতে পেরেছেন।কিন্তু হঠাৎ করেই বড় ধরনের ধস নামে বাজারে। একের পর এক দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন, বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজ করলেও আস্থা ফেরাতে ব্যর্থতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতায় তলানিতে নেমে আসে বাজারটি। ২০২০ সালের মার্চে অতিমারি করোনা সংক্রমণে পুরো পৃথিবীর সঙ্গে বাংলাদেশও স্থবির হয়। মহামারির মধ্যেই সরকার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) পুনর্গঠন করে। নতুন কমিশনের উদ্যোগে ওই বছরের জুন থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে পুঁজিবাজার।
বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাজারের গতি ধরে রাখতে হলে ভালো শেয়ারের পাশাপাশি নতুন পণ্য যুক্ত করতে হবে। এ জন্য দ্রুত বন্ড মার্কেটকে জনপ্রিয় করার কথাও বলেন কেউ কেউ। তাদের মতে, শুধু মূলধননির্ভর (ইক্যুইটি) বাজার দিয়ে পুঁজিবাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে না। আবার ব্যাংকনির্ভর বা ব্যবসায়ীদের সাময়িক বিনিয়োগনির্ভর বাজারের ধারা থেকে বেরিয়ে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোরও পরামর্শ দেয়। কমিশন বাজারে গতি আনার পাশাপাশি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ।
আগে বিএসইসি ছাড়া অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকেও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলিতে ঘন ঘন নীতিগত হস্তক্ষেপ করা হয়, যা অনেক সময় কোম্পানিগুলোর আয়কে প্রভাবিত করে এবং শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির কারণ হয়। তাই তারা এই ধরনের বাজারে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ বোধ করেনি।নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ শুরু করে। এতে পুঁজিবাজার উপকৃত হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সর্বাত্মক পারস্পরিক সহযোগিতায় সংকটময় পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার গতিশীল রাখার প্রয়াস নেয়।

যার ইতিবাচক ফল বাজারে আসতে শুরু করেছে। এখন থেকে প্রবাসী বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীরা বিদেশে বসে অনলাইনে দেশের যে কোনও ব্যাংকে হিসাব খুলতে পারবেন। সেই হিসাব থেকে দেশের পুঁজিবাজারে সহজে বিনিয়োগ করতে পারবেন তারা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে। এর ফলে বাংলাদেশে যে কোনও ব্যাংকের এডি (অথরাইজড ডিলার) শাখার মাধ্যমে হিসাব খুলে টাকায় লেনদেন করা যাবে। এতে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ বেড়েছে। এছাড়া শেয়ারবাজারের এক্সপোজার গণনায় পরিবর্তন এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, আমাদের বাজারে বিনিয়োগ করার মতো শেয়ারের সংখ্যা খুবই কম। মোট শেয়ারের সংখ্যাও বেশি নয়। ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা মিউচুয়াল ফান্ড এবং বন্ড ছাড়া ৩৪৯টি যেখানে মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জে ৫ হাজার ২৫৪টি এবং করাচি স্টক এক্সচেঞ্জে ৫৭৬টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। করপোরেট গভর্ন্যান্স এবং সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে ডিএসই’র কোম্পানির সংখ্যা মাত্র ৩০, যেগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিদেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ রয়েছে।
বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর আইপিওতে বৈচিত্র্য আনে। এ সময়ে স্থানীয় ইলেক্ট্রনিকস জায়ান্ট ওয়ালটন ও মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটার তালিকাভুক্তি বিনিয়োগকারীদের নতুন করে পুঁজিবাজারে সক্রিয় হতে উৎসাহিত করেছে।
বাংলাদেশের শেয়ারবাজার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাংক খাতের উপর নির্ভরশীল। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোকে বিভিন্নভাবে উচ্চ বিনিয়োগে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেই বিএসইসিসহ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিন্দার মুখে পড়ে। বিষয়টি মাথায় রেখে বিএসইসি কাজ করছে। তারা বন্ড বাজারকে শক্তিশালী করতে কাজ করছে। এছাড়াও কমিশন এসএমই প্ল্যাটফর্ম, অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি), এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ), ট্রেজারি বন্ড, কমোডিটি এক্সচেঞ্জসহ নতুন নতুন প্রোডাক্ট পুঁজিবাজারে সংযুক্ত করেছে। ইতোমধ্যে এর সুফল বিনিয়োগকারীরা পেতে শুরু করেছে।
এছাড়া বিএসইসির তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে ভালো কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনতে কাজ করছে।
জানা গেছে, ব্রোকারেজ হাউজের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের ঘাটতি সমন্বয় এবং অভিন্ন ট্রেডিং সফটওয়্যার ব্যবহার নিশ্চিতে কঠোর অবস্থানে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ইতোমধ্যেই ঘাটতিতে থাকা ১১৭ প্রতিষ্ঠানের ৬৪০ কোটি টাকা ঘাটতি পেয়েছে। ক্রেস্ট, তামহা ও বানকো এই তিন ব্রোকারেজ হাউজ বিনিয়োগকারীদের টাকা লোপাটের পর কঠোর অবস্থান নিয়েছে কমিশন।
অন্যদিকে বিদেশি এবং প্রবাসীদের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের শেয়ারবাজারের ব্যাপ্তি এবং বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় সংস্থাটি। কমিশন মনে করছে, পুঁজিবাজারে এনআরবি ও বিদেশিদের বিনিয়োগ থাকলেও তা খুব কম। কাজেই এখন এই বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গতিশীলতাও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তির বিবেচনায় বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোতে বাংলাদেশকে তুলে ধরে রোড শোতে দেশের অর্থনীতির সক্ষমতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, বাংলাদেশি পণ্য ও সেবা, শেয়ারবাজার এবং বন্ড মার্কেটকে তুলে ধরা হচ্ছে। বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ আকর্ষণই এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে প্রবাসীরা যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে, সে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেখানে প্রবাসীরা কীভাবে পুঁজিবাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করবে তার কৌশল ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় তুলে ধরা হয়।
এই আয়োজনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মূলত কয়েকটি বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে আছে-বাংলাদেশ উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশ। গত দশ বছরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে অগ্রগতি, অভ্যন্তরীণ বাজার বড়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। এখানে শ্রমের মূল্য কম, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো এবং বিনিয়োগ করলে মুনাফা সহজে দেশে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর আগে দেশের বাইরে দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, কাতার ও জাপানে সফলতার সঙ্গে রোড শো সম্পন্ন করেছে বিএসইসি। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ২৩ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং ২৮ আগস্ট মরিশাসে এবং আগামী অক্টোবরে ইউরোপের বিনিয়োগ আকৃষ্টে ফ্রান্স, জার্মান এবং বেলজিয়ামে রোড শো করতে যাচ্ছে সরকার।
দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কোম্পানি বিনিয়োগকারীর লভ্যাংশ অবণ্টিত রেখেছিল। বিনিয়োগকারীদের এই লভ্যাংশের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় কমিশন। সিএমএসএফ গঠনের পর এসব অবণ্টিত লভ্যাংশের একটি বড় অংশ তহবিলে ফেরত আনা হয়েছে। সেখান থেকে এখন তা লভ্যাংশের দাবিদারদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল বা (সিএমএসএফ) গঠনের পর এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১৭০ বিনিয়োগকারীকে তাদের প্রাপ্য লভ্যাংশ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নগদ লভ্যাংশ পেয়েছেন ৮০০ বিনিয়োগকারী। আর বোনাস লভ্যাংশ পেয়েছেন ৩৭০ বিনিয়োগকারী। সিএমএসএফের চেয়ারম্যান এবং সাবেক মুখ্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে কমিশন খুবই আন্তরিক। কমিশন দায়িত্বে নেওয়ার পর হারিয়ে যাওয়া পুঁজির সন্ধান করেন। দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের না পাওয়া লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্ধাবনী পদক্ষেপ নেয়। এজন্য সিএমএসএফ প্রতিষ্ঠা করে পুঁজি ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এটি শুধু বিনিয়োগকারীদেরই পুঁজি ফেরত দেয়নি, পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট মেটাতেও বড় ভূমিকা রাখছে।
সিডিবিএলের ভাইস চেয়ারম্যান একেএম নূরুল ফজল বুলবুল বলেন, উন্নত দেশে রূপান্তরে বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনও বিকল্প নেই। আর ভবিষ্যতে বিনিয়োগের সূতিকাগার হবে শেয়ারবাজার। বর্তমান কমিশন সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে। এজন্য কমিশন এককভাবে পারবে না, এজন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সেটির উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসির বর্তমান কমিশন।-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com