শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন

কৃষিতে উৎপাদনশীলতায় দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন বাংলাদেশ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩
গতকাল সোমবার রাজধানীর সিরডাপ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক

আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে ৯৪তম। কিন্তু কৃষি উৎপাদনে ১৪তম। অর্থাৎ জমি কম হলেও উৎপাদনে এগিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু কৃষিতে উৎপাদনশীলতায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সর্বনিম্ন।
গতকাল সোমবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের কৃষির রুপান্তর’-বিষয়ক মূল প্রবন্ধে এ তথ্য জানানো হয়। ‘বাংলাদেশের কৃষির রূপান্তর : কাজী বদরুদ্দোজার আবদান’ শীর্ষক বিএজেএফ জাতীয় কৃষি সম্মেলনে মূল্য প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের অনেক আবাদযোগ্য পতিত জমি রয়েছে। সেগুলো চাষের আওতায় আনতে হবে। আমরা যদি আমাদের খাদ্য নিজেরাই উৎপাদন করতে পারি তাহলে বৈশ্বিক কোনো সঙ্কট আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।’ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশের কৃষির রূপান্তর শুরু করেছিলেন কাজী বদরুদ্দোজা। তিনি এদেশের সনাতন কৃষিকে বিজ্ঞানভিত্তিক করে গড়ে তুলেছেন, যার সুফল এখন আমরা ভোগ করছি। তবে এ রূপান্তরের দ্বিতীয় অংশটি এখন বড় চ্যালেঞ্জের। ধান রোপন থেকে শুরু করে মাড়াই পর্যন্ত এখন যান্ত্রীকিকরণ করতে হবে। এছাড়া কৃষির সকল ক্ষেত্রে আধুনিকায়ন ও বাণিজ্যিকিকরণ করতে হবে। এর সাথে মূল্য সংযোজন বাড়াতে কৃষি প্রক্রিয়াজতকরণ বাড়াতে হবে। কাজী বদরুদ্দোজা শুধু বাংলাদেশের কৃষির পথিকৃত নন, তিনি ভিয়েতনামের জাতীয় কৃষি মহাপরিকল্পনাতে অবদান রেখেছেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব সবসময় ছিল এবং থাকবে। একসময় এদেশে কম মানুষ ছিল, তারপরেও আশ্বিন-কার্তিক মাসে মঙ্গা হতো উত্তরবঙ্গে। বৈশ্বিক সঙ্কটের মধ্যে চলতি বছর চাল আমদানি করতে হয়নি। এবছর শেষ নাগাদ পর্যন্ত আর চাল আমদানি করতে হবে না। এখন চালের দাম নিম্নমুখী। ভারত চালের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এর সমালোচনা চলছে আন্তর্জাতিকভাবে। তারপরেও আমাদের চালের দামটা কম, কারণ কৃষিকে বিজ্ঞানভিত্তিক করা গেছে। এখন ধানের উৎপাদন বেড়েছে। এমন কৃষির রূপান্তরে কাজী বদরুদ্দোজা ছিলেন দূরদর্শী। তিনি ছিলেন বর্তমান আধুনিক কৃষির স্বপ্নদ্রষ্টা। রূপান্তরে তিনি কাজ করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। সব বিজ্ঞানীর এই ক্ষমতা থাকে না, যেটা বদরুদ্দোজার মধ্যে ছিল।’ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মো: হামিদুর রহমান বলেন, ‘কৃষি গবেষণা কাউন্সিল যেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে পাঁচ তারকা হোটেল হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কাজী বদরুদ্দোজা বঙ্গবন্ধুর সাথে সরাসরি কথা বলে কৃষি গবেষণা কাউন্সিল তৈরির অনুমোদন নিয়ে আসেন।’ এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল বলেন, ‘কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এর মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে রফতানিতে যেতে পারি। এ জন্য বেসরকারি খাতকে সংযুক্ত করতে হবে৷ আমরা ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের মাত্র দুই শতাংশ কৃষি খাতে বিনিয়োগ করছি। কম বিনিয়োগ দিয়ে কৃষি খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। আমরা চাই মোট ঋণের বিনিয়োগের পাঁচ শতাংশ যেন কৃষি খাতে বিনিয়োগ করা যায়, এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া কৃষিঋণ সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করতে হবে। ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণে এনজিওদের কার্যক্রম কমিয়ে আনতে হবে। তাহলে কৃষকরা ঋণ পাবে।’ এসিআই অ্যাগ্রিবিজনেসেসের প্রেসিডেন্ট ড. ফা হ আনসারী বলেন, ‘দেশে কৃষি গবেষণায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। বেসরকারি খাতের গবেষণা বাড়াতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। এছাড়া যান্ত্রীকিকরণের জন্য ব্যাংকের অর্থায়ন প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে।’ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিস্টিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো: শাহজাহান কবীর বলেন, ‘আমরা ধানের নতুন নতুন জাত দিয়েছি। চাল থেকে আমরা ৮০ শতাংশ প্রোটিন নিশ্চিত করব। আমরা চাল থেকে জিংক আয়রন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পূরণের চেষ্টা করছি।’
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার বলেন, ‘আমাদের দেশে জমি কমে আসছে। আমাদের আরো একটি সঙ্কট হলো জলবায়ু পরিবর্তন। আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে জলবায়ু সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এ সঙ্কট থেকে উত্তরণ করা যায়।’
বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের (বিএজেএফ) সভাপতি গোলাম ইফতেখার মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো: রফিকুল আমিন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীনের সঞ্চালনায় দু’দিনব্যাপী বিএজেএফ জাতীয় কৃষি সম্মেলনের প্রথম দিনে একাধিক বিষয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মেহেদী মাসুদ, সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রীকিকরণ প্রকল্পের পরিচালক তারিক মাহমুদুল ইসলাম, রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের পরিচালক শেখ ফজলুল হক মনি নিজ নিজ প্রকল্পের অর্জন ও পরিকল্পনা তুলে ধরেন। প্রথম দিনে কৃষি যান্ত্রীকিকরন, কৃষিপণ্যের রফতানি, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় টেকসই কৃষি, বীজ ও ফল উৎপাদন বিষয়ে বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এসময় কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরসহ কৃষিখাতের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সেমিনার বিএজেএফের প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। দু’দিনের এ সেমিনারে দেশের ৬০ জন কৃষি সাংবাদিকের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার সমাপনী দিনে কয়েকটি বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন কৃষিখাত সংশ্লিষ্টরা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com