খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে করা আবেদনকে ‘না’ বলে দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। একই সাথে বিদেশে যেতে হলে জেলে গিয়ে পরে আদালতে আবেদন করতে হবে বলে জানানো হয়েছে। গতকাল রোববার আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে সকালে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটা হলো আইনের অবস্থান। আমি মনে করি সেটা সঠিক। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন যে খালেদা জিয়ার আগে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে সাজা স্থগিত করেছেন এবং শর্তযুক্তভাবে প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতার কারণে তাকে মুক্তি দিয়েছেন। এটা এখন পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজ ট্রানজেকশন। এখন এটা ওপেন করার কোনো উপায় নাই আইনগতভাবে। এটা পরিষ্কার বলে দিয়েছেন। আইনের অবস্থানই সেটা।
গত শনিবার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া প্রসঙ্গে ভয়েস অব আমেরিকার শতরূপা বড়ুয়াকে দেয়া এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদেশে যেতে হলে তাকে (খালেদা জিয়া) আদালতের কাছে অনুমতি নিতে হবে। আদালতের কাজের ওপর আমাদের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, যেটুকু করতে পেরেছি তার জন্য সেটা হচ্ছে, সরকার হিসেবে ক্ষমতা আছে তার সাজা স্থগিত করে তাকে বাড়িতে থাকার পারমিশন দেয়া হয়েছে। এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি নিজেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন যদি তাকে বিদেশে যেতে হয় বাইরে তাহলে এখন যে তাকে বাসায় থাকার পারমিশন দিয়েছি, সেটা উইড্রো করতে হবে। তাকে আবার জেলে যেতে হবে। এবং কোর্টে যেতে হবে। কোর্টের কাছে আবেদন করতে হবে। কোর্ট যদি রায় দেয়, তখন সে যেতে পারবে। এটা হলো বাস্তবতা।’ গত ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ছোটভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সাথে দেখা করে বিদেশে চিকিৎসার আবেদন করেন। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ আবেদন মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদ- দেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায়ের পর তাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার সাজা আরো পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদ- এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদ- দেন একই আদালত।
২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। এরপর থেকে মুক্তির মেয়াদ বাড়তে থাকায় তাকে আর কারাগারে যেতে হয়নি।
আইনমন্ত্রীর বক্তব্য: আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, দেশের সব কাজই আইনের মাধ্যমে করতে হয়। আইনের ঊর্ধ্বে গিয়ে করলে খারাপ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়। নির্বাহী আদেশে বিদেশ গেলেও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সেই নির্বাহী আদেশ দিতে হবে। আইনের বাইরে কোনো নির্বাহী আদেশ হতে পারে না। আজকে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে কি না এ বিষয়ে ফাইল দেখে মতামত দেয়া হবে। গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটা হলো আইনের অবস্থান। আমি মনে করি সেটা সঠিক। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন খালেদা জিয়ার আগে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে সাজা স্থগিত করেছেন এবং শর্তযুক্তভাবে প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতার কারণে তাকে মুক্তি দিয়েছেন। এটা এখন পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজ ট্রানজেকশন। এখন এটা ওপেন করার কোনো উপায় নাই আইনগতভাবে। এটা পরিষ্কার বলে দিয়েছেন। আইনের অবস্থানই সেটা।
আইনমন্ত্রী বলেন, তিনদিন ছুটি শেষে গতকাল শনিবার অফিস খুলেছে। আমি যতটুকু জেনেছি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসার পরে আইন মন্ত্রণালয়ের একজন জয়েন্ট সেক্রেটারির কাছে রয়েছে। আমি অফিসে গিয়ে ফাইলটা দেখে আজকের মধ্যে মতামত দিয়ে শেষ করবো।