টানা তিন মাস নিষেধাজ্ঞার শেষে আজ শুক্রবার থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ সব ধরনের বনজীবীদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে সুন্দরবনের দুয়ার। ওই দিন সকাল থেকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হবে সুন্দরবন। আজ শুক্রবার থেকে উঠে যাবে সুন্দরবনে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা। ওই দিন থেকে পুনরায় পর্যটকরা যেতে পারবেন বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বনে। গত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটকসহ সব ধরনের বনজীবীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও ২৯১ প্রজাতির মৎস্য সম্পদের প্রজনন নির্বিঘœ করতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে পর্যটকসহ বনজীবীদের কোলাহলমুক্ত থাকায় সুন্দরবনে বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণের পাশাপাশি নির্বিঘœ প্রজননের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ম্যানগ্রোভ এই বনের বন্য প্রাণী, মৎস্যসম্পদসহ জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
ইতোমধ্যেই নিষেধাজ্ঞার শেষ মুহূর্তে বন বিভাগের কাছ থেকে পাস-পারমিট নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশে সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন ট্যুর অপারেটরসহ বনজীবীরা। সুন্দরবন উন্মুক্ত করে দেয়া হলেও পর্যটকসহ বনজীবীদের জন্য পানির বোতল, চিপসের প্যাকেটের মতো সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পশ্চিম সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. মো. আবু নাসের মোহসিন হেসেন বলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে জেলে ও পর্যটকদের জন্য পারমিট দেয়া শুরু হবে। এ জন্য নির্ধারিত স্টেশনগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলে ও পর্যটকরা ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন। তিনি বলেন, পর্যটকরা বনে যাওয়ার সময় প্লাস্টিকের পানির বোতল, একবার ব্যবহার হয় এমন প্লাস্টিকের খাবার প্লেট, সফট ড্রিংকসের বোতল ও ক্যান নিতে না পারেন সে বিষয়ে কঠোর অবস্থানে সুন্দরবন বন বিভাগ। বনের অভ্যন্তরে পানি ও স্থলভাগে যাতে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক, পলিথিন ও অপচনশীল দ্রব্য ফেলতে না পারে সেজন্য সুন্দরবনে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপরও যদি কেউ প্লাস্টিকের এসব সামগ্রী বনের মধ্যে নিয়ে যায় তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। করা হবে জরিমানা।
জীববৈচিত্র্যে ভরপুর সুন্দরবনে বর্তমানে ১১৪টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, দুই লাখ হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্য প্রাণী, সুন্দরীসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড ও ৩০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। সুন্দরবনের মধ্যের ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জলভাগে কুমির, ৬ প্রজাতির ডলফিনসহ ২৯১ প্রজাতির মাছ রয়েছে। অক্সিজেনের অফুরন্ত ভা-ার সুন্দরবনে বাংলাদেশ অংশের আয়তন প্রায় সাত হাজার বর্গকিলোমিটর। সুন্দরবনের এই বিশাল জলভাগ বিশ্বের বৃহৎ জলাভূমি রামসার এলাকা হিসেবেও স্বীকৃত।