শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বগুড়া শেরপুরে আগুনে পুড়লো পঁচিশ বিঘা জমির ভুট্টা ইসলামাবাদে ভোট কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগে মানববন্ধন বীর মুক্তিযোদ্ধার নির্মাণাধীন দোকানে সন্ত্রাসী হামলা বাগেরহাট নানান আয়োজনে মে দিবস পালিত ভালুকা বিশেষায়িত পেঁয়াজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন বরিশালে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভুট্টা মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষকেরা, দ্বিগুণ লাভের আশা নগরকান্দায় অগ্নিকান্ডে চারটি দোকান ঘর ভস্মীভূত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে গণতন্ত্রের মুক্তি হবে না-কেন্দ্রীয় বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার গলাচিপায় পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভা ও জাতীয় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ দিবস পালিত

ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভিসা নীতির আতঙ্ক

সৈয়দ ইবনে রহমত
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৩

সরকারের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে, অর্থনীতি সঠিক পথেই আছে। সব কিছু স্বাভাবিক গতিতেই চলছে। কোথাও কোনো সমস্যা নেই। বাস্তবতা হলো, অর্থনীতিতে তেমন কোনো সুখবর নেই। কমছে রিজার্ভ, রপ্তানি আয়, প্রবাস আয় ও বৈদেশিক সহায়তা। অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে নাজেহাল মানুষ। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ বছর সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ, ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগÑ ইআরডির হিসাব অনুযায়ী, বৈদেশিক ঋণের অর্থ ছাড়ের পরিমাণ কমছে। বিদেশি ঋণ কম এলেও বেড়েছে ঋণের সুদ এবং আসল পরিশোধের চাপ। বৈদেশিক অর্থের অন্যতম প্রধান উৎস রপ্তানি আয়েও কোনো সুখবর নেই। রেমিট্যান্স প্রবাহেও ভাটার টান লক্ষ করা যাচ্ছে। এর মধ্যে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ব্যবসায়ী মহলে। এই আতঙ্ক এতটাই জেঁকে ধরেছে যে, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ প্রকাশ্যে সেটা বলতেও এখন আর দ্বিধা করছেন না। গত ১৫ জুলাই শনিবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ীদের করণীয়’ শীর্ষক এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। আপনারা ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে দীর্ঘক্ষণ বসে আছেন, এই আন্তরিকতা আমাদের চলার পথের পাথেয়।’ আওয়ামী লীগ সরকার যে ব্যবসাবান্ধব সরকার, এটা শুধু প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নয়; অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ আরো অনেকের মুখ থেকেই উচ্চারিত হতে দেখা যায়। ব্যবসায়ীরাও এটা বিশ^াস করেন এবং সরকারের ব্যবসাবান্ধবনীতির সুফল যে পাচ্ছেন সেটা তারা দ্বিধাহীন চিত্তে স্বীকারও করেন। ওই অনুষ্ঠানেও উপস্থিত দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা সেটা উল্লেখ করেছেন। এমনকি ব্যবসায়ীরা এটাও বলেছেন যে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় দেখতে চান তারা। তারা বলেছেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই ভবিষ্যতেও শেখ হাসিনার সরকার দরকার।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে এফবিসিসিআই, মেট্রোপলিটন চেম্বার, ঢাকা চেম্বার, তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, চট্টগ্রাম চেম্বারসহ দেশের বিভিন্ন চেম্বার ও সংগঠনের নেতা, শিল্পোদ্যোক্তা ও শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকার মিলিয়ে ৩১ জন ব্যবসায়ী বক্তব্য দেন। তাদের প্রায় সবাই বর্তমান সরকারের আমলের ব্যবসাবান্ধনীতির প্রশংসা করেছেন। বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, জ্বালাও-পোড়াও আর হরতাল-অবরোধের যুগে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারও ফিরিয়ে আনার কারণ নেই। তাদের মতে, রপ্তানি, রেমিট্যান্স, মাথাপিছু আয়সহ সার্বিক উন্নয়নে গত ১৪ বছর ছিল বাংলাদেশের স্বর্ণযুগ। সামনেও এ ধারা বজায় রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা ক্ষমতায় আছেন প্রায় ১৫ বছর ধরে। এই দীর্ঘ সময়ে তার ব্যবসাবান্ধব উদারনীতির বিষয়টি লোকাছাপা নেই। এটি ব্যবসায়ীরা যেমন জানেন, তেমনি দেশের মানুষও জানে। আর সেকারণেই ব্যবসায়ীরা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে যদি বার বার ক্ষমতায় দেখতে চান তাতে দোষের কিছু আছে বলে মনে হয় না। বরং তাদের জন্য এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। বাজার পরিস্থিতি যেমনই হোক, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যে স্তরেই থাকুক, নি¤œ ও নি¤œ মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে দুই বেলার খাবার থাকুক বা না থাকুক তাতেও খুব একটা সমস্যা ছিল না। করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক মন্দার কারণে এটা মেনে নেয়াই দেশের মানুষের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাই হোক, ব্যবসাবান্ধব সরকার এবং সরকারের অনুগত ব্যবসায়ীদের অভিমতে দেশের অর্থনীতিতে যে এক ধরনের ফুরফুরে হিমেল হাওয়া বইছে, তাতে আর সন্দেহ কী! কিন্তু সেই সম্মেলনের দুই মাস না যেতেই ভিন্ন সুরে কথা বলতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ।
গত ৮ অক্টোবর দৈনিক আজকের পত্রিকার অনলাইনে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান শুনিয়েছেন অন্য কথা। তিনি বলেছেন, ব্যবসায়ীরা ভালো নেই, বরং আতঙ্কে আছেন। নিষেধাজ্ঞা ও জিএসপি প্রত্যাহারের গুঞ্জনে চারদিক থেকে চাপে আছেন। অথচ, সেদিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে তিনিও ছিলেন। তিনি ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে পোশাকশিল্পের মালিকেরা অর্থনীতির সেনা হিসেবে আপনার সঙ্গে রয়েছেন।’ দুই মাস না যেতেই সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘দেশের যা পরিস্থিতি তাতে ভালো থাকার কথা না! প্রচ- চাপের মধ্যে আছি। চারদিক থেকে চাপে আছি। মালিকদের চাপ, ক্রেতাদের চাপ। বিভিন্নজন বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন করে এটা-ওটা জানতে চাচ্ছে। ফোনের পর ফোন আসছে। এইগুলো নিয়ে চাপে আছি। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির কারণে আমাদের তৈরি পোশাক খাতে এখনো কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে এরপর যদি আরও নিষেধাজ্ঞা আসে তাহলে আমাদের রপ্তানি খাতে অনেক সমস্যা হবে। এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে এত বেশি লেখালেখি হচ্ছে, তাতে তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা আসছে, এই খবরে আমাদের মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে ক্রেতারাও চিন্তিত হয়ে পড়েছে। সামনে নির্বাচনকে ঘিরে কী হয়। বায়ারদের চিন্তা হচ্ছে, সামনের যে নির্বাচন আসছে, সেখানে কী হতে যাচ্ছে। তাদের মনে হচ্ছে, যদি নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়, তাহলে ক্রয়াদেশ দিলেও ঠিকমতো পণ্য ডেলিভারি দেওয়া যাবে না। তা ছাড়া বায়ারদের মধ্যে আরও একটি ব্যাপার কাজ করছে তা হলো, বাংলাদেশ সম্ভবত বিভিন্ন বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞায় পড়তে যাচ্ছে। আজকেও (৭ অক্টোবর শনিবার) আমাকে দু’জন বায়ার তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। আমি তাদের এই ব্যাপারে তেমন কিছু বলতে পারছি না। সবকিছু মিলিয়ে আমি বেশ চাপে আছি। ইউরোপ যদি তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করে, তাহলে আমাদের রপ্তানি ধসে পড়বে। আমাদের পোশাক রপ্তানি আর টিকবে না। তৈরি পোশাক খাত মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা কোনোভাবে ইউরোপের বাজারে শুল্ক দিয়ে পোশাক রপ্তানি করতে পারব না। ইউরোপের শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের পোশাকের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে যাবে। শুল্ক আরোপ হলে আমাদের খুবই কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। আমার মনে হয় না যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেবে। তবে কিছু ব্যবসায়ী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপর স্যাংশন দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র যদি সেটিও করে, তাহলেও আমাদের ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
এই সাক্ষাৎকারে বিজিএমইএ সভাপতি আরো অনেক কথাই বলেছেন। তবে সেখানে কোনো সুখবর নেই, বরং প্রতিটি বাক্যে দুশ্চিন্তা আর আতঙ্কের ছাপ ফুটে উঠেছে। এসব কথা শুধু যে তার নয়, বরং তৈরি পোশাক খাতের অন্য ব্যবসায়ীদের মনের অবস্থাও ফুটে উঠেছে সাক্ষাৎকারে। একই সুরে আশঙ্কার কথা বলেছেন, বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম। ১৫ জুলাই ব্যবসায়ীরা যে আত্মবিশ^াস দেখিয়েছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে যতটা সন্তোষজনক বলে বর্ণনা করেছেন, সেই ব্যবসায়ীরাই দুই মাস না যেতেই এভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়াটা নিশ্চয়ই স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। আর এটা হয়েছে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার ঘোষণার কারণেই। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেবে না দেশটি। আর এই মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা আসে ২২ সেপ্টেম্বর। এর পর থেকেই মূলত আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ঘোষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, বিরোধী দল, সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তা, জুডিশিয়ারি ও সিকিউরিটি সার্ভিসের সদস্যরা ভিসা নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে। এমনকি একই কারণে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী এবং গণমাধ্যমকর্মীরাও এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছেন। অন্যদিকে মানবাধিকার ইস্যুর সমাধান ও আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক না হলে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা পুনর্মূল্যায়ন করতে বলেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের সদস্যরা। যুক্তরাষ্ট্রের মতো অস্ট্রেলিয়াকেও বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন ১৫ জন অস্ট্রেলীয় সংসদ সদস্য। বুধবার (৪ অক্টোবর) অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজিকে লেখা এক চিঠিতে তারা ওই তাগিদ দেন। অন্যদিকে এসব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করে কানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্যও।
মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কতটা গভীর এবং ব্যাপক তার একটা চিত্র তুলে ধরেছেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। গত ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা কীভাবে কাজ করে এবং আমেরিকা কীভাবে টার্গেট করে আপনার ভিসা বাতিল করে তার একটি বাস্তব উদাহরণ দেয়ার জন্যই আজকের এই স্ট্যাটাস! এখন যারা ক্ষমতায় আছেন কিংবা আমেরিকার সঙ্গে যাদের খুব ভালো সম্পর্ক আছে বলে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন তারা যদি আমার পরিণতি জানতেন, তবে অনেক আগেই জবানে তালা লাগাতেন এবং নিজ নিজ কর্মে সতর্কতা অবলম্বন করতেন! আমি এবং আমার পরিবারের মার্কিন ভিসা বাতিল হয় ২০১৪/১৫ সালের দিকে, যখন আমার সঙ্গে স্থানীয় দূতাবাস কর্মকর্তাদের দহরম-মহরম সম্পর্ক ছিলো! জাপানসহ ইইউ দেশগুলোর সঙ্গে আমার সম্পর্ক এমন পর্যায়ে ছিলো যখন আমার সুপারিশে অনেকের ভিসা হয়ে যেতো!’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘সেই আমি যখন ভিসা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়লাম তখন সারা দুনিয়া আমার জন্য বন্ধ হয়ে গেলো! ২০১৮ সালের পর আমি দেশের বাইরে যাইনি। আমার ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠেছে এবং কি এক দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছি তা লিখতে গেলে মহাভারত তৈরি হয়ে যাবে! আমার উল্লেখিত পরিণতি হয়েছে আওয়ামী লীগের দালালী করতে গিয়ে! দলের পক্ষে আমেরিকার সমালোচনা এবং রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনাকে নিয়ে একটি টিভি টকশোতে কৌতুক করার পর আমার ভিসা বাতিল হয়ে যায়! তারপর একের পর এক বিপর্যয় এবং সবশেষে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করার পরও কীভাবে শনির দশা থেকে মুক্তি মিলছে না, তা যদি বলি তবে এখনকার ক্ষমতাধর অনেকের ঘুম হারাম হয়ে যাবে!’
গুঞ্জন আছে, অতি দ্রুতই বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। রাজনৈতিক কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ ও শুল্কারোপের মতো ঘটনা ঘটলে সেটির প্রভাব কেমন হবে তা ভেবেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এই আতঙ্কের পেছনে কারণও আছে। ইতোমধ্যে যারা নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছেন তাদের নানান তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা নানা মাধ্যমে ছড়াচ্ছে। এর মধ্যে কোনটা ঠিক, কোনটা গুজব তা নির্ণয় করা কঠিন হলেও এটা সত্য যে, তাদের কেউই ভালো নেই। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসাদের পরিবার-পরিজন এমনকি নিকট আত্মীয়দেরও এর খেসারত দিতে হচ্ছে বলে নানা খবর ছড়াচ্ছে। এখন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ নেতৃস্থানীয়দের কথায় যে আতঙ্ক এবং ভয়ের ছাপ ফুটে উঠছে তার ছিটে ফোটাও যদি বাস্তবে প্রতিফলিত হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতির মেরুদ-টাই ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা, দেশের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ এখন দুটি। একটি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং অন্যটি তৈরি পোশাক খাত। আমাদের তৈরি পোশাক খাতের প্রধান বাজার ইউরোপ এবং আমেরিকা। এখন আমেরিকা ভিসা নিষেধাজ্ঞা যদি আমাদের ব্যবসায়ী, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের দিকে বিস্তৃত হয়, তাহলে ইউরোপের দেশগুলো থেকেও একই চাপে পড়বে। তার সাথে তাদের মিত্র কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য মিত্র দেশগুলোও সেটাকে অনুসরণ করতে পারে।
বাস্তবতা হলো, আমাদের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি দখল করে আছে তৈরি পোশাক খাত। আর তৈরি পোশাক খাত একটি শ্রমঘন শিল্প। এই খাতে অন্তত ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান আছে। এখন যদি আগামী নির্বাচন পরিস্থিতিকে ঘিরে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা কোনোভাবে আমাদের গার্মেন্ট খাতে প্রভাব ফেলে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, এটা সত্য। তার চেয়েও বড় সত্য হলো, তাদের প্রতিষ্ঠানে যে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান আছে, তারা কর্ম হারিয়ে বেকার হবে। শুধু বেকার হবে, এটা বললে যথেষ্ট হয় না। কারণ, বাস্তবতা হলো তাদের অধিকাংশের পক্ষেই নতুন কর্মসংস্থান পাওয়া অসম্ভব হবে। ফলে মূল্যস্ফীতির এই ক্রান্তিলগ্নে তাদের ঘরে খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসার প্রয়োজন মেটানোর মতো অবস্থা থাকবে না। দেশের অর্থনীতির এই ভঙ্গুর অবস্থার জন্য ব্যবসায়ীদের দায় আছে। বিশেষ করে ঋণের নামে ব্যাংকগুলোকে ফাঁকা করে ফেলা, শেয়ার বাজারে লুটপাট, বাজারে সিন্ডিকেট করে সাধারণ মানুষের পকেট কাটা, বিদেশে অর্থপাচারের বড় দায়টা তাদেরই। তাই কোনোভাবে যদি তাদের উপর কোনো শাস্তি আসে তাহলে আপাতত দৃষ্টিতে অনেকেই হয়তো খুশি হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা যেভাবে ব্যবসায়ী মহলে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, সত্যি সত্যিই যদি তা কার্যকর হতে শুরু করে তাহলে ব্যবসায়ীদের সাথে সাথে তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মরত বিপুল সংখ্যক মানুষকেও পথে বসাবে। আর এটা শুধু দেশের অর্থনীতির মেরুদ-কেই ভেঙ্গে দেবে না, শেষ পর্যন্ত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকেও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। কারণ, কর্মহীন বিপুল সংখ্যক মানুষ যখন তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্রের মতো ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে পারবে না, তখন তারা কী করবে, আর কী করবে না, সেটা ভেবে দেখার মতো অবস্থাও অনেকের মধ্যে থাকবে না।
এই অবস্থার কথা চিন্তা করে করণীয় ঠিক করতে হবে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে। বিশেষ করে সরকারকে সবচেয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে সবার আগে। কারণ, যে কারণে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা, তার সমাধান একমাত্র সরকারের হাতেই। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকেও তাদের এই মুহূর্তের করণীয় যথেষ্ট ভেবেচিন্তে ঠিক করে নিতে হবে। অন্যদিকে আমেরিকার নীতি নির্ধারকদের এমনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে তাদের ভূমিকার কারণে দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে না পড়ে এবং তার শিকার হিসেবে দেশের সাধারণ মানুষের জীবন যেন বিপন্ন না হয়।
ইমেইল:sayedibnrahmat@gmail.com




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com