টুজি টেলিকম স্পেক্ট্রাম বণ্টন এবং কয়লাখনি বণ্টন নিয়ে অনিয়মের যে রিপোর্ট জাতীয় হিসাব পরীক্ষক সংস্থা সিএজি প্রকাশ করেছিল মূলত তাকে হাতিয়ার করেই ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার রাস্তা প্রশস্ত করেছিল ভারতের আরএসএস-বিজেপি। গতকাল মঙ্গলবার সেই সিএজি-ই যখন মোদি সরকারের দুর্নীতি, অনিয়মের রিপোর্ট তৈরি করেছে তখন প্রবল ক্ষুব্ধ ও ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে সরকার।
মোদিরা ভাবতেই পারে না তাদের দুর্নীতি প্রকাশ করার দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারে। অতএব মোদি সরকারের দিকে আঙুল তোলার মূল্য তো দিতেই হবে। যে তিনজন পদস্থ কর্মকর্তা মোদি সরকারের বহুল প্রচারিত প্রকল্প আয়ুষ্মান ভারত এবং ভারত মালার কাজে বিপুল অর্থ নয়ছয়ের তথ্য বের করেছেন তাদের পত্রপাঠ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নতুন ভারতে যারা দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ নয়ছয়ে যুক্ত তাদের আড়াল করা হয়, সাজা দেওয়া হয় যারা দুর্নীতি ধরে দেয় তাদের। দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ সরকার পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি ক্ষমতা দখল করেছেন। এখন তার সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত এটা প্রকাশ হয়ে গেলে ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকারই তার থাকে না। তাই দুর্নীতি হলেও, সরকারি টাকা লুট হলেও তা কোনো অবস্থাতেই প্রকাশ করা যাবে না, এবং কোনোমতেই স্বীকার করা যাবে না। দুর্নীতির জলজ্যান্ত প্রমাণ থাকলেও তাকে প্রবল বিক্রমে অস্বীকার করতে হবে। এমনকি যাদের হাতে এই দুর্নীতি ধরা পড়েছে তাদেরও রেয়াত করা হবে না। তারা যদি পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হয় তাহলেও না। তাই তিন কর্মকর্তা সততার সঙ্গে ন্যাস্ত দায়িত্ব পালন করে মোদি সরকারের কাছে অপরাধী হয়ে গেছেন।
ভারতমালা প্রকল্পে দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় অনুমোদিত ১৮.২ কোটি রুপির জায়গায় খরচ হয়েছে ২৫১ কোটি রুপি। ১৪ গুণ বেশি। দিল্লি-ভাদোদরা হাইওয়ের কাজে অনুমোদিত ব্যয় থেকে অনেক বেশি ব্যয় করা হয়েছে। অযোধ্যা উন্নয়ন প্রকল্পে অতিরিক্ত ২০ কোটি টাকা ঠিকাদারদের পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সড়কে টোল সংগ্রহেও বিরাট দুর্নীতি ধরা পড়েছে। গরিব মানুষের স্বাস্থ্যবিমা আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে লাগামছাড়া দুর্নীতি ধরা পড়েছে। ৭ লক্ষের বেশি সুবিধাভোগীর একটাই ফোন নম্বর। অসংখ্য মৃত ব্যক্তির চিকিৎসায় খরচ হয়েছে বিপুল টাকা। নিঃসন্দেহে এটা অতীব কুৎসিত ও কদর্য দুর্নীতি।
যে সিএজি প্রধানের কল্যাণে ২০১৪ সালে নির্বাচনী প্রচারে বাড়তি সুবিধা পেয়েছিলেন মোদি ক্ষমতায় এসে তাকে পুরস্কার দিয়েছিলেন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে। বদলে গুজরাট থেকে নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে বসিয়েছেন সিএজি’র প্রধান পদে। তথাপি ছিদ্র গলে দুর্নীতি বেরিয়ে এসেছে। আসলে এই আধিপত্যবাদী সরকার সর্বক্ষেত্রে আধিপত্য কায়েম করতে চায়। বিচার ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করতে চায় যাতে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো রায় না হয়। নির্বাচনী কমিশনকে পকেটে পুরতে চায় যাতে কমিশন শাসক দলের হয়ে কাজ করে। তেমনি জাতীয় হিসাব পরীক্ষক সংস্থাকেও জো হুজুর করতে চায় যাতে সরকারে কোনো দুর্নীতি বাইরে বেরোতে না পারে। সিবিআই-ইডি তো কার্যত শাসক দলের শাখায় পরিণত হয়ে গেছে। সূত্র: কলকাতার গণশক্তি পত্রিকা