প্রভাবশালী লুটেরাদের কবলে বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্যতম নদী ‘আত্রাই’। বালুখেকোদের তা-ব থামাতে পারছে না কেউই। নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোটি টাকার সরকারি ইজারামূল্য পরিশোধ না করেই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অবৈধ খননযন্ত্র (ড্রেজার) বসিয়ে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে অবাধে চলছে বেআইনি বালু উত্তোলন। কোথাও কোথাও সমুদ্র ড্রেজিং এর কাজে ব্যবহৃত খননযন্ত্র দিয়েও চলছে বালু উত্তোলন। আবার কোথাও কোথাও নদী পাড়ের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে নদীখেকোরা। এতে দখল-দূষণ ও নদীর গতিপথ পরিবর্তনসহ ভাঙন বাড়ছে। বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপরও। এভাবেই নদীর সর্বনাশ ডেকে আনছে তারা। কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি তাদের। ইজারার অর্থ পরিশোধ না করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার। আর সরকারি স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও আইন প্রয়োগের দাবি সচেতন মহলের। সম্প্রতি বালুমহালের ওপর করা একটি গবেষণা ফলাফলে প্রভাবশালী বালুখেকোদের তালিকায় উঠে এসেছে মহাদেবপুরের এক বালু ব্যবসায়ীসহ দেশের ২৬৫ জনের নাম। নওগাঁ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৪৩০ বাংলা সনে জেলার ৮টি বালুমহাল ইজারার জন্য ৪৯টি শর্ত উল্লেখ করে গত মার্চ মাসে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নওগাঁর জেলা প্রশাসক ও জেলা বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। এতে মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদীর বালুমহালের ভাটি অংশে ৮টি মৌজার ১৬৮ দশমিক ৫৮ একর ১ কোটি ৩১ লাখ ও মান্দা উপজেলার উজান অংশের ৪টি মৌজার ২৯৩ দশমিক ৫০ একর ১ কোটি ৫১ লাখ টাকায় ইজারা পেয়েছে মহাদেবপুর সদরের মেসার্স হ্যাপী ট্রেডার্স এর সত্ত্বাধিকারী মোয়াজ্জেম হোসেন। এই দুটি বালুমহালের মোট ইজারামূল্য ২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুরো ইজারামূল্যের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। সরকারের পাওনা রয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। যমুনা ব্যাংক লিমিটেড মহাদেবপুর শাখার তথ্যমতে, এক বছর মেয়াদে ১ লাখ টাকা এফডিআর করলে প্রতিমাসে গ্রাহক পাবে ৬২৫ টাকা। সেই হিসাব অনুযায়ী গত ছয় মাসে সরকারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। কিন্তু এনিয়ে জেলা বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা কমিটির দৃশ্যমান কোনোই তৎপরতা নেই। তাদের ভূমিকা রহস্যজনক। অভিযোগ রয়েছে- সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই চলছে বালু লোপাট। এদিকে, বালুমহাল সংক্রান্ত সরকারি নিয়ম অনুযায়ী- ইজারাগ্রহীতাকে কার্যাদেশ প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ইজারার সমুদয় অর্থ ভ্যাট, আয়কর ও সরকার নির্ধারিত অন্যান্য করসহ সরকারের অনুকূলে জমা দিতে হবে। ইজারা প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ার পর জেলা প্রশাসক বালুমহালের সুনির্দিষ্ট বর্ণনাসহ ইজারার শর্তসমূহ উল্লেখ করে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি ও ফরমে ইজারা চুক্তি সম্পাদন করবেন। ইজারামূল্যের সম্পূর্ণ অর্থ আদায়ের পর ইজারাগ্রহীতাকে বলুমহালের দখল হস্তান্তর করতে হবে। ইজারামূল্য যথাসময়ে সরকারের নির্দিষ্ট খাতে জমা না দিলে অথবা ইজারা চুক্তির কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে জেলা প্রশাসক বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট ইজারা চুক্তি বাতিল করতে পারবেন। কিন্তু এ নদীর বালুমহাল ইজারার ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। তবে ইজারামূল্য পরিশোধ না করেই গত ৬ মাস ধরে নদী থেকে ‘কীভাবে বালু তোলা করা হচ্ছে’ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এর আগেও ইজারামূল্য পরিশোধ না করে আত্রাই নদী থেকে বালু উত্তোলন করেছে হ্যাপী ট্রেডার্স। ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ৭ দিনের মধ্যে ইজারামূল্য পরিশোধ করার জন্য মোয়াজ্জেম হোসেনকে চিঠি (তাগিদ পত্র-২) দেয় তৎকালিন নওগাঁর রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর নিলুফা ইয়াছমিন। সরকারের পাওনা অর্থ নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ না করলে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করার বিষয়টি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। যার স্বারক নম্বর- সায়রাত কেস নং-২০/২০১৭-৪০২। সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনে জাতীয় নদী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি আয়োজিত ‘নদীর অধিকার’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বালুমহালের ওপর করা একটি গবেষণা ফলাফলে প্রভাবশালী বালুখেকোদের তালিকায় মহাদেবপুর সদরের মেসার্স হ্যাপী ট্রেডার্স এর সত্ত্বাধিকারী মোয়াজ্জেম হোসেনসহ ২৬৫ জনের নাম উঠে আসে। মোয়াজ্জেম ছাড়াও এ তালিকায় জেলার বালু ব্যবসায়ী সায়েম ও মফিজ উদ্দিনের নাম রয়েছে। গবেষণার মূল প্রবন্ধে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ। ওই সেমিনারে ইউএসএআইডির সহায়তায় যুক্ত ছিল ১২টি সংগঠন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি ইজারা বর্হিভূত মহাদেবপুর উপজেলার চাঁন্দাশ ইউপির তংকাশিবপুর মৌজায় আত্রাই নদীতে খননযন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় কয়েক বিঘা জমি নর্দীগর্ভে বিলীন হয়েছে। প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিয়ে কোনো প্রতিকার না পেয়ে জমি হারানোর শোকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তংকাশিবপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা। এনিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। এরপর ওই গ্রামের বাসিন্দারা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করলে মোবাইল কোর্ট এর অভিযানে মেসার্স হ্যাপী ট্রেডার্স এর মোয়াজ্জেম হোসেনের দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সাথে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ড্রেজার জব্দ করে নিলামে বিক্রির আদেশ দেন তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসান। সে সময় জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি কামনা করে নদীখেকো বলে ব্যাপক সমালোচিত হ্যাপী ট্রেডার্স এর লাইসেন্স বাতিল করার দাবি জানান তংকাশিবপুর গ্রামের বাসিন্দারা। ইজারার বাইরে জেলার মান্দা উপজেলার আঁয়াপুর মৌজায় আত্রাই নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে স্থানীয় মো. আলম নামে এক ব্যক্তি বাদি হয়ে গত ১৬ আগস্ট জেলা প্রশাসক বরাবর ওই এলাকার ৭৫ জনের সাক্ষর সম্বলিত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়াও ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর খেয়াঘাট এলাকায় নদীতে গোছল করতে নেমে খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে সৃষ্ট গর্তে পড়ে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, পাম্প, খননযন্ত্র (ড্রেজিং) বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ধারা ৪ এর (খ) অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেল লাইন ও অনান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা হতে সর্বনি¤œ ১ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এ নদী থেকে বালু তোলার ক্ষেত্রে দরপত্রে উল্লেখিত অধিকাংশ শর্ত লঙ্ঘন ও এই আইন মানা হচ্ছে না। বালু উত্তোলন বন্ধে এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে দফায় দফায় অভিযোগ দিলেও তেমন কোনো প্রতিকার মিলছে না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোয়াজ্জেম হোসেনের জন্ম ঢাকার বিক্রমপুর এলাকায়। ২০০৫-২০০৬ সালের দিকে সেখান থেকে মহাদেবপুর এসে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত হয়। জামায়াত নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রয়াত হাতেম আলীর মেয়েকে বিয়ে করার পর ঘুরে যায় তার ভাগ্যের চাকা। এরপর জেলার অন্যতম বালু ব্যবসায়ী মান্দার জুয়েলের অধীনে বালুমহালে কাজ শুরু করে। ক্ষমতার পালাবদলে খোলস পালটে যোগ দেয় ক্ষমতাসীন দলে। তার দখলে রয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। গ্রাস করে রেখেছে আত্রাই নদী। এক সময় অভাবের তাড়নায় তার শশুরের ট্রাক্টর চুরি করে রংপুরে বিক্রি করা সেই মোয়াজ্জেম এখন বালু ও মাটি লুটপাট করে কামিয়ে নিয়েছে শত কোটি টাকা। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এই দুটি বালুমহালে অবৈধ ড্রেজার (খননযন্ত্র) দিয়ে দিন-রাত অবাধে বালু তোলা হচ্ছে। নদীর ৩০-৩২টি স্থানে ড্রামের সাহায্যে অসংখ্য খননযন্ত্র ভাসিয়ে রাখা হয়েছে। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। মান্দার লক্ষ্মীরামপুর এলাকায় নদীতে গিয়ে চোখে পরে এক নয়া দৃশ্য। সেখানে ইঞ্জিন চালিত বিশেষ বোটে (নৌকা) সমুদ্র ড্রেজিং এর কাজে ব্যবহৃত খননযন্ত্র বসিয়ে চলছে বালু লুটপাট। এর পাশেই রয়েছে আরও একটি ড্রেজার। প্রতিদিন কয়েক শত ট্রাক বালু বিক্রি করে বিশেষ একটি মহল হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। মহাদেবপুর সদরের মডেল স্কুল সংলগ্ন এলাকায় নদীর মধ্যে পুকুর সাদৃশ্য বড় বড় গর্ত করে ও পাড় কেটে মহাদেবপুরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ইটভাটায় মাটি নিয়ে যাওয়ার ফলে নদীর মূল সীমানা হারিয়ে যাচ্ছে। এর পাশেই দোহালী এলাকায় খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদীর গতিপথ পরির্তনসহ নদীর মধ্যে চর জেগে উঠেছে। গত কয়েকদিনের অতি বর্ষণে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ। আবু বক্কর, রেজাউল হক, বিনয় কুমার সাহাসহ ৪০-৪৫ জন নদী পাড়ের বাসিন্দা জানান, সমুদ্র ড্রেজিং এর কাজে ব্যবহৃত খননযন্ত্র দিয়ে বালু লুটপাট তারা আগে কখনোই দেখেননি। ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। অভিযোগ দিয়েও মিলছে না প্রতিকার। বালু লুটপাটের মহোৎসবে তারা আতঙ্কিত হলেও সংশ্লিষ্টরা নীরব। অবৈধ খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন দ্রুত বন্ধের দাবি তাদের। তারা আরও জানান, বালু বহনকারী বেপরোয়া ১০ চাকার ডাম্পার, ট্রাক ও অবৈধ ট্রাক্টর চলাচলে ধুলো-বালি উড়ে রাস্তার দু’পাশের ঘরবাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। হুমকির মুখে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। এসব বালুবাহী যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন ড্রেজার বন্ধে কালেভদ্রে অভিযান চালায়। তখন দু-এক দিন বালু তোলা বন্ধ থাকে। কিন্তু পরে আবার শুরু হয়। সংশ্লিষ্টদের সঠিক তদারকি না থাকায় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। বালু উত্তোলনে গ্রামবাসী বাধা দিলে মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়াসহ নানাভাবে তাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়। বালুমহাল এলাকায় রাখা হয়েছে সশস্ত্র পাহারা। ফলে ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলতে সাহস করে না। এতে বালু উত্তোলনকারীরা দিনদিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ড্রেজার শ্রমিক জানান, মূল ইজারাদার হাজি মোয়াজ্জেম হোসেন বালুমহালের বিভিন্ন পয়েন্ট একাধিক ব্যবসায়ীর মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানোর আগেই ব্যবসায়ীদের কাছে খবর চলে আসে। তখন মেশিন বন্ধ রাখা হয়। অভিযানের পর আবারও বালু তোলা শুরু হয় বলেও জানান তিনি। নদী লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেসার্স হ্যাপী ট্রেডার্স এর সত্ত্বাধিকারী মোয়াজ্জেম হোসেন। ইজারামূল্য পরিশোধ না করে বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি জানান, কিছু টাকা বাঁকি রয়েছে। শুধু তিনিই নয়, এ নদীর বালুমহালের কোনো ইজারাদারই ইজারার পুরো অর্থ এখনও পরিশোধ করেননি। পরিবেশের ক্ষতির বিষয়ে জানতে পরিবেশ অধিদপ্তর নওগাঁর সহকারী পরিচালক মলিন মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রতিবেদককে তার অফিসে যেতে বলেন। মান্দার আত্রাই নদীর উজান অংশে সমুদ্র ড্রেজিং এর কাজে ব্যবহৃত খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়ে কিছুই জানেন না উপজেলা নির্বাহী অফিসার লায়লা আঞ্জুমান বানু। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি। নদীখেকোদের তা-বের বিষয়ে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান সোহাগ জানান, এখানে নতুন যোগদান করেছেন; তার আগের ইউএনও অবৈধ বালু উত্তোলনে জন্য মোবাইল কোর্ট এর অভিযানে জরিমানা করেছেন। খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে দাবি করেন ইউএনও। নদীর গতিপথ পরির্তন ও মূল সীমানা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে ওয়েবসাইটে দেয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলীর সরকারি টেলিফোন নম্বর ও মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও সাড়া মিলেনি। সরকারি ইজারার অর্থ পরিশোধ না করে নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক ও জেলা বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি গোলাম মওলা জানান, ইজারামূল্য পরিশোধ করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) ডক্টর দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান, ইজারামূল্য পরিশোধ না করে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে তদন্ত করে দেখবেন। ‘সরকারি স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ইজারাদারের স্বার্থ রক্ষা করা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা’ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তদন্তে সত্যতা পেলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।