শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন

আইনজীবীদের পদযাত্রায় পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ৫০

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে বিএনপিসহ সরকার বিরোধী পদযাত্রায় পুলিশের লাঠিচার্জে কমপক্ষে ৫০ জন আইনজীবী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত কমপক্ষে ১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
আইনজীবীরা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ, স্বঘোষিত দশপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনে জড়ো হন আইনজীবীরা। এরপর সরকার বিরোধী আইনজীবীদের মোর্চা ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফোরামের (ইউএলএফ) উদ্যোগে পদযাত্রা শুরু হয়। ঢাকা বার ভবন থেকে আইনজীবীদের পদযাত্রা প্রধান সড়কে প্রবেশ কলে পুলিশ সদস্যরা আইনজীবীদের ওপর অতর্কিত লাঠিপেটা শুরু করে। এতে আইনজীবীদের পদযাত্র ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। লাঠিচার্জে কমপক্ষে ৫০ জন আইনজীবী আহত হয়েছেন বলে ইউনাইটেড ল-ইয়ার্স ফ্রন্টের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয। ইউএলএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুলিশের লাঠিচার্জে সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সম্পাদক মাহবুবুর রহমান খান, আইনজীবী দেওয়ান রিপন, মোজাহিদুল ইসলাম সায়েম, কে এম মিরাজ হোসেন, সাইদুর রহমান সোহাগ, কে এম বরকত সবুজ, মাহবুব আলম আক্তার, শফিকুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, হাজী মোঃ মহসীন, কাজী পনির, মু. কাইয়ুম, এস এম হুমায়ূন কবিরসহ কমপক্ষে ৫০ জন আইনজীবী আহত হয়েছেন। আইনজীবী পুলিশের লাঠিচার্জে মাহবুবুর রহমান খানের পায়ের হাটুতে আঘাতের কারণে রক্ত বের হতে দেখা গেছে। এছাড়া আইনজীবী মু. কাইয়ুমের ডান হাত ভেঙে গেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এছাড়া আহত আইনজীবীরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ সময় মহিলা আইনজীবীরাও পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহীন সুলতানা খুকী, হাশেমী, লাকী, শাহূন খোকী, মার্জিয়া হীরাসহ প্রায় ২৫ জন নারী আইনজীবী লাঠিপেটার শিকার হন বলে আইনজীবীরা অভিযোগ করেন। তারা ঢাকা বারের ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এর আগে ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্ট এর কেন্দ্রীয় কমিটির কনভেনার সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, কো-কনভেনার সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, ইউএলএফের প্রধান সমন্বয়ক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, আইনজীবী মহসিন মিয়া, খেরশেদ মিয়া আলম, ইকবাল হোসেন, ওমর ফারুকি ফারুকীর নেতৃত্বে আইনজীবীদের পদযাত্রা শুরু হয়। এ বিষয়ে বিএনপির আইন সম্পাদক ও ইউএলএফের প্রধান সমন্বয়ক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, গণতন্ত্রকামী আইনজীবীদের ওপর এ হামলা আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ওপর হামলা। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির নির্দেশে আইনজীবীদের ওপর এ হামলা করা হয়েছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আইনজীবীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। এ বিষয়ে ইউএলএফের সমন্বয়ক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট বার ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল বলেন, সাদা পোশাক পরা পুলিশ অতর্কিতভাবে হামলা করে। এ সময় আমাদের ২০ থেকে ২৫ জন নারী আইনজীবীকে বেধরক পিটিয়ে আহত করা হয়।
আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের উপর হামলা দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে : মির্জা ফখরুল
আদালত প্রাঙ্গনেই যদি দেশের আইনজীবীদের ওপর হামলা হয় তাহলে অন্যত্র কী পরিস্থিতি হতে পারে, সেই ভাবনা দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আইনজীবীদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দেয়য় বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে দুপুরে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ফরমায়েশী রায়ের বিরুদ্ধে আদালত প্রাঙ্গণে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ৪০ থেকে ৫০ জন আইনজীবীকে গুরুতর আহত করা হয়।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশ এখন ভয়াবহ দুঃশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট। আজ আদালত প্রাঙ্গণে বিএনপিপন্থী দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর সরকারি মদদে পুলিশ হামলা চালিয়ে সরকার আবারো এক ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। আইনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে দেশের পুলিশ বাহিনী সমগ্র দেশটাকে এখন রক্তাক্ত জনপদে পরিণত করেছে। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আইনজীবীদের ওপর নগ্ন হামলায় অবৈধ সরকার এক অশুভ বার্তা জানান দিলো। আজ পুলিশের এই হামলার মধ্য দিয়ে অবৈধ সরকারের এক হিংস্র আগ্রাসনের আরো একটি রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটল। সরকারের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, জনসমর্থনহীন এই সরকার হিতাহিত-বিবেচনাহীন। অন্তঃহীন ক্ষমতালিপ্সার জন্য এরা জনগণের বদলে সন্ত্রাসকেই ভরসা করছে বেশি। তাই গু-ামির এই নতুন রূপ দুঃশাসনকে টিকিয়ে রাখারই ইঙ্গিতবহ।
তিনি বলেন, পুলিশ এখন শুধুমাত্র বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদেরকেই নয়, তারা এখন টার্গেট করেছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদেরকেও। আইনজীবীদের কণ্ঠে প্রতিবাদী আওয়াজ উচ্চারিত হয়, আর এতে অবৈধ সরকারের ভিত্তি নড়ে ওঠে বলেই আজ আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলা পূর্ব পরিকল্পিত এবং সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আশকারা দেয়া হয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর পুলিশের এই পৈশাচিক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন মির্জা ফখরুল।
জামায়াতের নিন্দা প্রতিবাদ
আইনজীবীদের মোর্চা ‘ইউনাইটেড লইয়ার্স ফোরাম’ এর আইনজীবীদের ওপর পুলিশ হামলা করে প্রায় ৫০ জন আইনজীবীকে আহত করার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম ১২ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতি প্রদান করেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ, স্বঘোষিত ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনে ‘ইউনাইটেড লইয়ার্স ফোরাম’ এর ব্যানারে আইনজীবীরা সমবেত হন এবং পদযাত্রা শুরু করেন। আইনজীবীরা ঢাকা বার ভবন থেকে প্রধান সড়কে প্রবেশ করলে পুলিশ আইনজীবীদের ওপর হামলা করে লাঠিপেটা শুরু করে। লাঠিচার্জে কমপক্ষে ৫০ জন আইনজীবী আহত হন। আমি সরকারের এই অগণতান্ত্রিক আচরণের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, সরকার জন সমর্থন হারিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছে। তারা কোনো সমালোচনা বরদাশত করতে রাজি নয়। আইনজীবীদের ওপর এই হামলা আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিপন্থী। বর্তমান জুলুমবাজ সরকারের আমলে দেশের আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ হামলা-মামলাসহ সকল প্রকার জুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। দেশের নাগরিকদের ওপর দমন-পীড়ন দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমি সরকারের জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য আইনজীবীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে জুলুম-নিপীড়ন বন্ধ করে সরকারকে পদত্যাগ করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের নিন্দা ও প্রতিবাদ
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের (বিএসপিপি) আহবায়ক প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী গতকাল ১২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার এক যুক্ত বিবৃতিতে ঢাকা কোর্টে আইজীবীদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় পুলিশী হামলায় অর্ধশতাধিক আইনজীবী আহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন,বিচারালয়ে আইনজীবীদের উপর এমন ন্যক্কারজনক হামলা সভ্য সমাজে কল্পনাও করা যায় না। পেশাজীবী নেতৃদ্বয় আইনজীবীদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় হামলাকারি পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।বিবৃতিতে বিএসপিপি নেতৃদ্বয় বলেন, ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ,বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মাদার অব ডেমোক্রেসি,দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ, এবং স্বঘোষিত দশপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে বিজ্ঞ আইনজীবীরা গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনে জড়ো হন।এরপর সরকার বিরোধী আইনজীবীদের মোর্চা ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফোরামের (ইউএলএফ) উদ্যোগে পদযাত্রা শুরু হয়। ঢাকা বার ভবন থেকে আইনজীবীদের পদযাত্রা প্রধান সড়কে প্রবেশ করলে সরকারের লেলিয়ে দেয়া পুলিশ সদস্যরা আইনজীবীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। নারী আইনজীবীরাও পুলিশের লাঠিপেটা থেকে রেহাই পায় নি। পেশাজীবীদের এই দুই নেতা বলেন, সরকার দেশ থেকে আইনের শাসন নির্বাসনে দিয়ে মগের মুল্লুক কায়েম করেছে। দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে।পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষকে নিরাপত্তা দেয়া। অথচ পুলিশের হাতেই এখন মানুষের জীবন অনিরাপদ। রাষ্ট্রীয় এ বাহিনীকে ফ্যাসিস্ট সরকার দলীয় ঠেঙ্গারে বাহিনীতে পরিণত করেছে। আমরা জানি পুলিশ বাহিনীর মূল দর্শন ‘দুষ্টের দমন শিষ্টের লালন’।এই মূলমন্ত্র নিয়েই পৃথিবীতে পুলিশ বাহিনী সৃষ্টি করা হয়েছে ,যার সদস্যরা কেবল জনসাধারণের কল্যাণে নিবেদিত থাকবে। অথচ আমরা এখন দেখছি পুরো উল্টো চিত্র। পুলিশের সামনেই সরকারি দলের অস্ত্রধারীরা ঘুরে বেড়ায় পুলিশ তাদের ধরে না। আর বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের বিনা কারণে ধরে এনে হত্যা করছে। শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে গুলি করে বুক ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে। আইনজীবীরাও রেহাই পাচ্ছে না। দেশে অব্যাহত গুম,খুনের সঙ্গেও আজ রাষ্ট্রীয় এবাহিনী জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। দেশকে পুরোপুরি পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে উল্লেখ করে পেশাজীবী নেতৃদ্বয় বলেন, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে শাসক দল তার শাসন কাজ পুলিশ বাহিনীর ওপর নির্ভর করে ইচ্ছামতো স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে পরিচালনা করে।এ ধরনের রাষ্ট্রে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশে বাধা দেয়া, ভিন্ন মতাদর্শের রাজনীতি সীমিত এবং সিক্রেট পুলিশ দ্বারা বিরোধী রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বাংলাদেশ আজ এর ব্যতিক্রম নয়। জার্মানির হিটলার,চিলির ফ্যাসিস্ট অগাস্টো পিনোচেটের মতো আজ শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পুলিশ ও র?্যাবকে ব্যবহার করে এক ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে। হিটলার জার্মানির জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে নাজি পুলিশ গঠন করেছিল, তাদের আচরণ ছিল ভয়ংকর। কেউ তার কৃতকর্ম সম্পর্কে টুঁ শব্দটি উচ্চারণ করতে পারত না। বাংলাদেশেও আজ একই কায়দায় পুলিশী নির্যাতন চলছে। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা পুলিশি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল। তখন দেশটির জনগণ ছিল পুরোপুরি অবরুদ্ধ।সরকারের বিরুদ্ধে তাদের কথা বলা দূরে থাক, স্বাভাবিকভাবে চলাচলও করতে পারত না। তাদের অধিকার বলে কিছু ছিল না। রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা ছিল দূরাশা মাত্র। যারাই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলত, তাদের গণহারে গ্রেফতার করে জেলে ঢুকানো হতো। এসবই করা হতো পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে। যা এখন বাংলাদেশে অহরহ হচ্ছে। চিলিতে ফ্যাসিস্ট অগাস্টো পিনোচেট-এর শাসনামলে রাজনৈতিক আন্দোলন করার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারত না। ঠারেঠুরে যে কথা বলবে তারও কোনো সুযোগ ছিল না, বাংলাদেশ সরকার এখন সে পন্থা অবলম্বন করছে। লেখলে জেল,সমালোচনা করলে জেল, সভা-সমাবেশে বাধা,মিছিলে গুলি করে হত্যা, রাতের আঁধারে গুম-ক্রসফায়ার, ফরমায়েশি সাজা, গায়েবি মামলা,দিনের ভোট আগের রাতে সম্পন্ন করে ক্ষমতা দখল, অন্যায়ের প্রতিবাদ মানেই চৌদ্দ শিখের ভাত। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এখন হিটলার, অগাষ্টোকেও হার মানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান সরকারের অন্যায়, অবিচার ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারছে না। দেশের কোথাও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হচ্ছে না। কেউ প্রতিবাদ করলে হামলা, মামলা ও গুমের স্বীকার হতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে দেশে এক ভয়ঙ্কর পরিবেশ বিরাজ করছে। সরকার দেশের মানুষের বাক স্বাধীনতা রোধ করে দেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে।সুশাসনের পরিবর্তে আজ দানবীয় শাসন চলছে। দেশের মানুষ আজ এমন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায়।জনগনের সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে আমরাও ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।
আইনজীবীদের ওপর হামলায় বিএফইউজে’র উদ্বেগ ও নিন্দা
ঢাকা বারের আইনজীবীদের ওপর পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ ও কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)’র সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন। আজ মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে বিএফইউজে নেতৃদ্বয় বলেন, প্রতিবাদ জানানোর গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার সরকার বরাবরই শক্তি প্রয়োগ করে বাধাগ্রস্ত করে আসছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার কোর্ট এলাকায় আইনজীবীরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচী পালনের সময় আগ্রাসী পুলিশবাহিনী যেভাবে আইনজীবীদের নির্দয়ভাবে লাঠিপেটা করেছে তা নজীরবিহীন। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আইনজীবীদের ওপর নগ্ন হামলা আবারও প্রমাণ করেছে সরকার দমননীতির অনুসরণ করে ভিন্নমতকে নির্মূল করতে চায়। বিএফইউজে নেতৃবৃন্দ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এমন হামলা হয়ে না থাকলে অতিউৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে সরকারকেই। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে বিশ^াসী সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে আমরা সহযোগী পেশাজীবী আইনজীবীদের ওপর ন্যাক্কারজন হামলার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানাচ্ছি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com