রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত ১৫ ঘণ্টায় দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। আটক নেতা-কর্মীদের বেশির ভাগই বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে এসেছিলেন। গতকাল বুধবার বেলা একটার দিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজধানীর কাকরাইল, ফকিরাপুল, মালিবাগ ও ঢাকার প্রবেশপথ থেকে এসব নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের আটক করার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে তাঁরা নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে অনেককে আটক করেছেন। কতজনকে আটক করেছেন, সে হিসাব তাঁরা এখনো করেননি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ডিবি মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার মো. রাজীব আল মাসুদ বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করে ষড়যন্ত্রের পাঁয়তারা করছে—এমন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির বিভিন্ন বিভাগ বিভিন্ন হোটেলে অভিযান চালিয়ে অনেককে আটক করেছে। গণনা শেষে আটক ব্যক্তির সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে। পরে বেলা আড়াইটার দিকে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আটকের সংখ্যা ১৫-২০ জনের মতো হবে। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য (কেন্দ্রীয় দপ্তরে যুক্ত) আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি আজ দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়ন থেকে ৫১ নেতা-কর্মী সমাবেশে যোগ দিতে এলে তাঁদের ভোর সাড়ে চারটার দিকে আটক করা হয়।
এ ছাড়া ধনবাড়ি উপজেলা বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক আলমগীর হোসেন, প্রবাসীবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনসহ আটজনকে গত রাতে পল্টন এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। গত ১৫ ঘণ্টায় মোট ২১৬ জন নেতা–কর্মীকে আটক করার তথ্য তাঁরা পেয়েছেন। বিএনপির অভিযোগ, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সমাবেশে আসা নেতা-কর্মীদের ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখ থেকে আটক করা হয়েছে। ঢাকায় যাঁরা পৌঁছেছেন, তাঁদের মধ্যেও অনেককে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি।
রাতেই ৬০ জনের বেশি নেতাকর্মী আটক করেছে পুলিশ : নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে দলটির জনসমাবেশ ছিল গতকাল বুধবার। এই সমাবেশকে ঘিরে গতকাল রাতে ৬০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। গতকাল বুধবার সকালে তিনি এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার রাত থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায়, মেসে তল্লাশি চালিয়ে তাদের আটক, গ্রেফতার করছে। এই সমাবেশকে ঘুরে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা বিভ্রান্তকর গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, জনগণের বিজয় দুয়ারে কড়া নাড়ছে, এই সরকারের কোনো অপচেষ্টাই আজকের জনসমাবেশ বাধাগ্রস্থ করতে পারবে না। এর আগে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
এ সময় তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, তাতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নাজমুল আলম নাজু, গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক নেওয়াজ চৌধুরী শাওন ও কালীগঞ্জ স্বেচ্ছাসেবক দলের তোফাজ্জল হোসেন মফা, কালিয়াকৈর স্বেচ্ছাসেবক দলের সরকার তুহীন, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সেলিম সহ পাঁচজন, রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আল-আমীন ও পবা উপজেলা কৃষকদলের নেতা মো: রবিউল ইসলাম, দিনাজপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রেজা, ফরিদপুর জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পলাশকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে গণমাধ্যমকে জানান।