সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৩ অপরাহ্ন

ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী

বাসস :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৩

রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ২৯ নভেম্বর ফিলিস্তিনের জনগণ ও সরকারের প্রতি দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থন ও সংহতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ফিলিস্তিনিদের সাথে আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণীতে ফিলিস্তিনি জনগণের মর্যাদাপূর্ণ জীবন সার্বভৌম মাতৃভূমি নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মানবিক সংস্থাগুলোকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বার্তায় বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সংহতি দিবসের গৌরবময় উপলক্ষ্যে আমি ফিলিস্তিনি জনগণ ও সরকারের প্রতি দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থন ও সংহতি পুনর্ব্যক্ত করছি।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে সবসময় স্বাধীনতা, শান্তি এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বড় অবদানকারী দেশ।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, যুদ্ধ শান্তি আনতে পারে না বরং যুদ্ধ ধ্বংস এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। তিনি বলেন, একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তাদের অবিচ্ছেদ্য অধিকারের প্রতি বাংলাদেশের অটুট সমর্থন রয়েছে।
বাংলাদেশ কখনোই বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘন সমর্থন করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্দেশিত এবং আমাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত নীতি অনুযায়ী আমরা সবসময় ধর্মনিরপেক্ষতা ও শান্তির আদর্শ অনুসরণ করি।’ তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি ভাই-বোনেরা, যারা তাদের বৈধতা থেকে ছাপ্পান্ন বছরেরও বেশি সময় ধরে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রতি সংহতির প্রকাশে নিবেদিত থাকবে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ গাজায় আবাসিক এলাকা ও হাসপাতালগুলোতে অব্যাহত নৃশংস বোমা হামলার তীব্র নিন্দা জানায়, এতে নারী, শিশু এবং বৃদ্ধসহ হাজার হাজার ফিলিস্তিনি সাধারণ নাগরিক নিহত ও আহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে এই নৃশংসতা মানবাধিকারের লংঘন। তিনি বলেন, আমরা গাজা ও ফিলিস্তিনে সামগ্রিকভাবে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন ‘আমরা আলোচনার মাধ্যমে প্রতিটি সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশ সর্বদা ফিলিস্তিনের জনগণ ও সরকারের পাশে আছে।’ রাষ্ট্রপতি মানবতা, ন্যায় ও ন্যায্যতার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য কাজ করি যাতে তাদের নিরাপদ, নির্ভীক এবং তাদের সার্বভৌম মাতৃভূমিতে মর্যাদাপূর্ণ জীবন পায়।’
ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে যোগ দিয়ে ১৯৬৭-এর পূর্ববর্তী সীমানা এবং পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানীসহ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান করার ভিত্তিতে ফিলিস্তিনি জনগণের আত্ম নিয়ন্ত্রণ অধিকার ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার নিরঙ্কুশ অধিকারের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সবসময় সারা বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ বা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নিপীড়িতদের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে সমর্থন করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের এ দৃঢ় অঙ্গীকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দিকনির্দেশনায় পরিচালিত এবং এ নীতি আমাদের জাতীয় সংবিধানে নিহিত রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের ফিলিস্তিনি ভাই ও বোনদের প্রতি তাদের সংহতি প্রকাশে অবিচল থাকবে যারা ছাপ্পান্ন বছরেরও বেশি সময় ধরে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ গাজায় নারী ও শিশুসহ নিরীহ বেসামরিক মানুষদের নির্মম হত্যাকা-ের এবং শরণার্থী শিবির, স্কুল, হাসপাতাল এবং ধর্মীয় স্থানসহ সুরক্ষিত স্থাপনার ওপর নির্বিচারে বোমা হামলা তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গাজায় বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্য করে ইসরায়েল বর্তমানে যে যুদ্ধ চালিয়েছে তা হচ্ছে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর সম্মিলিত শাস্তির সমতুল্য এবং ইসরালে কর্তৃক মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ইসরায়েলের বর্বরতা বন্ধের এবং সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির দাবি জানাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছে যে, ইসরায়েল অব্যাহতভাবে মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইন উপেক্ষা ও লঙ্ঘন করা তা সত্ত্বেও দায়মুক্তি ভোগ করে চলেছে।
তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, ফিলিস্তিনের জনগণ ন্যায়বিচার ও প্রতিকার পাওয়ার দাবি রাখে যা শুধুমাত্র অব্যাহত দখলদারিত্বের মধ্যে বসবাসরত ফিলিস্তিনের জনগণের আত্ম নিয়ন্ত্রণ অধিকার সহ একটি ন্যায্য সমাধান নিশ্চিত করার মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা আরো বিশ্বাস করি যে, জাতিসংঘের প্রাসঙ্গিক অসংখ্য প্রস্তাবের বাস্তবায়ন, চার জাতি প্রস্তাবিত রোড ম্যাপ, মাদ্রিদ শান্তি সম্মেলনের শর্তাবলী, আরব পিস ইনিশিয়েটিভ এবং জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্রের প্রচেষ্টা মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করতে এবং ফিলিস্তিন সমস্যার একটি স্থায়ী শান্তিপূর্ণ ও ন্যায্য সমাধান লাভের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী একটি সার্বভৌম স্বদেশে, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের জন্য ফিলিস্তিনি জনগণের আকাঙ্খা ও বৈধ অধিকার পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা জোরদার এবং কার্যকর ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহনের লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
মানুষের কল্যাণে ডিএসসিএসসি’র প্রশিক্ষণার্থীদের অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগানোর আহ্বান রাষ্ট্রপতির: রাষ্ট্রপতি মো.সাহাবুদ্দিন মানুষের কল্যাণে অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগাতে ‘ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কোর্স (ডিএসসিএসসি) ২০২৩’-এর প্রশিক্ষণার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসে শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ডিএসসিএসসি কোর্স-২০২৩ এর প্রশিক্ষণার্থীদের এক অনুষ্ঠানে ভাষণকালে এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জগুলো গতিশীল ও বহুমুখী, এবং প্রচলিত হুমকি থেকে শুরু করে অপ্রচলিত রূপ পর্যন্ত। এখানে নেয়া এই কঠোর প্রশিক্ষণ আপনাদেরকে নানা জটিল চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং জ্ঞানার্জনের সুযোগ করে দিয়েছে।’ রাষ্ট্রপতি প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, জনগণের কল্যাণে সরকারের গৃহীত কর্মসূচি বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া একজন জনসেবক হিসেবে আপনার সর্বোচ্চ কর্তব্য। প্রশিক্ষণার্থীরা নিজ নিজ দেশের নিয়ম-কানুন ও সংবিধান মেনে সম্মান, সাহসিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবেন বলে তিনি আশা করেন। মো. সাহাবুদ্দিন ডিএসসিএসসি কোর্স সফলভাবে সমাপ্ত করার জন্য স্নাতকদের অভিনন্দন জানান। পরে স্নাতক কর্মকর্তাদের নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম এবং মেধাকে স্বীকৃতি হিসেবে সনদ প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ডিএসসিএসসি কমান্ড্যান্ট এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্টদেরকে অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে সফলভাবে প্রোগ্রামটি সম্পন্ন করার জন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন,ডিএসসিএসসি যোগ্য নেতৃত্ব প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এবং তারা নিজ নিজ দেশের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে অসাধারণ অবদান রাখতে পারে। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ সরকার দেশের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে শক্তিশালী করতে ক্রমাগত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের জন্য ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করেছে। ডিএসসিএসসি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রাচীনতম ট্রাই-সার্ভিস সামরিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ডিএসসিএসসি অসাধারণভাবে বিকশিত হয়েছে, যা বিশ্বের সশস্ত্র বাহিনীতে এই কলেজের স্নাতকদের বর্ধিত চাহিদার পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ৬২৩৬ জন কর্মকর্তা এই মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান থেকে সফলভাবে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। এ বছর ২৪টি বন্ধুপ্রতীম দেশের ৪৯ জন বিদেশী কর্মকর্তাসহ মোট ২৫৭ জন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং স্বাধীনতায় সকলের সুখী-সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করার স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে বলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধীরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদের হত্যার মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। তারপর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আমাদের অর্থনীতিতে অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. ফয়জুর রহমান। অনুষ্ঠানে তিন বাহিনীর প্রধানগণ এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন লবিতে দু’টি ফটো সেশনেও অংশ নেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com