শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০১:০৫ অপরাহ্ন

নাজাতের ব্যবসায়

মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

মানুষ সদা লাভের চিন্তায় মগ্ন। চাই ইহলৌকিক লাভ হোক বা পারলৌকিক লাভ। মুমিন উভয় জাহানের লাভের প্রত্যাশী হয়। আল্লাহ তায়ালা দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন- ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে দুনিয়ার শান্তি এবং আখিরাতের শান্তি দান করুন। আর জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করুন।’ (সূরা বাকারা-২০১) পার্থিব সম্পদ বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম হলো ব্যবসায়। তবে পারলৌকিক ব্যবসার লাভ অনেক বেশি, যাতে রয়েছে চিরশান্তি ও চিরমুক্তি। আল্লাহ তায়ালা মুমিনদেরকে লক্ষ করে বলেছেন- ‘হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসার কথা বলব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে?’ (সূরা আসসফ-১০) প্রত্যেক ব্যবসার জন্য পুঁজি শর্ত। এ ব্যবসার পুঁজি প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘এ ব্যবসার পুঁজি হলো- ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে।’ (সূরা আসসফ-১১) অর্থাৎ পরকালের ব্যবসার পুঁজি হলো দু’টি। একটি ঈমান অপরটি জিহাদ। মুমিনের জন্য শেষোক্ত কাজটি করা অপরবিহার্য। কেননা, ঈমানের সাথে জিহাদ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জিহাদ ছাড়া শুধু ঈমান দিয়ে জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচা যাবে না। পৃথিবীর বুকে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়িত করতে হলে জিহাদ অপরিহার্য, যার থেকে দূরে থাকার কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনদের জান এবং মাল ক্রয় করে নিয়েছেন।’ (সূরা তাওবা-১১১)
ক্রেতা-বিক্রেতা : ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য ক্রেতা ও বিক্রেতা দরকার। এ ব্যবসায় বিক্রেতা হলো- বান্দাহ আর ক্রেতা হলেন আল্লাহ তায়ালা। বান্দাহ নিজের জান ও মাল আল্লাহর কাছে বিক্রয় করে দিয়েছে। আর আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের বিনিময়ে তা ক্রয় করে নিয়েছেন।
ব্যবসার কাজ : এ ব্যবসার কাজ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তারা (মুমিনরা) আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করে অতঃপর মারে ও মরে।’ (সূরা তাওবা-১১) আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন- ‘বলুন! যদি তোমাদের নিকট তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের পতী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসায় যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় করো এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা পছন্দ করো- আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে আল্লাহর বিধান (শাস্তি) আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো। আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না।’ (সূরা তাওবা-২৪) আরো ইরশাদ করেন- ‘আর আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সিসাঢালা প্রাচীর।’ (সূরা আসসফ-৪) আরো ইরশাদ করেন- ‘আর তোমরা সমবেতভাবে মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করো, যেমন- তারাও তোমাদের সাথে সমবেতভাবে যুদ্ধ করে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকিদের সাথে আছেন।’ (সূরা তাওবা-৩৬) অন্যত্র ইরশাদ করেন- ‘হে নবী! আপনি মুমিনদেরকে জিহাদের জন্য উৎসাহিত করুন। তোমাদের মধ্যে যদি ২০ জন দৃঢ়বান ব্যক্তি থাকে, তবে দু’শর মোকাবেলায় জয়ী হবে। আর যদি তোমাদের মধ্যে ১০০ লোক থাকে, তবে হাজার কাফেরের উপর জয়ী হবে। কারণ তারা জ্ঞানহীন।’ (সূরা আনফাল-৬৫)
এ ব্যবসার লাভ : এ ব্যবসার লাভ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘(এ ব্যবসায় করলে) তিনি তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে থাকবে উত্তম বাসগৃহ। এটি মহাসাফল্য এবং আরো একটি অনুগ্রহ প্রদান করবেন, যা তোমরা পছন্দ করো। তা হলো- আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়। (হে হাবিব!) মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করুন।’ (সূরা আসসফ : ১২-১৩) আরো ইরশাদ করেন- ‘আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না; বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত।’ (সূরাআলে ইমরান-১৬৯)
অন্যত্র ইরশাদ করেন- ‘আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।’ (সূরা আল বাকারা-১৫৪)
আকাবার বাইয়াতের রাত্রে রাসূলূল্লাহ সা: ও আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা:-এর মধ্যে এ ধরনের ব্যবসার লেনদেন হয়েছিল। তিনি মহানবী সা:-কে বলেছিলেন, আপনার রবের জন্য এবং আপনার জন্য আপনি যা পছন্দ করেন তার জন্য আমি নিজেকে পেশ করছি। তখন রাসূল সা: বলেন, ‘আমি আমার রবের জন্য এই শর্তে তোমার দান গ্রহণ করছি যে, তোমরা একমাত্র তাঁর পূর্ণাঙ্গ নিঃশর্ত আনুগত্য করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরিক করবে না। আর আমি আমার নিজের জন্য তোমার দানকে এই শর্তে গ্রহণ করছি যে, তোমরা সেসব বিষয় থেকে বিরত থাকবে যা তোমাদের নিজের জন্য এবং তোমাদের সম্পদের জন্য খারাপ মনে করো। আব্দুল্লাহ বলেন, যদি আমরা এসব কিছু করতে থাকি তাহলে কি ফল পাবো? রাসূল সা: বলেন, জান্নাত পাবে। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে- চমৎকার এ ব্যবসায়ের লাভ। আমরা এর থেকে কমও দেবো না এবং কমও নেবো না। (তাফসির ফি-জিলালিল কুরআন) লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা,ফেনী




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com