‘বিএনপি মার্চের দিকে দেশে দুর্ভিক্ষ ঘটাবে’- নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে প্রধানমন্ত্রী আগেভাগেই এমন বক্তব্য দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্বে অসহায় হয়ে পড়েছেন। নিজের অপব্যবস্থাপনা আর ব্যর্থতা ঢাকতে বিএনপি ও বিদেশিদের উপর অগ্রিম দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যেই শেখ হাসিনার অপশাসনে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, দেশটাকে লুটেপুটে খেয়ে দুর্ভিক্ষের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অনাহার, ধ্বংস আর তাদের পাপের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে এই মুহূর্তে এক ব্যাপক গণ-আন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে। শনিবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, সরকার দেশের সমস্ত সম্পদ লুটপাট করে রাজকোষ শেষ করেছে। আমদানি করার মতো ডলার নাই। এলসি বন্ধ। সব টাকা বিদেশে পাচার করেছে।
১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণের পাহাড় আর ১৫ বিলিয়ন ডলারের তলানিতে রিজার্ভ নামিয়ে এখন কমেডি করছেন রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, তিন মাস চলার মতো রিজার্ভ অবশিষ্ট আছে। তারপর দেউলিয়া ঘোষণা করা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। সারাদেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। আসলে আওয়ামী লীগ আর দুর্ভিক্ষ একে অপরের পরিপূরক। আওয়ামী লীগ মানেই দুর্ভিক্ষ আর দুর্নীতি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশে দুর্ভিক্ষ আনে। ৭৪’ সালে যেভাবে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগের দুর্নীতি লুটপাট টাকাপাচার অবিচার অনিয়মের কারণে দেশে এখন আবারো সেই দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি। সব রকমের নৈতিক অনাচার সৃষ্টিকারী দল আওয়ামী লীগ।
সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করে রিজভী বলেন, আন্তর্জাতিক তদন্ত এবং সমালোচনা সত্ত্বেও, সরকার ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী দেড় দশক ধরে এই পর্যন্ত বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৬৪৭ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৮৪ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে, ৩৯৯ জনকে জীবিত ফেরত পাওয়া গেছে অথবা গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, ৩ জনের বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোন তথ্য পাওয়া যায় নাই এবং ১৬১ জনের এখনো পর্যন্ত কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে এম ইলিয়াস আলী ও সাইফুল ইসলাম হিরুর মতো সংসদ সদস্য, কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, হুমায়ূন পারভেজ, জাকির, সুমন, দিনার, জুনেদসহ অসংখ্য বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকে অদৃশ্য করা হয়েছে। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৬৩ দিন গুম করে চোখ বেঁধে ভারতে ফেলে আসে।
তিনি আরও বলেন, গুম, খুন, ক্রসফায়ারের শিকার হওয়াদের স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাকের উদ্যোগে সকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়ে স্বজনরা তাদের আকুতি ও মর্মান্তু পরিস্থিতির কথা বলতে চেয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী গুমপন্থী পুলিশ সেখানে দাঁড়াতে দেয়নি। টেনেহিঁচড়ে বের করে দিয়েছে। সরকার তাদের কথা বলতে দিতেও ভয় পাচ্ছে। আজকে গুম খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিরা তাদের কথা বলতে পারে না। এ ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতি উত্তরণে সকল রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংস্থা, সুশীল সমাজসহ বিবেকবান সকল মানুষকে সোচ্চার হয়ে এই মানবাধিকার লুটের সরকারের পতন ঘটানোর আহবান জানাচ্ছি। সারা দেশে গ্রেপ্তারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১৭৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা দায়ের হয়েছে ৫টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৫২৯ জনকে।