বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনা আগের মতোই নির্বাচন করতে চাইছেন। বিনা ভোটারেই নির্বাচিত হবেন, সেটা তো হবে না। ২০১৪ তে যেটা পেরেছেন, ২০১৮ তে যেটা করতে পেরেছেন, ২০২৪ সালে সেই নির্বাচন আপনি (শেখ হাসিনা) করতে পারবেন না। কারণ মানুষ যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সেটা আর সম্ভব হবে না বলে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
গতকাল রোববার রাজধানীর গুলশানে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা ও এই মুহূর্তে আমাদের করণীয় শীর্ষক সেমিনার ও ‘নো কমেন্টস’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ফখরুল। এ সময় পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্ব যেভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিষয়ে অবস্থান নিয়েছে, তা আমাদের সাহস যোগাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সবাই এবার রাজপথে নেমে গেছি। আমাদের দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো হতাশা নেই। যারা মাঠে আছে, তাদের মধ্যে হতাশা থাকে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলন যারা করছি, তাদের মধ্যেও কোনো হতাশা নেই। আমাদের কত নেতাকর্মী জীবন দিচ্ছে। তবুও হতাশা নেই। বিজয় আমাদের হবেই।’ এবার মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১৪-২০১৮ সালে যা করেছেন, সেটা ২০২৪ সালে করতে পারবেন না। এবার মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তাতে সেটা সম্ভব হবে না৷ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আন্দোলন আরও বেগবান করতে হবে৷ রাজপথে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়েই জনগণের দ্বিতীয় মুক্তি সম্ভব হবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ আছে, সব সময় হতাশায় ভোগেন৷ মাঠে থাকলে হতাশা আসে না৷ দলের নেতা-কর্মী, যুগপৎ আন্দোলনে থাকাদের মধ্যে হতাশা দেখি না৷ ফ্যাসিস্টের সঙ্গে গণতান্ত্রিক লড়াই সহজ ব্যাপার না৷ এই সংগ্রামে আমরাই জিতব, কারণ আমরা সঠিক পথে আছি, সত্যের পক্ষে আছি।’
সেমিনারের শুরুতে একটি তথ্যচিত্রের মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৮ সালের নির্বাচন কেমন ছিল, তা তুলে ধরা হয়। সেমিনারে ‘নো কমেন্টস: রাতের ভোট ২০১৮’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে লেখা বইটি সম্পাদনা করেছেন বাবুল তালুকদার।
‘পিটার হাস অবতার হয়ে এসেছেন’: সেমিনারের সূচনা বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে কার্যত ভোট হয়েছে আগের রাতে৷ এই ঘটনা দুঃখজনক, কলঙ্কময়। বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন৷ এই বইটি বাংলাদেশের ভুয়া নির্বাচন নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সংকলন। এর মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের নামে বাংলাদেশে যে চরম প্রতারণা হচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়েছে। নির্বাচনে জালিয়াতি করা নিয়ে সরকারি দলের লজ্জাবোধ নেই মন্তব্য করে আবদুল মঈন খান বলেন, গত নির্বাচনের সময় সরকারি দলের সদস্য ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মনে কোনো লজ্জা বা অপরাধবোধ ছিল না৷ ভোটের আগের রাতে অহংকারের সঙ্গে প্রশাসনিক শক্তি ব্যবহার করে জালিয়াতি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ আরেকটি নির্বাচনের চেষ্টা করছে, সে কারণে অতীতের অন্যায় নতুন করে তুলে ধরা হচ্ছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বলেন, ‘পিটার হাসকে (বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত) ধন্যবাদ জানাই। আমাদের জন্য অবতার হয়ে এসেছেন। উনাকে আরও সাহস দেওয়া দরকার। বাবারে বাঁচা, রক্ষা কর, আছি তোমাদের সঙ্গে। তোমরাও ডেমোক্রেটিক কান্ট্রি (গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র), আমরাও ডেমোক্রেটিক কান্ট্রি।’
আটকে থাকা দরজা খুলেছে: যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ও র্যাব কর্মকর্তাদের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা বিরোধীদের জন্য আটকে থাকা দরজা খুলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না)। তিনি বলেন, ‘সামনে যেতে পারছিলাম না। সেই আটকে থাকা দরজা খুলে দিয়েছে ভিসা নীতি ও র্যাব কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞা। এই দরজা দিয়ে আমাদের সামনে যেতে হবে।’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ওরা (যুক্তরাষ্ট্র) আমাকে চায় না। ওরা না চাইলে কেউ থাকতে পারে না। ফলে আশা তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমেরিকা, ইউরোপকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। এর জবাব আমেরিকা কীভাবে দেবে? আমেরিকা গায়ে পানি লাগাবে না, কিন্তু গোসল করতে চায়।’ পূজার পরে বৃহত্তর আন্দোলন করার ঘোষণা দিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক শক্তি সহায়তা করবে, কিন্তু এখানে বেল (ঘণ্টা) আমাদেরই বাজাতে হবে। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান। তিনি বলেন, গণতন্ত্র না থাকার কারণেই পুনরুদ্ধারের কথা বলা হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরানোর দুটি পথÍকনসেনসাস (ঐক্যমত) অথবা কমপালশন (বাধ্য করা)। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীরা বলছেন, যেভাবেই নির্বাচন করবেন। ঐকমত্যের দরজা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকতউল্লা বুলু প্রমুখ।