লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে একটি স্থায়ী সেতুর অভাবে দূর্ভোগ কাটছে না ভুক্তভোগী গ্রামবাসীর। কবে হবে সেতু, এ প্রশ্ন গ্রামে বসবাসকারী বিভিন্ন বয়সের বাসিন্দাদের। উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মোতাহের হোসেন ডিবি রোডের মাথায় সীমান্তবর্তী ভুলুয়া নদীর ওপর নির্মিত কাঠের তৈরি এ সাঁকোটি দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। এলাকাবাসীর যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এ সাঁকোটি। উপজেলার চরকাদিরা গ্রামের এই কাঠের সাঁকো দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হাজার-হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এ স্থানের ভূলুয়া নদীর ওপর পাকা ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় ভুক্তভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা দ্রুত এখানে একটি সেতুর দাবি করেছেন। ভুলুয়া নদীর পূর্বপাশে রয়েছে সরকারের একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প। ওই প্রকল্পে প্রায় ৪ শতাধিক পরিবারের বসবাস।
এরপাশেই রয়েছে একটি গণকবর। এছাড়া মেঘনানদী ভাঙনের শিকার হয়ে প্রায় ৬ শতাধিক পরিবার এখানে বসতি স্থাপন করেন। চরকাদিরা, চরঠিকা, বটতলি সহ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের উপজেলা সদরে পৌঁছানোর যোগাযোগের মাধ্যম নড়বড়ে এ কাঠের সাঁকো। স্থানীয় ফজুমিয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয়, শান্তিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাজিরহাট উপকূল সরকারি কলেজ, হাজিরহাট হামিদিয়া কামিল মাদরাসা সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে এ সাঁকো দিয়ে। প্রায় ৯ বছর আগে নদীটির ওপর স্থানীয় চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ গ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাগবে কাঠের সাঁকোটি নির্মাণ করেন। বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যান সরেজমিনে এসে ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও সেটার বাস্তবায়ন হয়নি। সাঁকো দিয়ে কোনো রকমে পায়ে হেঁটে পারাপার হওয়া গেলেও যানবাহন চলাচল একেবারেই কঠিন হয়ে পড়েছে। জেলা-উপজেলা সদরে রোগী নিয়ে গেলে প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার ঘুরে হাসপাতালে যেতে হয়। উৎপাদিত খাদ্যশস্য, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বাজারজাতকরণে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। এতে উৎপাদিত পণ্যে খরচ বেশি হয়। স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম ও আবুল বাসার জানান, ‘কত নেতা আইলো-গেলো, আমাগো কপালে ব্রিজ হইলো না। সবাই ভোটের আগে কথা দিয়া যায়। ভোটের পরে কোন খবর নেয়না। কিন্তু পরে আর কথাও রাখে না। কত যে কষ্ট করতে হয় আমাগো! দুইবার পইরা যাইয়া দুক্ষু (ব্যথা) পাইছি। মরার আগে যদি ব্রিজটা দেইখা যাইতে পারতাম, তাহলে শান্তি পাইতাম। স্থানীয় শাহ আলম মাঝি, ইসমাইল ও আব্দুজ জাহের জানান, কাঠের সাঁকো হওয়ার আগে আমাদের নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হয়েছে। কেউ খোঁজ নিতে আসে নাই। এখন চলাচল করা খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। বিবি আকলিমা বেগম জানান, ব্রিজটা না হওয়ায় আমাদের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা যাতায়াত করতে পারে না। সরকারের কাছে এখানে একটি ব্রিজ চাই। স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ বেলাল হোসেন জানান, অনেকেই জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু নির্বাচনের পর আর কেউ খোঁজ-খবর নেন না। নতুন ব্রিজের স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে গেলো। আশাকরি আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখানে ভুলুয়া নদীর ওপর একটি ব্রীজ নির্মাণ করে দিবেন। চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, জনগণের দুঃখ দুর্দশা অনুভব থেকেই ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কাঠের সাঁকোটির ব্যবস্থা করা হয়। স্থায়ীভাবে ব্রিজ নির্মাণ করা খুবই জরুরী। উপজেলায় উন্নয়ন সভায় একাধিকবার প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে। এলজিইডির কমলনগর উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল আনোয়ার বলেন, সরেজমিন খোঁজ খবর নিয়ে উর্ধ্বতনে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীকে দিয়ে উপযুক্ততা যাচাই সাপেক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।