প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দাম্ভিকতা প্রকাশ করছেন- এতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-সম্পদ বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। গতকাল শুক্রবার (২০ অক্টোবর) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ নেতাদের ফরমায়েসী রায় বাতিল ও সব রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদ (জিসপ)।
অবস্থান কর্মসূচিতে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, বাংলাদেশ আজকে ভূ-রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আপনি (শেখ হাসিনা) দেশের ১৮ কোটি মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। বাংলাদেশকে পৃথিবীর সব বড় ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর শত্রুতে পরিণত করেছেন।
বুলু বলেন, সাদ্দাম হোসেনও আপনার (শেখ হাসিনা) মতো এভাবে দাম্ভিকতা প্রকাশ করেছিলেন। সেই খেসারত ইরাকের মানুষকে দিতে হয়েছে। সেখানে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। এখনো ইরাকের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায়নি।
তিনি বলেন, আসাদ এক সময় দাম্ভিকতা দেখিয়ে ছিলেন। সিরিয়ার অবস্থা কী হয়েছে আপনারা জানেন। গাদ্দাফি দাম্ভিকতা প্রকাশ করেছিলেন, লিবিয়ার অবস্থা কী হয়েছে আপনারা জানেন। আপনি (শেখ হাসিনা) এখন যে দাম্ভিকতা প্রকাশ করছেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষকে নিয়ে যে ছিনিমিনি খেলছেন, বাংলাদেশের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। আমাদের সম্পদ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করছি এক দফার দাবিতে। সেই এক দফা হলো- শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, এই অবৈধ সংসদ ভেঙে না দেয়া পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, এই অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল না করা পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। এই দাবি নিয়ে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করছি। এই দাবির দেশের ৯০ ভাগ মানুষ ইতোমধ্যে সমর্থন জানিয়েছে। সে কারণে বিএনপির জনসমাবেশে সারাদেশে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, শেখ হাসিনা বলেছেন- এত লোক কোথায় থেকে আসে। বিএনপির টাকার উৎস নাকি তিনি খুঁজে দেখবেন। আমরা বলতে চাই, সবাই নিজের টাকা দিয়ে, অনেকে ধান, চাল, পাট বেচে, বউয়ের গয়না বেচে এই সমাবেশে আসে। আপনার মতো লুটের টাকা বিএনপির কাছে নেই। অতএব, দেশের সব মানুষ নিজের অর্থ দিয়ে আজকে আপনার (শেখ হাসিনা) পদত্যাগ চায়, নিজের পরিশ্রম দিয়ে আপনার পদত্যাগ চায়, নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আপনার পদত্যাগ চায়।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে আপনি (শেখ হাসিনা) দাওয়াত দিয়েছিলেন, আমরা (বিএনপি) গিয়েছিলাম। আপনি (শেখ হাসিনা) বললেন, আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা কথা দিচ্ছি নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। কিন্তু আপনি ৩০ তারিখের ভোট রাতের অন্ধকারে ২৯ তারিখে করে ফেললেন। আপনার কথা আর এদেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। বাবার নামে কসম খেয়ে যিনি দিনের ভোট রাতে করে ফেলেন, তার কাছে কিছু আশা করা যায় না। তবে আজকে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মী, মানুষ যে রাস্তায় এসেছে এর সম্পূর্ণ দাবিদার আপনি (শেখ হাসিনা)। এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, একদিকে শেখ হাসিনা বলছেন নির্বাচন হবে, অন্যদিকে সিইসি বলছেন, নির্বাচন কখন হবে, কবে হবে তিনি জানেন না। অতএব, বাংলাদেশ আজকে অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে প্রবেশ করেছে।
তিনি বলেন, এখনো সময় আছে, আপনি (শেখ হাসিনা) যদি দেশের মানুষের ভালো চান, ১৮ কোটি মানুষের যদি নিরাপত্তা চান, তাহলে আপনি পদত্যাগ করে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে একটি বৈধ ভোটের ব্যবস্থা করেন। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব, সেই ব্যবস্থা করেন।
আজকে দেশে গণতন্ত্র নেই উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আজকে দেশে আওয়ামী লীগ থেকে যে মনোনয়ন পায়, সেই নির্বাচিত হয়ে যায়। তাই আজকে আওয়ামী লীগের নেতাদের দেখবেন সব উপজেলায় প্রতিদিন দুইজন তিনজন করে মারা যাচ্ছে। কারণ, তারা মনে করে নৌকা পেলেই জিতে যাবে। প্রশাসন, পুলিশ ভাইয়েরা তাদের রাতের বেলা ব্যালট বাক্স ভরে দেবে, আর তারা নির্বাচিত হয়ে যাবে। এই খায়েশ আর পূরণ হবে না। দেশে আর ২০১৪, ২০১৮ সাল ফিরে আসবে না। ২০২৩ সালে ফয়সালা হয়ে যাবে, বাংলাদেশের মানুষ কিভাবে ভোট দেবে, কিভাবে রাষ্ট্র রক্ষা করবে, কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করবে।
জিসপের সভাপতি এম গিয়াস উদ্দিন খোকনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো: কামাল হোসেনের স ালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহাবুব উদ্দিন খোকন, যুব জাগপার কেন্দ্রীয় সভাপতি মীর আমির হোসেন আমু প্রমুখ।