রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতি আস্থা রাখুন। আসুন, নির্বাচন করুন। নিঃসন্দেহে আপনারা একটা ভালো সুষ্ঠু, সুন্দর, নির্বাচন করার সুযোগ পাবেন। ভোটাররা এসে স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তাদের যাকে ইচ্ছা তাকে মনোনীত করতে পারবেন। নিশ্চয়ই আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবো।’
গতকাল সোমবার (২০ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। বিএনপিসহ অনাগ্রহী দলগুলো এখনও যদি নির্বাচনে আসতে চায়, তাহলে ইসি তাদের জন্য স্পেস তৈরি করে দেবে বলেও জানান এই কমিশনার। তিনি বলেন, ‘যারা ভোটে আসতে চাইছেন না, তারা যদি আসার ইচ্ছা ইসিতে ফরমালি জানান; আলোচনা করে স্পেস তৈরি করা হবে।’
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমরা আলোচনা করবো, সিদ্ধান্ত নেবো। উনারা সিদ্ধান্ত নিলে, (নির্বাচনে) আসতে চাইলে অবশ্যই আমরা ওয়েলকাম করবো। কখনোই চাইবো না যে… উনারা আসতে চেয়েছেন, আর আমরা ফিরিয়ে দেবো; এটা হবে না।’ আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত, তা বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। তার তিন সপ্তাহ পর হবে ভোটগ্রহণ। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হবে। সেক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমার জন্য ১৪ দিন সময় দেওয়া হয়েছে এবং প্রচারের জন্য ১৯ দিন সময় রয়েছে। ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ করতে হয়। অর্থাৎ, ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ থাকবে। অন্যদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে সারা দেশে হরতাল কর্মসূচি পালন করছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।
ভোটে ফিরতে চাইলে ঘোষিত তফসিলে বিএনপির জন্য কী সুবিধা থাকবে— এই প্রশ্নের জবাবে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘দেখেন, তারা যদি ফিরতে চান, আমার জানামতে আগেরবারও উনারা একটু পরেই এসেছিলেন এবং সুযোগটা পেয়েছিলেন। উনারা যদি ফিরতে চান, কীভাবে কী করা যাবে, নিশ্চয়ই আমরা আলোচনা করবো, সিদ্ধান্ত নেবো। উনারা সিদ্ধান্ত নিলে, (নির্বাচনে) আসতে চাইলে অবশ্যই আমরা ওয়েলকাম করবো।’ এখনই বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘উনারা যদি আসেন, আমরা কমিশনাররা বসবো, আইন-কানুন দেখবো। তারপর যেটা সিদ্ধান্ত হয়। অগ্রিম কিছু বলতে পারবো না। এলে তো বিবেচনা করবোই। অবশ্যই করবো। আমরা তো চাই সব দল এসে একটা সুন্দর নির্বাচন হোক।’
২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে রাশেদা সুলতানা জানান, ‘ওই নির্বাচনে কিন্তু উনাদের জন্য একটু স্পেস তৈরি করা হয়েছিল। যেভাবে আইনে আছে, সেভাবেই করা হবে। তবে আমি ডিটেইল আর কিছু বলবো না। …উনারা আসলে আমরা ওয়েলকাম করবো। এটার জন্য উনাদের জন্য আইন অনুযায়ী যেভাবে পথ সৃষ্টি করতে হবে সেভাবে করবো। কিন্তু আগেই বলবো না।‘
আয়কর রিটার্ন দাখিল ও নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন একইদিন হওয়ায় পুনঃতফসিলের দাবি জানিয়েছে জাতীয় পার্টি। এ প্রসঙ্গে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘এই বিষয়টাতে আমরা কিছুই বলবো না। অগ্রিম বলার সময় এখনও আসেনি। যখন আসবে, যেটা হবে সেটাই বলবো। পরিস্থিতি যখন আসবে, পরিস্থিতি দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। অগ্রিম এ বিষয়ে কোনও কথাই বলবো না, বলা উচিত না।’ তিনি বলেন, ‘যদি সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হয়, বাড়ানো হবে। যদি এমনিই হয়ে যায়, তাহলে হবে। কোনও অসুবিধা নাই। যদি এই তফিসলের মধ্যেই আসেন, তাহলে তো তফসিলে হাত দেওয়ার দরকার নেই।’ এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নিশ্চয়ই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের এখনও স্পেস আছে। মাঠের রাজনীতিতে যখন বিভাজন তৈরি হয়েছে, তখন পরিবেশ শান্ত নাকি অশান্ত; তা আমার বলতে হবে না। আপনারাই দেখতে পাচ্ছেন, জনগণও দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু অশান্ত আছে, তাই বলে শান্ত হবে না এমন কোনও কথা নেই। যে কোনও মুহূর্তে পরিবেশ শান্ত হতে পারে।’