সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:০০ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
পুঁইশাক চাষে সফল সুফিয়া, আগ্রহী হচ্ছে অন্য কৃষকরাও অতিরিক্ত টোল আদায় করলেই ইজারা বাতিল-ভোলায় উপদেষ্টা সাখাওয়াত কৃতি ফিরোজীকে বাঁচাতে সাভারে চ্যারিটি কনসার্ট আওয়ামী লীগের সাথে দ্বন্দ্ব নাই, যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার চাই-আব্দুল আউয়াল মিন্টু জলঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের গণসমাবেশ সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপি লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শুরু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আগৈলঝাড়া বিএনপি’র উদ্যোগে আনন্দ র‌্যালি পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্তুদের অবস্থান কর্মসূচি জামালপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির আয়োজনে দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ ভুট্টা চাষে দেশের শীর্ষে চুয়াডাঙ্গা: ৫৯,৬৫৬ হেক্টর জমিতে আবাদ

বরগুনা-বেতাগী-ঢাকা রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ব্যয় বেড়েছে পণ্য পরিবহনে, বেকার শ্রমিকরা

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৩

দেশের উপকূলীয় জনপদ বরগুনা-বেতাগী-ঢাকা রুটের অনির্দিষ্টকালের জন্য লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ ও পণ্য পরিবহনে ব্যয় ও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছে লঞ্চ ও ঘাট শ্রমিকরা। ক্ষতির মুখে পড়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ঘাট ইজারাদাররা। গত সোমবার বরগুনা নদী বন্দর থেকে রাজহংস-৮ রাত ৮ টায় বেতাগী লঞ্চঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় এ রুটের লঞ্চ চলাচল। সেই থেকে গত তিন দিন ধরে এ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এতে দুর্ভোগ বাড়ার পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়েছে লঞ্চ ও ঘাট শ্রমিকরা। পণ্যের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করেছেন স্থানীয়রা। এ জনপদের যারা সাধারণ ব্যবসায়ী রয়েছে তাঁরা মালমাল বহনে ভোগান্তিতে পড়েছে। ফলে বিকল্প মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করে নিয়ে আসায় এর চাপাটা এখন পড়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। বেতাগী পৌর শহরের কাপড় ব্যবসায়ী হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘লঞ্চ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিকল্প পথে মাল পরিবহনে ব্যায় বেড়েগেছে। ফলে বেশি দামে পণ্য বিক্রয়ে বাধ্য হচ্ছি।’ লঞ্চ মালিকর্তৃপক্ষ বলছে, যাত্রী সংকটের কারণে লাগাতার লোকসান এড়াতে এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে গত এক বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে কবে নাগাদ, কিভাবে লঞ্চ চালু হবে কিংবা আদৌ লঞ্চ চলাচল করবে কিনা এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত বলতে পারছেন না তাঁরা। যাত্রী কমার পেছনে অবশ্য ভিন্নমতও রয়েছে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে লঞ্চ কোম্পানী মানুষকে জিম্মী করে সিন্ডিকেট,অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, বেপরোয়া আচরণ, নিরাপত্তার অভাব, ঝুঁকিকপূর্ণ ও নিন্মমানের যাত্রী সেবার ফলে যাত্রী কমেছে। যুগ যুগ ধরে এর আগে এ রুটে লঞ্চে চলাচল খুবই জনপ্রিয় ও ব্যয় কম ছিল্।ো তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে লঞ্চে যাতায়াতে যাত্রী কমেছে এ রুটে। প্রতিদিন ৩ টি করে বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচল করতো। বিশেষ দিনগুলোতে এই রুটে লঞ্চের সংখ্যা আরও বেড়ে যেত। ঢাকা-বরগুনা রুটে চলাচলরত এম কে শিপিং লাইন্স কোম্পানির বরগুনা ঘাটের ম্যানেজার এনায়েত হোসেন বলেন, আগে এই পথে চলাচলকারী একেকটি লঞ্চে বরগুনা নদীবন্দর ঘাট থেকেই প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ যাত্রী হতো। বর্তমানে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ২০০-৩০০ যাত্রী হচ্ছে। যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। বেতাগী লঞ্চ ঘাট শ্রমিক মো: সাহারুল হাওলাদার বলেন,‘ আমারমত অনেকেই বেকার হয়ে গেছে। আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছি।’শুধূ এরাই নয়,বুট-বাদাম,খাবার দোকানি থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র নানা পেশার মানুষ লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় অলস এবং পুন:রায় এ পেশায় ফিরতে পারবে কিনা দুশ্চিন্তায় সময় কাটাচ্ছে। লঞ্চ ষ্টেশন গুলো যেখানে জমজমাট ছিলো সেখানে হঠাৎ করে থমকে গেছে জনজীবন ও বেচা-কেনা। বেতাগী বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি পরেশ চন্দ্র কর্মকার বলেন, এই পথের লঞ্চ চলাচল অব্যাহত থাকা প্রয়োজন। প্রাচীন এই নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওযায় এখানটায় ব্যবসা-বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়েছে। বুধবার (২৩ আগষ্ট) সরেজমিনে বেতাগী লঞ্চ ষ্টেশনে গেলে দেখা যায়, যে সময়টা সড়কের উপড় ও পল্টুনের পেছনভাগে যাত্রীরা ভীড় করতো সেই সময়টায় যেন জনশূন্য ও খাঁ খাঁ করছে। পরিনত হয়েছে যেন বিরানভূমিতে। বরগুনা-বেতাগী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী একাধিক যাত্রীরা বলেন, লঞ্চে চলচলের মত সুবিধা দেশের আর কোন বাহনে নেই। এতে যাতায়াত খুবই আরামদায়ক ছিলো। বন্ধ ঘোষণার মধ্যে দিয়ে তা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের দাবি বরগুনা-বেতাগী-ঢাকা এ রুটের স্বাভাবিক ও সবসময় যেন আগের মত লঞ্চ চলাচল করে। বরগুনা জেলা যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সঞ্জীব দাস বলেন, বরগুনা জেলার ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে লঞ্চ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শুধু কম ভাড়াই নয়, লঞ্চ ভ্রমণ নিরাপদ ও আনন্দদায়ক। এভাবে লঞ্চ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘোষণায় আমরা ব্যথিত হয়েছি। এম কে শিপিং লাইন্স কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মাসুম খান বলেন, আমরা ঢাকা-বরগুনা রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছি। আগে ৬ হাজার লিটার দিয়ে আসা-যাওয়া করতাম। জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানে এখন ৩ হাজার লিটার দিয়ে আসা-যাওয়া করি। তাতেও প্রতিটি ট্রিপে দেড় থেকে ২ লাখ টাকার লোকসান হয়। গত মাসে ৩৮ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। তার ওপর ৪ হাজার কোটি টাকা তেলের দাম বাকি রয়েছে আমার। এতো লোকসান দিয়ে আর লঞ্চ চলাচল করাতে পারছি না। জ্বালানির দাম কিছুটা কমলে হয়তো পুষিয়ে থাকতে পারতাম। বেতাগী লঞ্চ ঘাটের ইজারাদার মো:কামাল হোসেন পল্টু বলেন,ব্যক্তি মালিকানাধীন হলেও পরিবহন ব্যবসা একটি সেবাধর্মী ব্যবসা। এর সাথে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ কোনা কোনভাবে জড়িত। তাই আগাম না জাানিয়ে লঞ্চ বন্ধ করতে পারেন না। এ কারনে আমি আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। যা কাটিয়ে উঠতে পারবোনা। বরগুনা নদীবন্দর কর্মকর্তা নিয়াজ মোহাম্মদ খান বলেন,‘আমাদেরকে না জানিয়েই হঠাৎ করে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। বন্ধ করার পর আমি এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com