কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক নির্ভরযোগ্য তথ্য কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো ফটিকছড়ি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নেও স্থাপন করা হয় কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাসের ‘তথ্য বোর্ড’। তবে আবহাওয়া যা-ই থাক না কেন, বোর্ডের তথ্যের আর পরিবর্তন হয় না কখনো। সরকার কৃষিখাতকে আরো যুগোপযোগী করতেই সারাদেশে সবগুলো উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নে ২১২ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। নিয়ম মোতাবেক প্রতিদিনের আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষকদেরকে জানানোর কথা। ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এ দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু এ নিয়ম যেন কাগজেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই ফটিকছড়ির সবকটি ইউনিয়নসহ দুটি পৌরসভা এলাকায়। ফলে একদিকে যেমন কৃষক আপডেট আবহাওয়া তথ্য পাচ্ছেনা তেমনি গচ্ছা গেছে এখাতে সরকারের কোটি টাকার বিনিয়োগ। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতারের সাথে সংযোগ স্থাপন করে কৃষি তথ্য প্রচারের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের সামনে স্থাপন করা চট্টগ্রাম জেলার একমাত্র রেডিও টাওয়ারটিও পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে টাওয়ারটি স্থাপন করা হলেও একদিনের জন্যও এটি চালু হয়নি বলে জানান কৃষি অফিসের একটি দায়িত্বশীল সুত্র। স্থাপন করা টাওয়াটি আশপাশের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কৃষকদের সাথে তথ্য আদান প্রদানের খবর সংগ্রহ ও সম্প্রচারের সক্ষমতা থাকার কথা। কিন্তু স্থাপিত টাওয়ারে সেই সক্ষমতা নেই বলেও সুত্রটি দাবী করেন। এ ছাড়া জনবল সংকট ও বিদ্যুত বিল পরিশোধের ব্যবস্থা না থাকায় টাওয়ারটি চালু করা হয়নি বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা কৃষি অফিসের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা। এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ গুলোর সামনে দেয়ালে বোর্ড ও মিটার স্থাপন করেই দায় সেরেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই উপজেলা কৃষি অফিস ও বিভিন্ন ইউনিয়নে দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের। নিয়মানুযায়ী কৃষিভিত্তিক আবহাওয়ার নানা তথ্য বোর্ডে হালনাগাদ থাকার কথা থাকলেও উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন পরিষদে লাগানো বোর্ডগুলো অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে তথ্য না পেয়ে একদিকে যেমন ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন কৃষক, তেমনি সরকারের কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পের টাকাও গচ্ছা যাচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে রয়েছে কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য বোর্ড। কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্ট সবার জন্য কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ সেবা সহজলভ্য করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। নামমাত্র একটি করে বোর্ড লাগিয়েই শেষ করা হয়েছে এ প্রকল্প। বোর্ডে রয়েছে তিনদিন আগে ও পরের তিনদিনের কৃষিভিত্তিক আবহাওয়ার হালনাগাদ তথ্যের নানা ছক। আর ভবনের ছাদে বসানো হয়েছে রেইনগজ মিটার ও সৌর বিদ্যুতের প্যানেল। কিন্তু এসব কোনো কাজে আসছে না কৃষকদের। ব্যবহার না থাকায় অকেজো হয়ে পড়েছে এসব যন্ত্রপাতি। এছাড়া কোথাও কোথাও বোর্ডগুলো এরই মধ্যে ভেঙে গেছে। কোথাও আবার তথ্য বোর্ডের সংখ্যার ঘুঁটিও নেই। স্বয়ংক্রিয় রেইন গজ মিটার ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। কোথাও কোথাও সেসব যন্ত্র খোয়া গেছে। কোনোটি আবার নষ্ট। তথ্য দেওয়ার পরিবর্তে এসব বোর্ড এখন জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। আবার কোন কোন ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়নি সোলার প্যানেল। তথ্য বোর্ড গুলোতে ময়লা আবর্জনা আর মাকড়সার জাল বুনেছে। মুলত আবহাওয়া ও নদ-নদীর সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কিত উন্নতমানের এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য কৃষকের কাছে পৌঁছাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য বোর্ডের মাধ্যমে গত তিন দিন আগের এবং পরবর্তী তিন দিনের মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ সম্পর্কে জানার কথা। কিন্তু বোর্ডগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় তা কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না। পাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, পরিষদের হলরুমে প্রবেশ করতে ডান পাশের দেয়ালে সাঁটানো আছে কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য বোর্ডটি। মনে হচ্ছে বোর্ডটি লাগানোর পর আর কেউ বোর্ডে হাত দেয়নি। পরিষদে আসা লোকজনও জানেন না এটা কিসের বোর্ড, কেন লাগানো হয়েছে। বোর্ডটি নিয়ে কথা হয় ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা বিজয় আচার্য্যের সাথে। তিনি জানান, ‘কৃষি অফিস থেকে পরিষদে বোর্ডটি লাগিয়ে দিয়ে গেছে। যে ভাবে লাগানো হয়েছে সেভাবেই পড়ে আছে। কোন তথ্য কেউ আপডেট (হালনাগাত) করা হয় না বলে জানান তিনি।’ ভূজপুর ইউনিয়নের কৃষক মোঃ আনা আহমদ বলেন, ‘আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস ভরা বর্ষাকাল। এই সময় বেশি প্রয়োজন আবহাওয়ার খবর জানা। এর জন্য যে একটি বোর্ড আছে এটাই শুনলাম প্রথম। দাঁতমারা ইউনিয়ন পরিষদের পুরনো ভবনের দেয়ালে লাগানো হয়েছে কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড। লাগানোর পর এটিতে আর কারো হাত লাগেনি। ময়লা আবর্জনা আর মাকড়শার জালে ভরে আছে বোর্ডটি। উঠে গেছে সংখ্যা গুলোও। বখতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক- উল আজম জানান, কৃষি অফিস থেকে একটি বোর্ড লাগানো হয়েছে। এরপর এটির আর কোন তদারকি নেই। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসানুজ্জামানের সাথে কথা বলার জন্য একাধিকবার তাঁর অফিসে গেলেও তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান বলেন, ‘যে সমস্ত ইউনিয়নে কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড অকেজো হয়ে পড়েছে সে গুলো তালিকা করে কারণ অনুসন্ধানপূর্বক সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠানোর জন্য কৃষি কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেহেতু একটি প্রকল্পের অধিনে এসব তথ্য বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।