বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে হিমেল আবহ। গাঁয়ের মেঠো পথে শীতের আগমনী বার্তা। সন্ধ্যার প্রকৃতি ঢেকে যাচ্ছে কুয়াশার হালকা চাদরে। ভোরে শিশিরের সাদা চাদরে ঢেকে যাচ্ছে পথঘাট। শরৎ-এর শেষ দিন ছিল গতকাল সোমবার। কাল ঋতু হেমন্তের প্রথম দিন। কার্তিক হচ্ছে ঋতু হেমন্তের প্রথম মাস। বাংলা বর্ষপঞ্জির হিসাবে আজ মঙ্গলবার পয়লা কার্তিক। বাংলাদেশের ষড়ঋতুর হিসেবে কার্তিক-অগ্রহায়ণ হেমন্তের মাস। হেমন্তের প্রকৃতি মিষ্টি সোনা রোদ মাখা। অখ- নীল আকাশ। হেমন্ত শরৎ থেকে পৃথক নয়, শীত থেকেও বিচ্ছিন্ন নয়, শীত-শরতের মাখামাখি একটি সুন্দর ঋতু। হেমন্তের শিশির ভেজা ঘাসের ডগা যেন মুক্তার মেলা। কার্তিকের আরেকটি বর্ণনা এরকম- এই সময়ে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে প্রগাঢ় সবুজ যেমন পাওয়া যায়, তেমনি পাওয়া যায় শীতের মিষ্টি আমেজও। গ্রীষ্মের মাটি ফাঁটানো দাবদাহ নেই, বর্ষার অঝোর ধারায় ভিজে যাওয়া বা কাঁদা নেই, হাড় কাঁপানো শীত যে মাসে নেই তারই নাম কার্তিক।
কবি জীবনানন্দের ভাষায় কার্তিক নবান্নের। তিনি লেখেন, ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায় / হয়তো মানুষ নয় হয়তোবা শাঁখচিল শালিকের বেশে,/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে/ কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়।’ কার্তিকের ঋতু হেমন্তকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন- ‘আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে/ জনশূন্য ক্ষেত্র মাঝে দীপ্ত দ্বিপ্রহরে/ শব্দহীন গতিহীন স্তব্ধতা উদার/ রয়েছে পড়িয়া শ্রান্ত দিগন্ত প্রসার/ স্বর্ণশ্যাম ডানা মেলি।’ (নৈবেদ্য স্তব্ধতা) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন- ‘উত্তরীয় লুটায় আমার/ ধানের খেতে হিমেল হাওয়ায়।/ আমার চাওয়া জড়িয়ে আছে/ নীল আকাশের সুনীল চাওয়ায়।/ ভাঁড়ির শীর্ণা নদীর কূলে/ আমার রবি-ফসল দুলে, /নবান্নেরই সুঘ্রাণে মোর/ চাষির মুখে টপ্পা গাওয়ায়।’ (হৈমন্তী তেওড়া)
এক সময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। সম্রাট আকবর অগ্রহায়ণ মাসকেই বছরের প্রথম মাস বা খাজনা তোলার মাস ঘোষণা দিয়েছিলেন। কারণ, ধান উৎপাদনের ঋতু হলো এই হেমন্ত। হেমন্তের প্রথম মাস কার্তিকে ধানে পাক ধরে। কার্তিকের শেষ দিকে গ্রামের মাঠে মাঠে ধান কাটার ধুম পড়ে যায়। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে পাকা ধানের গন্ধে মৌ মৌ গন্ধ। জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশের ষড়ঋতুতে। ঋতুর উপস্থিতিতে ঘটছে তারতম্য। তারপরও কী কমে গেছে হেমন্তের আবেদন! এখনো হেমন্ত হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাদের! হেমন্তকে স্বাগত। নবান্নের উৎসবে ছুঁয়ে যাক সব প্রাণ।-রাইজিংবিডি