রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
দেশের ৩০টি কেন্দ্রে ফয়যে বর্ণভী সাবাহী মক্তব বোর্ডের ২য় কেন্দ্রীয় পরীক্ষা কলমাকান্দায় ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প জগন্নাথপুরে পলাতক আসামী গ্রেফতার-৫ চকরিয়ায় স্বামীর হাতে স্ত্রী, সড়ক দুর্ঘটনা, সংঘর্ষ ও মসজিদের বাথ রুমে মুসল্লীর লাশ সহ ৪ খুন : খুনিসহ আটক ৩ মোংলার সুন্দরবন ইউনিয়নে বিএনপি’র কমিটিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী থাকায় সংবাদ সম্মেলন পাঁচবিবিতে ওলামা মাশায়েখ ও সুধী সমাবেশ ফটিকছড়িতে আকষ্মিক সফরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ সদরপুরে এশিয়ান টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন গলাচিপায় তারুণ্যে উৎসবে বিভিন্ন পর্বে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ আমাদের মূল সংগ্রাম একনায়কতন্ত্র উৎখাত করা : সাক্ষাৎকারে কেএনডিএফ নেতা

অব্যাহত উন্নয়নের ধারায় প্রাথমিক শিক্ষা

মাজেদা বেগম 
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৩

প্রাথমিক শিক্ষা একটি জাতীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে তাদের মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলার জন্যই এই আয়োজন। কারণ আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। অথবা, ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে। এই অমোঘ বাণীতো আমরা যুগযুগ ধরে আমরা ধারণ করে আসছি। কারণ এটি আমাদের মনন ও বিশ্বাসের সাথে মিশে আছে। সঙ্গত কারণেই সব মা—বাবাই তার সন্তানকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে দিনরাত পরিশ্রম করেন।
প্রাথমিক শিক্ষার আনুষ্ঠানিক প্রচলন কখন কোথায় কীভাবে শুরু হয় বলা মুশকিল। তবে ঋগবেদ রচিত হবার কালে অর্থাৎ ৩ হাজার বছরেরও আগে উপমহাদেশে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় বলে মনে করা হয়। ঐতিহাসিকদের মতে বৈদিক যুগে এদেশে বিশেষ এক ধরনের প্রাথমিক শিক্ষার প্রচলন ছিল। বৈদিক শিক্ষা নামে প্রাচীন যুগের এ শিক্ষার মূল লক্ষ্য ছিল আত্মার উন্নতি সাধন। সাধনা, চিন্তা ও আত্মসংযমের মধ্যদিয়ে এ শিক্ষালাভের চেষ্টা হতো। এ শিক্ষা ছিল একান্তই মন্দির কেন্দ্রিক। সেখানে পুরোহিদদেরই শুধু জ্ঞান চর্চার অধিকার ছিল। তারা পূজা অর্চনার জন্যই কেবল শিক্ষা লাভ করত। বেদ রচনার সঙ্গে সঙ্গে আর্য শিক্ষার সূচনা হয়। তখন শিক্ষার কাল ছিল একাধারে বারো বছর। শিশুরা পাঁচ বছর বয়সে শিক্ষার হাতেখড়ি নিতো। এটা ছিল প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তিস্তর। প্রাথমিক শিক্ষার লাভের উপযুক্ত হবার পর শিক্ষাগুরু তাকে পারিবারিকভাবে আপন করে নিতেন।
বৈদিক যুগের পর আসে ব্রাহ্মণ্য যুগ। খ্রিস্টপূর্র্ব ৮০০ অব্দে এ যুগের সূচনা হয়। এটি ছিল উন্নততর শিক্ষা বৈদিক যুগের চেয়ে। ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীকে উপনয়ন অর্থাৎ শিক্ষালাভের জন্য গুরুর কাছে নিয়ে যাওয়া হতো। শিশুরা পাঁচ বছর থেকে বারো বছর পর্যন্ত গুরুগৃহে বাস করত। মৌখিক শিক্ষা দানই তখন অধিক প্রচলিত ছিল। ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা যুগের পর আসে বৌদ্ধ শিক্ষা যুগ। বৌদ্ধরা অজ্ঞতাকে পাপ বলে মনে করত। তাদের মতে শিক্ষাই একমাত্র পাপমোচনের উপায়। এ শিক্ষা ব্যবস্থায় ৮ বছর বয়স পর্যন্ত বৌদ্ধ শিশু পিতৃগৃহে জ্ঞান লাভ করত। গণতন্ত্র ও সার্বজনীনতাই ছিল এ শিক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য। পাল বংশের পর হিন্দু সেনেরা ক্ষমতা দখল করায় শিক্ষা ও ধর্মকর্মের ব্যাপারে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রাধান্য লাভ করে।
সাত শতকে আরবদের মাঝে এক নবজাগরণের সূচনা করে। যার ফলশ্রম্নতিতে পরবতীর্ ১০০ বছর আরব সভ্যতা বিশে^ও দরবারে মাথা উঁচ করে দাঁড়ায়। খ্রিস্টিয় আট শতকে সিন্ধুরাজ দাহিরকে পরাজিত করে মোহাম্মদ বিন কাশেম সিন্ধু বিজয়ের মাধ্যমে ভারতভূমিতে প্রথম মুসলিমদের আগমন ঘটে। ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খিলজীর মাধ্যমে মুসলিম শাসন শুরু হয়। তিনি বিভিন্ন স্থানে মসজিদ মক্তব ও মাদ্রাসা স্থাপন করেন। খলজী ও তুঘলোকদের সময়ে মুসলমানদের শিক্ষা সংস্কৃতির ব্যাপক প্রসার ঘটে। মূলত চার বছর বয়স থেকে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য মক্তবে গমন করলেও প্রকৃত শিক্ষা শুরু হতো সাত বছর বয়স থেকে। কোরআন ও ধর্মের নির্দেশ মেনে চলাই মক্তবের শিক্ষা। আঠারো শতকের শেষার্ধে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে এবং শুরু হয় ঔপনিবেশিক শাসন।
ইংরেজ শাসনামলে ১৮৬৬ সালে গ্রামাঞ্চলে মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তারকল্পে ‘ভার্নাকুলার স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবতীর্কালে অধিক সংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ‘নর্মাল স্কুল’ স্থাপন করা হয়। ইংরেজি এবং বাংলা উভয় ভাষাকে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করার ফলে প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। সে সময় তিন ধরনের বিদ্যালয় চালু ছিল। ১. প্রাথমিক বিদ্যালয় ২. মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩. উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়। ইংরেজ শাসনামলে চার বছরের প্রাথমিক শিক্ষাকাল নির্ধারণ করা হয়। ভারত বিভক্তির (১৯৪৭) পর পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটির রাষ্ট্রের জন্ম হলে প্রাথমিক শিক্ষা চার বছরের স্থলে পাঁচ বছর করা হয়। ১৯৫২ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে ‘প্রাথমিক বৃত্তি’ পরীক্ষা চালু করা হয়।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার সে সময়ে প্রাথমিক শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়। প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের উপযোগী সমাজগঠনমূলক একটি সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থার রূপরেখা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ড. কুদরাত—এ খুদাকে সভাপতি করে শিক্ষা কমিশন গঠনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয় যা ১৯৭৪ সালের মে মাসে ‘বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট’ নামে প্রকাশিত হয়। এই কমিশনে প্রাথমিক শিক্ষাকে ১৯৭৬ সাল থেকে ক্রমধারায় ১৯৮৩ সালের মধ্যে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়। দেশের ৩৬,৬৬৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত সকল শিক্ষক এবং স্কুলের যাবতীয় সম্পদ সরকারি নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এবং এই পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষার সফল উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি স্বতন্ত্র প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরও প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও কার্যকর করার লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও সিলেবাসের নবায়ন ও উন্নয়ন করা হয় এবং সকল শিক্ষার্থীদেরকে বিনামূল্যে বই সরবরাহ করা হয়। এ সময় ৪টি পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার কাজ পরিচালিত হতো। এগুলো হল— শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, উপজেলা পরিষদ এবং স্কুল ম্যানেজিং কমিটি।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত দেশিয় এবং পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা ও পদ্ধতির সম্মিলিত ফল। বর্তমানে বাংলাদেশে ৬—১০ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ৫ বছর মেয়াদী প্রাথমিক শিক্ষা প্রচলিত রয়েছে। ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা স্তর হিসেবে গণ্য করা হয় এবং দেশের ৬ থেকে ১০ বছরের সব শিশুর জন্য এই শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পূর্বে সরকারিভাবে প্রাক—প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকলেও বর্তমানে ৭ ডিসেম্বর, ২০১০ সালে জাতীয় সংসদে পাসকৃত ‘জাতীয় শিক্ষানীতি—২০১০’—এ ৫ বছর বয়স থেকে ১ বছর মেয়াদি প্রাক—প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। তবে, দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেনে পূর্ব থেকেই এ ধরনের প্রাক—প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু ছিল যেখানে শিশুদেরকে খেলাধুলা ও আনন্দের মাধ্যমে বর্ণমালা, সংখ্যা, ছড়া প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com