কোষা নৌকার জন্য প্রসিদ্ধ চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা। নদীমাতৃক এ এলাকায় একসময় কোষা নৌকার অনেক চাহিদা ছিল। এ নৌকা তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করতেন অনেকে। তবে, কালের বিবর্তনে কোষা নৌকার কদর কমছে। এ উপজেলায় প্রতি বর্ষা মৌসুমে কোটি টাকার নৌকা বিক্রি হতো। এখন নৌকা বিক্রি কমে যাওয়ায় পেশা বদল করছেন কারিগররা। সম্প্রতি মতলব দক্ষিণের মোবারকদি, ধনারপাড়, নাগদা ও নারায়নপুর ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। কোষা নৌকার কারিগর হান্নান প্রধানীয়া, মো. বাবুল গাজী, সোহাগ প্রধানীয়া, মো. নজরুল, আব্দুল মান্নান প্রধানীয়াসহ অনেকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা বলেন, এখন আর নদ-নদী ও খাল-বিলে আগের মতো পানি হয় না। নদী মরে যাচ্ছে। খাল-বিল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করছেন প্রভাবশালীরা। তাই, জলাশয়ের আকার ছোট হয়ে আসছে। পানি কমে যাওয়ায় কোষা নৌকারও চাহিদা কমছে।
কোষা নৌকা কিনতে আসা মো. কামাল বলেন, টেকসই ও মজবুত এই নৌকাগুলো মূলত বর্ষা মৌসুমে চলাচল, ঝিলে মাছের খাবার দেয়া, গবাদি পশুর জন্য ঘাস কাটা প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হয়। নৌকাগুলো মেহগনি, চাম্বুল, রেন্ডি করই কাঠের হওয়ায় ৪-৫ বছর অনায়াসেই ব্যবহার করা যায়। একেকটির দাম কাঠ ও আকারভেদে ৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। আমি সাড়ে ৩ হাজার টাকায় একটি নৌকা কিনে বাড়িতে নিচ্ছি। ইন্দ্রজিৎ সূত্রধর নামের এক নৌকার কারিগর বলেন, আগে কোষা নৌকার চাহিদা থাকায় মতলব দক্ষিণ ছাড়াও আশপাশের উপজেলা ও জেলা থেকে ক্রেতারা এখানে আসতেন। আমরা বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে ১০০-১৫০টি নৌকা মজুদ রাখতাম। এখন নৌকার চাহিদা কমে গেছে। নৌকা তৈরীর জন্য মতলব ও নারায়নপুরের স’মিল এবং আশপাশের এলাকা থেকে কাঠ সংগ্রহ করতে হয়। এতে কয়েক লাখ টাকা প্রয়োজন। সেই আর্থিক সুবিধা এখন কোথাও পাই না।
চাঁদপুরের মতলব পৌরসভার মেয়র মো. আওলাদ হোসেন বলেন, কোষা নৌকা তৈরি একটা শিল্প। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে পৌরসভা প্রশাসন পাশে থাকবে। মতলব দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রেনু দাস বলেন, পানিপ্রবাহ ঠিক রাখতে খাল ও নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত আছে। কোষা নৌকা কারিগরদের ঋণ সুবিধা প্রয়োজন হলে অবশ্যই উপজেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে। একদিকে জলপথ কমছে, অন্যদিকে সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে। ফলে, কোষা নৌকার ব্যবহার কমছে। ঐতিহ্যবাহী কোষা নৌকা শিল্প টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করছেন নৌকার কারিগররা।