শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:২২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
কিডস ক্রিয়েশন টিভিতে চলছে শিশুদের নিয়ে কুইজ কম্পিটিশন ‘জিনিয়াস কিডস’ মার্কিন নতুন প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক আরো বাড়বে : নজরুল ইসলাম একাত্তরে আ’লীগ মানুষকে বন্দুকের মুখে রেখে পালিয়েছিল, চব্বিশেও তাই করেছে : মঈন খান ১৮,০০০ ভারতীয়কে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন জাতীয় ঐক্য গড়তে বিএনপির সঙ্গে খেলাফত মজলিসের বৈঠক বিধবংসী আগুন তুরস্কের রিসোর্টে, নিহত কমপক্ষে ৬৬ জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল, সংবিধানের বিপরীতে হাঁটছেন ট্রাম্প ওষুধ-রেস্তোরাঁ-মোবাইলে ভ্যাট বাড়ছে না ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিসে’ খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সিদ্ধান্ত জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে সরে দাঁড়ালেন সারজিস

আমার নামাজ আমার অনুভূতি

মুন্সি আব্দুল কাদির
  • আপডেট সময় রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৩

আমি এখন খুব প্রশান্তচিত্তে বসে আছি। মাওলার সামনে মাথা পেতে দেয়ার যে কী শান্তি তা আমি অনুভব করছি। আমার মধ্যে এখন ভয়, হতাশা, উৎকণ্ঠা, পেরেশানি কোনো কিছু নেই। মাওলাকে আমি সেজদা করতে পেরেছি। মাওলার সামনে নিজেকে সঁপে দিতে পেরেছি। এর চেয়ে বড় সফলতা কোনো মানুষের জীবনে নেই। আমার জীবনের মূল্যের চেয়েও এই সেজদার দাম অনেক বেশি। ইবলিশ মহান রবের নির্দেশ আদম আ:-কে সেজদা না দেয়ার কারণে লানতপ্রাপ্ত হয়েছে। তার পুরো জীবনের আমল বরবাদ হয়ে গেছে। সে অভিশপ্ত হিসেবে সবার কাছে নিশ্চিত চিহ্নিত। কিন্তু আমি মাওলাকে সেজদা দিয়ে সফল। আমি আমার দেহের সবচেয়ে উপরের অংশ আমার কপাল সবচেয়ে নিচে পদতলের মাটিতে মাওলার সামনে লুটিয়ে দিয়েছি। আমি মাওলার সামান্য একজন গোলাম। আমার বড়ত্ব নেই। আমার অহঙ্কার নেই। তাঁর সামনে সেজদা দিতে পারাই আমার বড়ত্ব।
আমি ঈমানদার। ঈমানের মহা দৌলত পেয়ে আমি ধন্য। ঈমানদারদের পায়ে পৃথিবী চুম্বন করে। ঈমানদারদের প্রতি মহান রবের ভালোবাসায় অন্যরাও বেঁচে থাকে। রিজিকপ্রাপ্ত হয়। ঈমানদারদের বিদায় তো পৃথিবীর শেষ পরিণতি। আমি পৃথিবীর লাখো কোটি মানুষ থেকে আলাদা। আমি মহান রবকে চিনি। তাঁর সামনে মাথা পেতে দেই। তাঁর সামনে বিনয়ের সাথে দাঁড়াই। খুব মিনতি আর কাকুতির সাথে তাঁর কাছে হাত পাতি। বিনয়ের চূড়ান্ত পর্যায় তাঁর সামনে মাথা পেতে দেয়া, সেই কাজটি এইমাত্র করে আমি বসলাম। এখন আমার তাঁর দরবারে আলিশানে চাওয়ার পালা। তার কাছে আমার সব প্রয়োজন পেশ করার পালা। আমার চাওয়াকে তাঁর খুব পছন্দ। আমি যদি না চাই তিনি অখুশি হন, বেজার হন। এমন মালিক তো আর কারো নেই শুধু আপনার আমার আছে। তিনি সবার খালিক, মালিক। কিন্তু মুসলিম ছাড়া অন্য কেউ সর্বান্তকরণে তাকে খালিক মালিক ইলাহ মানে না। একমাত্র আমরা যারা মুসলিম তারাই কেবল আল্লাহকে রব মানি, ইলাহ মানি। মহান রব আমাদেরকে এই হেদায়েত দিয়েছেন তাই আমরা তার শোকরগুজার বান্দা হতে চাই।
আমি দুই সেজদার মাঝখানে বসে আছি। এখন আমার ক্ষমা চাওয়ার আর দোয়া করার সময়। এই সময় অন্য কোনো তাসবিহ তাহলিল নেই। এই সময় মাওলার কাছে কাকুতি মিনতি আরজি পেশ করার সময়। শেষ বিচারের দিন মানুষ যখন ভয়ার্ত দৃষ্টিতে অসহায় অবস্থায় নিজের রায় শোনার জন্য অপেক্ষায় থাকবে তখন প্রিয়নবী সা: আরশের নিচে সেজদায় পড়ে থাকবেন। উম্মতের নাজাতের জন্য সেজদায় মাওলার কাছে ফরিয়াদ করতে থাকবেন, কান্না করতে থাকবেন। মহান রব তাঁর বন্ধুকে ডেকে বললেন, ‘হে আমার হাবিব আপনি মাথা উঠান, আপনি চান মঞ্জুর করা হবে। সুপারিশ করুন গ্রহণ করা হবে।’ সেজদায় যেমন দোয়া কবুল হয়, তেমনি দুই সেজদার মধ্যবর্তী সময়ও দোয়া কবুলের সময়।
তাই রাসূল সা: সেজদার মধ্যখানে বসায় ছয়টি দোয়া করতেন। সেজদা যেমন দোয়া কবুলের জায়গা তেমনি দুই সেজদার মাঝখানের সময় দোয়া কবুলের সময়। আমি মহান রবকে একটি সেজদা দিতে পেরেছি। এটি আমার পরম তৃপ্তির, পরম পাওয়া। একটু অপেক্ষা করে আমি আবারো রবকে সেজদা করব। মাঝখানে আমি আমার সফলতার দোয়া করছি। কাকুতি মিনতি আরজি পেশ করছি। আমার প্রয়োজন পেশ করছি।
আমি আমার রবের কাছে দোয়া করছি আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়ারহামনি ওয়াহদিনি ওয়াজবুরনি ওয়া আফিনি ওয়ারজুকনি। হে আমার রব আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে দয়া করুন, আমাকে হেদায়েত দিন, আমাকে সমৃদ্ধ করুন, আমাকে সুস্বাস্থ্য দান করুন, আমাকে রিজিক দিন। আমি দেখি আমার এই ছয়টি দোয়াই আমার দুনিয়া ও আখিরাতের চূড়ান্ত সফলতা। এই ছয়টি দোয়া কবুল হলে আমার আর কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ এই ছয়টি দোয়ার মধ্যে আমার সব চাওয়া-পাওয়া, আমার সব প্রয়োজন, আমার শান্তি, আমার সফলতা নিহিত।
১. আমি যখন পড়ি আল্লাহুম্মাগফিরলি- হে আমার রব আমাকে ক্ষমা করে দিন। এই মাফ চাওয়ার সময় যদি আমার জীবনের পাপগুলোকে স্মরণ করতে থাকি আর মাওলার কাছে বলতে থাকি- হে রব আমাকে মাফ করে দিন। তিনি কি আমাকে মাফ না করে পারবেন। আমি বলছি হে রব আমাকে মাফ করে দেন। কিন্তু আমার মধ্যে পাপবোধ জাগ্রত হয় না। অন্যায়ের জন্য আমার চোখে লজ্জা ভেসে উঠে না। আমি লজ্জিত হই না। অনুতপ্ত হই না। মাওলার কাছে কাতর কণ্ঠে, মিনতিভরা সুরে, ভীতি-বিহ্বলতা নিয়ে, পাপের শাস্তির চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে মাওলার কাছে নিবেদন পেশ করি না, শুধু আল্লাহুম্মাগফিরলি পড়ে যাচ্ছি প্রতি দিন কমপক্ষে ৩২ বার। কিন্তু আমার মধ্যে কোনো সংশোধন দেখি না। নামাজের আগে যেমন পরে তেমন। এ বিষয়টি নিয়ে আমার ভাবার খুব বেশি প্রয়োজন। শয়তান মহান রবের আদেশ লঙ্ঘন করে অপরাধী।
আমি আর আমি মাওলার আদেশ পালন করে অমনোযোগী, ব্যর্থ। এর চেয়ে চরম লজ্জার আর কী থাকতে পারে।
২. আমি দ্বিতীয় দোয়া পড়ছি, ওয়ারহামনি- হে রব, হে মালিক আপনি আমাকে রহম করুন। আমার সব কিছু আপনার রহমতের চাদরে ঢেকে দিন। আমাকে আপনার মায়া আর দয়ায় আবৃত রাখুন। এই যে দোয়া হৃদয়ের কত গভীর থেকে আসা উচিত। মহান রবের দয়ার সব কিছু বেঁচে আছে। আমি মুমিন হিসেবে তাঁর দয়া-মায়া আরো অনেক অনেক বেশি চাই। যেহেতু আমি তাঁকে মানি, তাঁকে বিশ্বাস করি। তাঁর দয়া-মায়া পেতে চাই। তাঁর দয়ায় বেঁচে থাকতে চাই। মরণের পরও তাঁর দয়ার আমি কাঙ্গাল। মহান রবের দয়া পেয়ে গেলে আর কী চাই।
৩. আমি মহান রবের কাছে দোয়া করছি ওয়াহদিনি- হে রব আপনি আমাকে হেদায়েত দিন। সঠিক পথের দিশা দিন এবং সঠিক পথ কবুল করে তার ওপর অটল অবিচল থাকার তাওফিক দিন। মহান রব আমাকে তার বন্দেগি করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আমি তাঁর বন্দেগি করতে গিয়ে তাঁর কাছে আবারো হেদায়েতের তাওফিক কামনা করছি। এই হেদায়েতই প্রকৃতপক্ষে আসল সফলতা। আমি দুনিয়ার সব কিছু পেলাম। সব চেয়ে ক্ষমতাধর হলাম, অর্থ বিত্তশালী হলাম। বড় দাপটওয়ালা হলাম কিন্তু হেদায়েত পেলাম না। এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কিছুতেই নেই। আমি দুনিয়ার অনেক কিছুই পেলাম না কিন্তু হেদায়েত পেয়ে গেলাম। আমার চেয়ে বড় সাফল্য আর কেউ লাভ করতে পারেনি। আমি মহান রবের কাছে যখন এই দোয়াটি করি তখন আমার আবেগ অনুভূতি কেমন থাকে। একটু চিন্তা করা উচিত।
৪. হে মহান মালিক আপনি আমাকে সমৃদ্ধি দান করুন, জোর করে আমাকে সঠিক পথে রাখুন উত্তরোত্তর আমাকে উন্নতি সফলতা দান করুন। আমার অবস্থান যেন দিন দিন উন্নতির দিকে যেতে থাকে, আপনি এ ব্যবস্থা করুন। আমি যেন এই সমৃদ্ধির পথ থেকে ছিটকে না যাই, অমনোযোগী হয়ে না যাই। আপনার ক্ষমা দয়া হেদায়েত কোনো কিছুতে যেন আমার ঘাটতি কমতি দেখা না দেয়, আপনি আমাকে এই ব্যবস্থা দিন। আমাকে চাপ দিয়ে হলেও এই পথে অটল অবিচল রাখুন।
৫. হে রব আমাকে সুস্থতা দান করুন, আমার মধ্যে যে ঘাটতি কমতি আছে। আমার মধ্যে যে অসুস্থতা শারীরিক মানসিক দ্বীনি দুনিয়াবি যত পেরেশানি আর রোগ রয়েছে। সব কিছু থেকে আমাকে সুস্থতা দান করুন। আমার এই অসুস্থতা এই ঘাটতি পূরণ করে আমাকে সব কিছুতে পরিপূর্ণতা দান করুন। ভালো কোনো কিছুতে আমার মধ্যে কমতি বা ঘাটতি রাখবেন না। আমার মধ্যে অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি বিদ্যমান। সব কিছু থেকে আপনি আমাকে পরহেজ করুন।
৬. হে রব আমাকে রিজিক দান করুন, আমার খাওয়া দাওয়া, পোশাক পরিচ্ছদ, আমার টাকা পয়সা, আমার ধন-সম্পদ, শ্বাস-প্রশ্বাস, আমার আয়ু, আমার বিবেকবুদ্ধি সব কিছু আমার রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। যত কিছু থেকে আমি কল্যাণ পাই সবই আমার রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। হে রব আমার দুনিয়ার জীবনে যা কিছু প্রয়োজন সব কিছু আপনি আমার বাড়িয়ে দিন। আমার প্রয়োজন পূরণ করে দিন। আমার প্রয়োজনে কোনো কমতি রাখবেন না। আমাকে রিজিক দিন। আমার রিজিকে কোনো কমতি রাখবেন না। আমার প্রয়োজন, আমার পরিবারের প্রয়োজন, আমার আত্মীয়স্বজনদের প্রয়োজন, আমার প্রতিবেশীর প্রয়োজন সব পূরণ করে দিন।
হ্যাঁ, আমি একটু চিন্তা করে দেখি, একে তো আমি নামাজে, মহান রবের সামনে, দ্বিতীয়ত আমি মহান রবের সামনে মাথা নত করে লুটিয়ে পড়ে সেজদা দিয়ে মাঝখানে বসে এই ছয়টি দোয়া করছি। কত বরকতপূর্ণ সময়। কত বড় দোয়া কবুলের সময়। আসুন একটু চিন্তা করে করে নামাজের প্রত্যেকটি কাজ করি। তবে আমার নামাজ প্রাণবন্ত হবে, মহান প্রভুর পছন্দ হবে। কবুল হবে। আমি সফল হবো। সফলতা পাবো।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com