চলনবিলে পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় সময় রাতভর অতিথি পাখিসহ বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য পাখি অবাধে নিধন করে চলেছেন শিকারিরা। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের ২০১২ যথাযথ প্রয়োগ ও সচেতনতার অভাবে শিকারিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায় বছরের এই সময়ে। বিশেষ করে, শীতের শরুতে। সরেজমিনে দেখা গেছে, চলনবিল অধ্যূষিত তাড়াশ উপজেলার আসান বাড়ী, বিনসাড়া, কাজিপুর ও তাড়াশ সদর গ্রামের ১৮ থেকে ২০ জন শিকারি শতাধিক পাখি শিকার করেছেন। চলনবিলের কুন্দইল এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠের জমিতে কারেন্ট জাল ও ফাঁদ পেতে পাখিগুলো শিকার করেছেন বলে জানিয়েছেন পাখি শিকারিরা। বস্তুত তাড়াশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শত শত পাখি শিকারি রাতে পাখি নিধন করতে বেড়িয়ে পড়েন। শিকারিরা বলেন, সন্ধ্যার পরে বিস্তীর্ণ মাঠের পতিত জমির মধ্যে পাখি ধরার জন্য কারেন্ট জাল, বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ ও বড়শি পেতে রাখেন। রাতে মাঠেই শুয়ে থাকেন। ভোর বেলায় পাখি ছাড়িয়ে জাল ও ফাঁদ নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। স্থানীয়দের কাছে পাখির গোশ্তের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। লোকজন আগে থেকেই পাখি শিকারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। বিশেষ করে, মোবইল ফোনে। অনেকে অগ্রীম টাকা দিয়ে রাখেন। পরে তাদের বাড়িতে গোপনে পাখি পৌছে দেন শিকারিরা। এদিকে তাড়াশ ডিগ্রি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মর্জিনা ইসলাম বলেন, চলনবিল থেকে পানি নামার সময় ফাঁকা মাঠে ও জলাশয়ে পুঁটি, দারকিনা, মলা, খলসেসহ প্রচুর পরিমাণে ছোট মাছ ও পোকা মাকড় পাওয়া যায়। খাবারের লোভে ও অপেক্ষাকৃত শীত থেকে বাঁচতে নানা প্রজাতির পাখি চলনবিলে আশ্রয় নেয়। এছাড়া বেরো মৌসুমেও পাখির দেখা মেলে চলনবিলে। তখন পোকা-মাকড় খেতে আসে। বালিহাঁস, সামুকখোল, ডাহুক, রাত চোড়া, কাঁদা খোঁচা ও বিভিন্ন ধরনের বক পাখি অন্যতম। স্থানীয় স্বাধীন জীবন নামে একটি জীব বৈচিত্র প্রকৃতি সংরক্ষণ কাজের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক নাছিম বলেন, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট পাখিদের অবাধ বিচরণের জন্য সারাদেশে যথারীতি ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছেন। এরপরও নির্মমভাবে পাখি শিকার করা হচ্ছে! জানা গেছে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী পাখি শিকারিদের জন্য এক বছর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। তাছাড়া একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত করাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটির তাড়াশ উপজেলার আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রাজু বলেন, পাখি বাঁচাতে জনসচেতনতাই মুখ্য।
এ জন্য স্থানীয় প্রসাশন কর্তৃক মাইকিং করা যেতে পারে। পাখি নিধন বন্ধে স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করা গেলে আরো বেশী ফলপ্রসূ হবে। রাজশাহী বিভাগীয় বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, সিরাজগঞ্জসহ ১৬ জেলা নিয়ে তাদের কাজ। এসব জেলায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার কাজ করা হয়। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী বলেন, চলনবিল অঞ্চলের বেশ কিছু সংখ্যক মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফলে পাখি শিকার আগের তুলনায় কমেছে। প্রয়োজনে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানা গেলে পাখি শিকারিদের হাতেনাতে ধরে আইন অনুযায়ী সাজা দেওয়া হবে।