রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
খেলাধুলার মাধ্যমে মাদককে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে-মাফরুজা সুলতানা মাইলস্টোন কলেজে নবম শ্রেণির বালিকাদের অংশগ্রহণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ  ‘বিবেচনায় রয়েছে’: বদিউল আলম ১৬ বছর বঞ্চিতদের এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বইমেলয় স্টল বরাদ্দের দাবি ইসির অগাধ ক্ষমতা থাকলেও প্রয়োগে সমস্যা ছিল: বদিউল আলম আমাদের শিক্ষা কর্মসংস্থান খোঁজার মানুষ তৈরি করছে, যা ত্রুটিপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা সেন্টমার্টিন: ‘স্থানীয়দের জীবিকা বনাম পরিবেশ রক্ষা’ আ. লীগ-জাপা নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে কফিন মিছিল ১৫ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে সময় লাগবে: মির্জা ফখরুল

জালেম ও জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি

ইসমাঈল সিদ্দিকী:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৩

জুলুম একটি অভিশপ্ত ব্যাধি। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্রই এখন জুলুমের ছড়াছড়ি। কোথাও আগুন জ্বলছে, কোথাও ধোঁয়া উড়ছে, কোথাও স্বাধীনতাকামী নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষ নির্মমভাবে শহীদ হচ্ছে। সম্প্রতি ইসরাইল বাহিনীর পৈশাচিক নিপীড়ন তো জুলুমের সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। লাগাতার বিমান হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনকে তারা নরকে পরিণত করেছে। হাসপাতালে চিকিৎসারত বহু রোগীও তাদের বর্বর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। সভ্য পৃথিবী মানুষের এমন হিংস্র রূপ খুব কমই দেখেছে।
এই জুলুমের ইতিহাস বেশ পুরোনো। অতীতেও বহু জাতি জুলুমের শিকার হয়েছে, নিজেদের খোদা দাবি করার মতো সাহসও অনেক জালিম দেখিয়েছে। পৃথিবীর প্রাচীন শক্তিধর ছয়টি জাতি জুলুমের কারণে আল্লাহর আজাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তারা হলো : ১. কওমে নূহ; ২. আদ; ৩. সামুদ; ৪. কওমে লুত; ৫. মাদইয়ান ও ৬. কওমে ফেরাউন।
এসব সম্রাট, সাম্রাজ্য, জাতি ও নৃপতি পৃথিবীর জন্য ছিল বোঝা, মানবজাতির জন্য ছিল অভিশাপ এবং ক্ষুদ্র ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য ছিল আজাব। দুনিয়ার সামান্য ক্ষমতা পেয়ে যখন তারা জুলুম-নির্যাতনের সীমা ছাড়িয়ে গেছে, আল্লাহ তায়ালা তখন তাদের ধ্বংস করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে- ‘আমি ধ্বংস করেছি কত জনপদ, যেগুলোর বাসিন্দা ছিল জালেম, এসব জনপদ তাদের ঘরের ছাদসহ ধ্বংসমস্তূপে পরিণত হয়েছিল এবং কত কূপ পরিত্যক্ত হয়েছিল ও কত সুদৃঢ় প্রাসাদও।’ (সূরা হজ-৪৫)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- ‘কত বাগবাগিচা, কত ঝরনাধারা, কত ফল-ফসল এবং কত উন্নত স্থান তারা ছেড়ে গেছে এবং (ছেড়ে গেছে) কত নিয়ামত, যার ভোগে তারা মগ্ন ছিল। এভাবেই অন্য কোনো জাতিকে আমি এগুলোর উত্তরাধিকার দান করেছি, কিন্তু তাদের শোকে কাঁদেনি আসমান ও জমিন, আর তাদের দেয়া হয়নি অবকাশ।’ (সূরা দুখান : ২৫-২৮) কুরআন-হাদিসে জালেমদের বিভিন্নভাবে সতর্ক করা হয়েছে। কখনো মৃত্যুর ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়ে, কখনো পূর্ববর্তী জালেমদের ঘটনা বর্ণনা করে, আবার কখনো পরকালীন আজাবের মুখোমুখি হওয়ার কথা বলে। নিচে সংক্ষিপ্তাকারে জালেম ও জুলুমের পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
জালেমের ভয়াবহ মৃত্যু : আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর যদি তুমি দেখতে, যখন জালেমরা মৃত্যুকষ্টে থাকে, এমতাবস্থায় ফেরেশতারা তাদের হাত প্রসারিত করে আছে (তারা বলে), তোমাদের জান বের করো। আজ তোমাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে লাঞ্ছনার আজাব, কারণ তোমরা আল্লাহর ওপর অসত্য বলতে এবং তোমরা তার আয়াতগুলো সম্পর্কে অহঙ্কার করতে।’ (সূরা আনআম-৯৩)
জালেমরা কোথাও ছাড় পাবে না : রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘দু’টি পাপের শাস্তি আল্লাহ তায়ালা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো- জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি-২৫১১)
জালেমের কোনো সুপারিশকারী থাকবে না : আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তাদের (জালিমদের) সতর্ক করে দাও আসন্ন দিন (কিয়ামত) সম্পর্কে, যখন দুঃখকষ্টে তাদের প্রাণ কণ্ঠাগত হবে। জালিমদের জন্য কোনো অন্তরঙ্গ বন্ধু নেই এবং যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে এমন কোনো সুপারিশকারীও নেই।’ (সূরা মু’মিন-১৮) গলিত পুঁজ জালেমদের পানীয় : আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আমি জালেমদের জন্য আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি, যার বেষ্টনী ওদের ঘিরে রাখবে। আর যদি ওরা পানির জন্য ফরিয়াদ করে, তবে ওদের পুঁজের মতো পানি দেয়া হবে, যা ওদের চেহারা পুড়ে ফেলবে। কতই না নিকৃষ্ট পানীয় এবং কতই না নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল!’ (সূরা কাহফ-২৯)
জালেমের সহযোগিতাও হারাম : শুধু জুলুম বা অত্যাচার করাই হারাম নয়; বরং অন্যকে জুলুমে সহযোগিতা করা এবং জালেমের সাথে সুসম্পর্ক রাখা এবং ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না।’ (সূরা মায়িদা-২) জুলুমবাজদের আহাজারি : আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘সে দিন জুলুমবাজরা বলবে, হে আমাদের প্রভু! অল্প সময়ের জন্য আমাদের অবকাশ দিন, তাহলে আমরা আপনার ডাকে সাড়া দেবো (অন্যের ওপর জুলুম করব না) এবং রাসূলদের অনুসরণ করব। তোমরা কি এর আগে কসম খেয়ে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে, তোমরা তো তাদের বাসস্থানেই বাস করছ এবং সেসব জালেমের সাথে আমি কেমন আচরণ করেছি, তা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। উপরন্তু আমি তোমাদের জন্য বহু উদাহরণ দিয়েছি।’ (সূরা ইবরাহিম : ৪২-৪৫) একটি সুন্দর সুশৃঙ্খল সমাজে অভিশাপের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়ার অন্যতম উপলক্ষ হলো- সমাজজুড়ে নানামাত্রিক জুলুম-অপরাধের অনুশীলন। এ জন্য জুলুমকে রুখতে কুরআন ও হাদিসে জুলুমের পরিণতি সম্পর্কে নানাভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
জুলুমের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অপরাধের দরজা বন্ধ হয়ে যাক। জুলুমে যুক্ত মানুষরা হুঁশ ফিরে পাক আর জুলুমের শিকার হওয়া থেকে মজলুমরা লাভ করুক সুরক্ষা এটিই আমাদের একান্ত কামনা। শিক্ষার্থী : উচ্চতর গবেষণা বিভাগ, শায়েখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com