সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বগুড়ার শিবগঞ্জে আলু বীজ বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট! কুড়িগ্রাম যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে হস্তশিল্পের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে ভাগ্য বদলে গেছে নারী উদ্যোক্তা রাজিয়ার তারাকান্দায় শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ চকরিয়ায় সামাজিক বনায়ন উদ্ধারে মানববন্ধন ও র‌্যালি বরিশাল বিভাগীয় সাংবাদিক পরিষদের ২০২৪ বিদায় উপলক্ষে সভা বীরগঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে উপজেলা বিএনপি সভাপতির মতবিনিময় সভা পাঁচবিবিতে কোয়েল পাখি পালনে হাসানের মাসে আয় লক্ষাধিক টাকা মোংলার মাটিতে কোন ফ্যাসিস্টদের ঠাঁই হবে না-সমন্বয়ক মোল্ল্যা রাহমাতুল্লাহ সিংড়ায় আমি মধ্যবিত্ত কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন মুক্তির ডাক ৭১: নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ

যুদ্ধবিরতি এবং ‘দুই রাষ্ট্র’ সমাধানে ওপর জোর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৩

ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ বন্ধে কায়রোতে বিশ্ব নেতারা

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ বন্ধে মিসরের রাজধানী কায়রোতে বৈঠকে বসেছেন বিশ্বনেতারা। এ যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কায়রোর এ শান্তি সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছেন জর্ডান, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিরা। গতকাল শনিবারের এ বৈঠকে যোগ দিয়েছেন জাতিসঙ্ঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারাও। উদ্বোধনী বক্তব্যে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যাতে গাজা উপত্যকায় মানবিক দুর্যোগের অবসানে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়। সেইসাথে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তি স্থাপনের উপায় খুঁজে বের করার কথা বলেন সিসি। তিনি বলেন, এ রোডম্যাচের প্রধান লক্ষ্য গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো এবং যুদ্ধবিরতিতে উভয়পক্ষকে সম্মত করা। এ সময় তিনি ‘দুই রাষ্ট্র’ সমাধানে আলোচনার ওপর জোর দেন। এদিকে, জর্ডানের বাদশা বলেন, ‘সাধারণ নাগরিকদের জীবনই প্রধান। গাজায় বোমা হামলা অব্যাহত রয়েছে। আমরা বলব, প্রতিটি স্তরেই নিষ্ঠুরতা দেখানো হচ্ছে এবং অকল্পনীয় কাজ করা হচ্ছে। এটা অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে জাতিগত নিধনযজ্ঞ। এখানে সকল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এটা একটা যুদ্ধাপরাধ।’ ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস মানবিক করিডোর খুলে দেয়ার আহ্বান জানান। তবে ইসরাইলের কোনো প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ না দেয়ায় সম্মেলনের অর্জন নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। গত সপ্তাহে এ সম্মেলনের ডাক দিয়েছিল মিসর। বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে ইসরায়েল: মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে ইসরায়েল। এই তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে। এছাড়া নাগরিকদের ‘যত দ্রুত সম্ভব’ মিসর ও জর্ডান ত্যাগ করতে বলেছে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল। এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে কাতারের সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। গতকাল শনিবার (২১ অক্টোবর) এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা কাউন্সিল। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোয় যা উল্লেখযোগ্য। তাই অবিলম্বে মিশর এবং জর্ডান ত্যাগ করার এবং অন্যান্য পার্শ্ববর্তী দেশে ভ্রমণ এড়াতে আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
মিসর-জর্ডানের পাশাপাশি মরক্কোর ব্যাপারেও সতর্ক ইসরায়েল। এ দেশটির জন্য হুমকির মাত্রা লেভেল-৩ এ উন্নীত করা হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে ভ্রমণ এড়াতে পরামর্শ দিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা পরিষদ। এছাড়া তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনসহ অন্যান্য আরব দেশ ত্যাগ করতে বলা হচ্ছে। একইসঙ্গে মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও মালদ্বীপসহ আশপাশের দেশগুলোয় ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের শঙ্কা, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর গাজায় শুরু হওয়া ক্রমাগত যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলি নাগরিকরা সশস্ত্র সংগঠনটির লক্ষ্যবস্তু হবে। হামাসের হামলার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। বিমান হামলার পাশাপাশি জল ও স্থল পথে আগ্রাসনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটি। তার আগে বিভিন্ন দেশে থাকা নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। এর আগে গত ১২ অক্টোবর মার্কিন নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে এই সতর্কবার্তা জারি করা হয়।
গাজায় ২০ ট্রাক সহায়তা যেন ‘সমুদ্রের মাঝে এক ফোঁটা পানি’: মিশর থেকে রাফাহ ক্রসিং হয়ে গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে রেড ক্রিসেন্টের মানবিক সহায়তাবাহী ট্রাকগুলো। যদিও ত্রাণ সংস্থাগুলো বারবার ২০ ট্রাকের এই সহায়তাকে ‘সমুদ্রের মাঝে একফোঁটা পানির’ সঙ্গে তুলনা করে আসছে। গাজার ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ত্রাণের যে বহর প্রবেশ করছে, তা খুবই সীমিত। বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজনে আহত ব্যক্তিদের জন্য একটি মানবিক করিডোর অবশ্যই স্থায়ীভাবে খোলা রাখতে হবে।
গাজাভিত্তিক সরকারি মিডিয়া অফিসের প্রধান সালামা মারুফ এক বিবৃতিতে বলেছেন, শনিবার সকালে যেসব ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করছে, তা গাজা উপত্যকার মানবিক বিপর্যয়ের পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারবে না। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, গাজায় প্রবেশ করা ২০টি ত্রাণবাহী ট্রাক যথেষ্ট নয়। তিনি আশা করছন, শিগগিরই গাজায় আরও ত্রাণ প্রবেশ করবে। প্রসঙ্গত, গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইসরায়েল গাজায় বোমাবর্ষণ করেছে। গাজার বেসামরিক জনগণের ওপর পূর্ণ অবরোধ আরোপ করা হয়েছে, বিশেষ করে পানি, খাদ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। তাদের এই অভিযানে ৪ হাজার ১০০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা করা হয়েছে এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
ত্রাণের তালিকা থেকে জ্বালানি বাদ দেয়ায় উদ্বিগ্ন ফিলিস্তিন: ত্রাণের তালিকা থেকে জ্বালানি বাদ দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল শনিবার (২১ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা। বিবৃতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজা উপত্যকায় পাঠানো মানবিক সহায়তার তালিকায় জ্বালানি না থাকায় আমরা উদ্বিগ্ন। এতে অসুস্থ ও আহতদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, আমরা মিসরসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলব, মৃত্যুর বহর দীর্ঘ হওয়ার আগে জ্বালানি ও স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো নিশ্চিতকরণে কাজ করুন।
এদিকে অবশেষে রাফাহ ক্রসিং দিয়ে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করেছে ত্রাণ পণ্যবাহী ট্রাক। এসব ট্রাকে ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী ও সীমিত পরিমাণে ক্যানজাত খাবার রয়েছে। আলজাজিরার এক প্রতিনিধি তার নিউজ স্টেশনকে জানিয়েছেন, ‘আমরা ক্রসিং দিয়ে ত্রাণ সামগ্রীবাহী প্রথম ট্রাকটিকে গাজায় প্রবেশ করতে দেখেছি।’ এর আগে মিশরের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম আল কাহেরা নিউজ জানায়, রাফাহ সীমান্ত শুক্রবার খুলে দেয়া হবে। তবে কায়রো পরবর্তীতে জানায়, তাদের রাস্তা মেরামত করতে আরো সময় লাগবে। পরে আজ খুলে দেয়া হলো। ইসরাইল সফর করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন গাজায় প্রাথমিকভাবে ২০টি ত্রাণবাহী ট্রাক যেতে পারবে জানালেও এ সহায়তা একেবারেই অপ্রতুল বলে উল্লেখ করেছে ত্রাণ সংস্থাগুলো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তাদের ভাষ্য, গাজাবাসীর জন্য এখন অন্তত ২ হাজার ট্রাক ত্রাণ সহায়তা দরকার। সেখানে মাত্র ২০ ট্রাক ত্রাণকে ‘সমুদ্রে এক ফোটা পানির’ সাথে তুলনা করেন তারা। জাতিসঙ্ঘ গাজার বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়কর’ বলে অভিহিত করেছে। জাতিসঙ্ঘ আরো জানায়, গাজার ২৪ লাখ মানুষের মধ্যে ১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং সেখানে প্রতিদিনই পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
ইসরাইলি সৈন্যের গুলিতে নিহত তুরস্কের সেই মানবিক বন্ধু: চলতি বছরের ফ্রেব্রুয়ারিতে তুরস্কে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের স্বেচ্ছাসেবা দিয়েছিলেন। সেখান থেকে সদ্যই ফিরে এসেছেন মাতৃভূমিতে। পরিবারের কাছে তুলে ধরছিলেন- সেখানকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা। কিন্তু তিনি কি জানতেন যে- তাদের জীবনেও নেমে আসবে এরকম দুর্বিষহ পরিস্থিতি? ফিলিস্তিনি নাগরিক সামিহ উকতুশ এমনটি না ভাবলেও ব্যাপারটি তেমনই ঘটেছে। পশ্চিম তীরের নাবলুসে ইসরাইলি হামলায় অবৈধ দেশটির সৈন্যদের গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনি। একইসাথে তার পরিবারের ওপর নেমে এসেছে বিপদ-আপদের ঘোর অমানিশা।
ঘটনাটি ফ্রেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকের। তুর্কি সংবাদমাধ্যম টিআরটি আরবি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। পত্রিকাটি জানিয়েছে, তুরস্ক থেকে ফিরে এসে নিজ গ্রাম জা’তারা-তে অবস্থান করছিলেন। এরই মধ্যে সেখানে হামলা চালায় দখলদার দেশটির সৈন্যরা। এ সময় নিজেদের ছোট্ট গ্রামটিকে বাঁচাতে প্রাণপণ লড়াই করেন সামিহ উকতুশ। এর এক পর্যায়ে শত্রুর গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। ৩৭ বছর বয়সী উকতুশ তার পরিবারকে জানিয়েছিলেন যে- তিনি প্রতিটি প্রাণকে ভালোবাসেন। সাথে এটাও ভালোবাসেন যে- তিনি তার দেশ ও তুর্কিদের সাহায্য করবেন। কেননা, তুরস্কও তার কাছে বেশ পছন্দের দেশ ছিল। টিআরটি জানায়, ওই দিনের হামলায় সামিহ উকতুশ পেটে গুলিবিদ্ধ হন এবং পেটের মধ্যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান।
সামিহ উকতুশের ভাই ওয়াসেল উকতুশ (৫২) জানান, তার ছোট ভাই প্রতিটি প্রাণীর প্রতি খুব যতœশীল ছিলেন। মানুষের প্রতি ছিল তার বেশ দয়া। পাশাপাশি তিনি স্বভাবতই ছিলেন দ্বীনের একজন দাঈ। সরল প্রকৃতির এ মানুষটি তুরস্ককে খুব ভালোবাসতেন। তিনি আরো জানান, তার ভাই ৪০ দিনের জন্য তুরস্কে গিয়েছিলেন ইসলামের দাওয়াত দিতে। তিনি এর আগেও একাধিকবার দেশটিতে সফর করেছেন। এবারের সফরের মধ্যেই ভূমিকম্পের ঘটনাটি ঘটে। আর তিনি স্বেচ্ছাসেবায় লেগে যান। পরে মাতৃভূমিতে ফিরে দখলদারদের হামলায় প্রাণ হারালেন। সূত্র : আলজাজিরা, টিআরটি আরবি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com