বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, চলমান আন্দোলন রাজপথে রাজনৈতিক, নৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে অবৈধ ও নৈশ্যভোটের সরকার আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে প্রহসনের বিচার এবং ফরমায়েসী রায়ের মাধ্যমে সাজা দিয়ে বিরোধী আন্দোলন দমন করতে চায়। কিন্তু জনগণ এসব রায় মানে না। সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সাংশনের কারণে হত্যার লাইসেন্স আর পাচ্ছে না। ফলে তারা জনগণে যৌক্তিক আন্দোলন দমন ও বিভ্রান্ত করার জন্য গুম, খুন, গুপ্তহত্যাসহ আদালতের অপব্যবহার শুরু করেছে। কিন্তু সরকারের মনে রাখা উচিত জনতার এই উত্তাল তরঙ্গ ও দুর্বার আন্দোলন পুলিশ দিয়ে বন্ধ করা যাবে না। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত নি¤œ আদালতে প্রহসনের বিচার, ফরমায়েসী রায় এবং গুম ও গুপ্ত হত্যার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন।
বিক্ষোভ মিছিলটি রামপুরা বাজার থেকে শুরু হয়ে মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে এ সময় কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফজুর রহমান ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জিয়াউল হাসান, জামাল উদ্দীন, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ ও মু. আতাউর রহমান সরকার, ছাত্রনেতা সালাহ উদ্দীন ও আব্দুর রহীম-সহ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
ড. রেজাউল করিম বলেন, এই ইন্তিকাল কমিশনের অধীনে জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না। এই কমিশন মৃত লাশ। তাই এই দলদাস কমিশন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন পূনর্গঠন করতে হবে। নির্বাচন দিতে হবে দল-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। অবিলম্বে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও ঢাকা মহানগরী উত্তর আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সকল জাতীয় নেতাদের মুক্তি দিতে হবে।
তিনি সরকারকে সতর্ক করে বলেন, এই সরকার আবারো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন জনগণ বাস্তবায়ন হতে দেবে না। জনতার তোপের মুখে আওয়ামী লীগ পালানোর পথ খুঁজে পাবে না। তিনি সরকারকে হঠকারিতা পরিহার করে অবৈধ তফসিল বাতিল, অবিলম্বে পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন বলেছেন, গ্রেফতার করে, মামলা দিয়ে, গুপ্ত হত্যা ও ফরমায়েশি রায়ে সাজা দিয়ে অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না। আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমেই জনগণ তার দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবে ইনশাআল্লাহ।
গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত নি¤œ আদালতে প্রহসনের বিচার, ফরমায়েশি রায় ও গুপ্ত হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে এ কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর মতিঝিল থেকে শুরু হয়ে আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, শামছুর রহমান, ড. মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, আব্দুর রহমান, কামরুল আহসান, মহানগরীর মজলিশে শূরা সদস্য শাহীন আহমেদ খান, অ্যাডভোকেট শাহ মাহফুজুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরী পূর্বের সভাপতি তাকরিম হাসান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, ঢাকা কলেজ সভাপতি আসিফ তাজওয়ার শিশিরসহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিভিন্ন থানা আমির ও সেক্রেটারীরা।
দেলাওয়ার হোসেন বলেন, বর্তমান গণবিরোধী সরকার আদালতকে অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে ব্যবহার করে দেশের বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সরকারের ছক অনুযায়ী নি¤œ আদালতে বিচারকার্য পরিচালনা করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদেরকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। এমনকি সকল নিয়ম লঙ্ঘন করে গভীর রাত পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণ করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুনানি ছাড়াই বিরোধীদলের সম্ভাব্য নির্বাচনী প্রার্থীদেরকে দ্রুত সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭ শতাধিক বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়েছে। যা বিচারক ও বিচার ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করেছে। আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো: তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরী নেতাদেরকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী লীগের এ সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে, আমিরে জামায়াতসহ সকল নেতা ও আলেম ওলামাদের মুক্তির জন্য এবং জনগণের অধিকার আদায়ে চলমান আন্দোলনকে আরো তীব্র থেকে তীব্রতর করতে হবে। এজন্য তিনি সকলকে রাজপথে আরো কার্যকর ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, এই সরকার বিরোধীদলের ন্যায়সঙ্গত ও গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করছে। দেশব্যাপী আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার শুরু করেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাসা-বাড়িতে হানা দিয়ে নেতাকর্মীদের না পেলে পরিবারের অন্য সদস্যদের গ্রেফতার করে জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। এমনকি তাদের হাত থেকে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও রেহাই পাচ্ছে না। মানবতা বিরোধী এই সরকার দলীয় বাহিনী এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে আবারো গুপ্ত হত্যা শুরু করেছে। সম্প্রতি রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁসহ বিভিন্ন স্থানে সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা নম্বরবিহীন গাড়িতে চড়ে জামায়াতসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে গুরুতর আহত ও হাত-পা ভেঙে দিচ্ছে এবং নির্মমভাবে হত্যা করছে। ইতোমধ্যে রাজশাহী ও রংপুরে জনপ্রতিনিধি ও অভিজ্ঞ ডাক্তারসহ তিনজনকে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সরকারের এই সকল গুপ্ত হত্যা ও অপরাজনীতির ধিক্কার জানাচ্ছি। প্রেস বিজ্ঞপ্তি