সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৩৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
পুঁইশাক চাষে সফল সুফিয়া, আগ্রহী হচ্ছে অন্য কৃষকরাও অতিরিক্ত টোল আদায় করলেই ইজারা বাতিল-ভোলায় উপদেষ্টা সাখাওয়াত কৃতি ফিরোজীকে বাঁচাতে সাভারে চ্যারিটি কনসার্ট আওয়ামী লীগের সাথে দ্বন্দ্ব নাই, যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার চাই-আব্দুল আউয়াল মিন্টু জলঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের গণসমাবেশ সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপি লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শুরু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আগৈলঝাড়া বিএনপি’র উদ্যোগে আনন্দ র‌্যালি পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্তুদের অবস্থান কর্মসূচি জামালপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির আয়োজনে দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ ভুট্টা চাষে দেশের শীর্ষে চুয়াডাঙ্গা: ৫৯,৬৫৬ হেক্টর জমিতে আবাদ

আল্লাহর সীমাহীন ক্ষমতা বা কুদরত

মাওলানা এম এ হালিম গজনবী এফসিএ
  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

আমাদের দুর্বলতা বা নির্বুদ্ধিতার কারণে আমরা আল্লাহকে ভয় করি না, এমনকি যথাযথ ভয় করার আল্লাহর আদেশ প্রদান সত্ত্বেও। ফলে আমরা ব্যর্থ, বিশেষ করে পরলৌকিক জীবনের দিক থেকে। কারণ আমরা আল্লাহর আদেশ ও নিষেধাজ্ঞা পালন করি না আদৌ অথবা অনেকাংশে। ফলে আমরা সঠিক পথ বা সিরাতুল মুসতাকিম হারা বা হেদায়াতপ্রাপ্ত নই, যা সীমাহীন পরিতাপের বিষয়। আমাদের অধিকাংশেরই জানা নেই আল্লাহর কুরআনে উল্লিখিত সর্বপ্রথম দোয়াটি যা মহাসফলতার চাবিকাঠি, তাই তা মানাও হচ্ছে না, ফলে আমরা হতে পারি মহাব্যর্থ বিশেষ করে শেষ বিচারের দিনে। আলোচ্য দোয়াটির বাংলা উচ্চারণ “ইহদিনাস-সিরাত্বাল মুসতাকীম। সিরাত্বাল-লাজিনা আন-আম‘তা আলাইহিম। গাইরিল মাঘদুবি আলাইহীম ওলাদ-দোয়াল্লীন”। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুণ (তার প্রতি অটুট থাকার তাওফিক দান করুণ), তাদের পথ যাদের ওপর আপনি অনুগ্রহ করেছেন বা যাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন। (অবশ্য) তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি আপনার গজব বর্ষিত হয়েছে, এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।’
পরম করুণাময় আল্লাহ যার/যাদের এ দোয়াটি কবুল করবেন সে/তারা জান্নাতবাসী ইনশা আল্লাহ কারণ সে/তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত। হেদায়াত মহামূল্যবান; যার প্রমাণ পবিত্র কুরআনের শুরুতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “জালিকাল কিতাবু লা-রাইবা ফি-হি হুদাল্লীল মুত্তাকীন” অর্থ: ‘এটা এমন একটি কিতাব যার মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই, আল্লাহভীরুদের জন্য সঠিক পথপ্রদর্শক বা হেদায়াতস্বরূপ’ সূরা বাকারা, আয়াত: ০২।
আমরা মানুষ সৃষ্টির সেরা। পৃথিবীর সব মানুষ স্রষ্টাকে স্বীকার করে তবে ব্যতিক্রম নাস্তিকেরা যা সংখ্যায় নগণ্য। কিন্তু স্রষ্টার বিধান বা স্বীকৃত ধর্ম নিয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ বিরাজমান। ফলে সর্বশেষ ও আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় একমাত্র ধর্ম ‘ইসলাম’। বর্তমান বিশ্বে বিদ্যমান আছে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ধর্ম যথা- খ্রিষ্টান ধর্ম, ইহুদি ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম।
যা হোক স্রষ্টাকে আমরা স্বীকার করি, বিশ্বাস করি কিন্তু কত ভাগ লোক স্রষ্টাকে চেনে, জানে, এবং তার অত্যাশ্চার্য সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করে, যথাযথভাবে মনে প্রানে ধারণ করি আল্লাহকে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ কল্যাণের স্বার্থে? প্রাথমিক পর্যায়ে মহান আল্লাহর কিছু পরিচিতি উল্লেখ করছি, সব প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই জন্য, অন্য কারো জন্য নয়। তিনি কমপক্ষে নিরানব্বইটি নামের অধিকারী, রহমান (দয়ালু), রাহীম (দয়াবান), মালিক (অধিকর্তা), খালিক (স্রষ্টা), হালিম (সর্বোচ্চ ধৈর্যশীল), আলিমুন (সর্বজ্ঞাত), বাছিরুন (সর্বদ্রষ্টা), সামিউন (সর্বশ্রোতা), আলিমুম বিজাতিস-সুদুর (আল্লাহ অন্তর্যামি)।
আমাদের দোয়া বা প্রার্থনা শ্রবণকারী ও সাড়াদানকারী মহাবিশ্বের স্রষ্টা ও প্রতিপালক; মানুষ, জিন, ফেরেশতা ও অন্যান্য প্রাণিকুলের স্রষ্টা ও প্রতিপালক। এ বিশ্বের সব কিছুর সৃষ্টি মানবজাতির ব্যবহার বা কল্যাণের জন্য। সব জীবের জীবন ও মৃত্যুদাতা, জান্নাত ও জাহান্নামের স্রষ্টা, মানবজাতির জন্য অফুরন্ত নেয়ামতদাতা। তিনি রাজাধিরাজ যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নেন, যা করতে ইচ্ছা করেন তাই করতে পারেন তৎক্ষণাৎ বা যথাসময়ে। মানবজাতি আল্লাহর অবাধ্যতার কারণে আজাব-গজবের শিকার হচ্ছে শাস্তিদাতা আল্লাহর। তার না আছে তন্দ্রা, না আছে নিন্দ্রা, তিনি চিরঞ্জীব এবং চিরস্থায়ী, তিনি মহা বিশ্বের একচ্ছত্র অধিপতি। তিনি এক এবং অদ্বিতীয়, তার কোনো অংশীদার নেই, তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং জন্মপ্রাপ্তও হননি। তার সমকক্ষ কেউ নেই এবং হবেও না, তিনি ধ্বংস করবেন এই পৃথিবী এবং দাঁড় করাবেন এ বিশ্বের সর্বকালের সব মানুষকে হাশর বা মহা-সমাবেশের ময়দানে এবং নিবেন হিসাব-নিকাশ। সবাইকে অতিক্রম করতে হবে পুলসিরাত তারপর ওজন করাবেন কর্মকা- (পাপ-পুণ্য)। অবশেষে আল্লাহ পাঠাবেন মানবজাতিকে জান্নাত অথবা জাহান্নামে। তিনি হবেন নিখুঁত নির্ভুল এবং নিরপেক্ষ মহাবিচারক। অপরাধী মুমিনদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন, যাকে ইচ্ছা শান্তি দেবেন।
মহান আল্লাহ তায়ালার শক্তি সীমাহীন। প্রমাণ আল্লাহর বাণী “ইন্নাল্লাহা আ‘লা কুল্লি শাইয়িন কাদীর” অর্থ: ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ যেকোনো বিষয়ে সব কিছুর উপর সর্বোচ্চ সীমাহীন শক্তিধর বা ক্ষমতার অধিকারী’ সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২৫৯।
তিনি যা করতে বা ঘটাতে ইচ্ছা করেন হোক তা কল্যাণকর বা অকল্যাণকর তাই তিনি করতে পারেন তৎক্ষণাৎ বা যথাসময়ে। উদাহরণস্বরূপ মহাবিশ্ব, অসীম শূন্য, চন্দ্র-সূর্য, তারকারাজি, ব্লাক হোল, মিল্কিওয়ে, ফেরেশতাগণ, জিন জাতি, পশু-পাখি ইত্যাদির সৃষ্টি। বিশ্বমানবের অবাধ্যতার কারণে আজাব-গজব পাঠানো এবং ধ্বংসলীলা ঘটানো যা কুরআনে তিনি উল্লেখ করেছেন। যথা তিনি ধ্বংস করেছেন অবাধ্যতার কারণে কাওমে আ‘দ, কাওমে নূহ, কাওমে সামুদ, কাওমে লূত ইত্যাদি গোত্রকে এবং নমরূদ, ফোরাউন, কারুন, হামান, ইয়েমেন-এর বাদশা আবরাহা এবং তার হস্তিবাহিনী সব সৈন্যসহ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, কোভিড-১৯, এইডস ইত্যাদি। আল্লাহর সীমাহীন ক্ষমতার সাক্ষ্য-প্রমাণ আমাদের জন্য স্মরণীয় ও যথেষ্ট শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমরা সৃষ্টির সেরা মানুষ এসব শিক্ষামূলক বাস্তব দৃষ্টান্ত এবং নিদর্শন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি না, যা মহাপরিতাপের বিষয়। আল-কুরআন মহান আল্লাহর বাণী এবং মুহাম্মদ সা: আল্লাহর রাসূল, যার মহাসফলতা বিশ্বব্যাপী যা আল্লাহর সীমাহীন শক্তি, ক্ষমতা, জ্ঞান ইত্যাদির স্বাক্ষর কিন্তু আমরা নির্বোধ মানুষেরা উদাসীন হয়ে আছি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর আলোচ্য বাণীসমূহ থেকে। ফলে বিশ্ববাসীকে গ্রাস করে রেখেছে কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণে, শান্তির পরিবর্তে অশান্তি, সুখের পরিবর্তে অসুখ ইত্যাদি। পক্ষান্তরে আমরা সৃষ্টির সেরা মানুষ যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মান্য এবং তাদের দেয়া বিধানসমূহকে যথাযথভাবে পালন করতাম তাহলে সাক্ষাৎ লাভ করতাম ইহকালে বিশ্ব কল্যাণ ও বিশ্ব শান্তি বিশ্ব অকল্যাণ ও বিশ্ব অশান্তির পরিবর্তে। মধ্যে নিহিত আছে নিঃসন্দেহে বিশ্ব কল্যাণ ও শান্তি অন্যথা বিশ্ব অকল্যাণ ও অশান্তি। অধুনায় সংঘটিত প্রায় ২ বছর ব্যাপী কোভিড-১৯, যদ্দারা বিশ্ব কম্পন হলো আল্লাহর অভূতপূর্ব আজাব-গজবে কিন্তু আমরা মানুষেরা দুর্ভাগ্যবশত তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করলাম না বা করতে পারলাম না অর্থাৎ আল্লাহকে চিনলাম না, আল্লাহ মুখো হলাম না বরং স্ব স্ব ভ্রান্ত ধারণা, ভ্রান্ত চিন্তা, ভ্রান্ত কর্মকা-ে আকণ্ঠ নিমজ্জিতই রয়ে গেলাম, যা আমরা জানতে বুঝতে এবং ধরতে পারব শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর মুহূর্তেই কিন্তু সে বুঝ নিষ্ফল। পরকালের সম্পদ (সৎকাজ) স য় জীবদ্দশায়ই বিশেষ করে যৌবনকালে করতে হবে। তাই ধর্মীয় জ্ঞানে জ্ঞানীরা তাদের জ্ঞানের আলো দ্বারা জীবনের স্বল্পায়ুটাকে সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করেন সব সৎকাজ সম্পাদন করে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। ফলে পরিণামে হয়ে যাবেন ইনশা আল্লাহ মহাসফল অর্থাৎ জান্নাতবাসী। পক্ষান্তরে যাদের প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব বা আদৌ নেই তাদের পক্ষে প্রয়োজনীয় সৎকাজ করা সম্পন্ন করা সম্ভব না-ও হতে পারে ফলে পরিণামে ব্যর্থতা বা জাহান্নাম বাস। প্রমাণ আল্লাহর বাণী- অর্থ: ‘যাদের ধর্মীয় জ্ঞান আছে আর যাদের ধর্মীয় জ্ঞান নেই তারা কি সমকক্ষ হতে পারে’ সূরা যুমার, আয়াত-৩৯? আল্লাহর এ প্রশ্নের উত্তরে আমরা নিশ্চয়ই জবাব দেবো কিছুতেই উভয় দল সমান হতে পারে না বরং তাদের মাঝে বিশাল ব্যবধান। ধর্মীয় জ্ঞানে জ্ঞানীরা আলোপ্রাপ্ত পক্ষান্তরে ধর্মীয় জ্ঞানে জ্ঞানহীনরা অন্ধকারাচ্ছন্ন।
হে সীমাহীন শক্তিধর আল্লাহ দয়া করে আপনার গোলামদেরকে তাওফিক দিন ধর্মীয় জ্ঞানে জ্ঞানী হতে এবং যথাযথভাবে আপনার বিধান পালন করতে শুধু আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। আমীন। লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com