সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৬:১২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::

ফরিদগঞ্জের চান্দের বাড়িতে রহস্যময় আগুন! আতঙ্কে এলাকাবাসী!

এমরান হোসেন লিটন (ফরিদগঞ্জ) চাঁদপুর
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

রহস্যময় আগুন থেকে বাঁচার জন্য ঘরজুড়ে তাবিজ-কবজ সহ নানা ধরনের কবিরাজি সামগ্রীতে ভরপুর। কোরআন তেলাওয়াত, মিলাদ, দোয়া-দরুদ পাঠ, কোরআন খতম এমনকি গরু জবাই করে মেজবানি খাওয়ানোসহ বিভিন্ন তদবির করেও রহস্যময় এই আগুন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ওই বাড়ির ও পরিবারের সদস্যরা। কোথায় থেকে, কিভাবে কে কখন কারা এ আগুন লাগাচ্ছে তা কেউ দেখছে না। এবং বলতেও পারছে না। স্থানীয়রা এবং ওই ঘরের সামনে থাকা মসজিদের ইমাম নিজের চোখে দেখছেন আগুন লাগছে, বিভিন্ন আসবাব পত্র জলছে। গত ৭-৮ মাস এই ধরনের রহস্যময় আগুন নিয়ে আতঙ্কে আছেন ওই পরিবার সহ এলাকাবাসী। এমনই ঘটনার খবর পাওয়া গেছে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৮ নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের পূর্বদায়ছারা গ্রামের চান্দের বাড়ির ছায়েদ উল্লাহ পাটোয়ারীর বসত বাড়িতে। খবর পেয়ে সরাসরি সেখানে গেলে জানা যায়, ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর দূর-দূরান্ত থেকে উৎসব জনতা এক নজর দেখার জন্য এবং আরো জানার জন্য প্রতিদিন সেখানে ভিড় করছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বৃদ্ধ ছায়েদ উল্লা পাটোয়ারীর একটি পাকা ঘর ও একটি টিনের তৈরি চৌচালা ঘর রয়েছে। এবং দুটি ঘরেই তার ছেলের বউ ও পুত নাতিরা বসবাস করে। কিন্তু পাকা ঘরটিতে কোনরকম সমস্যা না হলেও বাড়িতে প্রবেশ মুখে পথের পদ্মায়, রান্না ঘরের চালে, চৌচালা বসত ঘরের ফ্রিজে, ঘরের আসবাবপত্রে, ঘরে ব্যবহৃত জামা-কাপড়ে, পোশাক-আশাকে, খাটে, তোষকে, লেপে, মসজিদের বারান্দায়, মসজিদের মাঠে এবং আরো বিভিন্ন স্থানে আগুনে জ্বলার সব নমুনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঘরে ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র রক্ষার জন্য অন্য ঘরে এবং বাড়ির পাশে থাকা মসজিদের ভিতরে নিয়ে রাখলেও সেখানেও রক্ষা পাচ্ছে না আগুন থেকে। ঘটনাটি আরো রহস্য হয়ে উঠছে এ কারনে, পবিত্র স্থান মসজিদে ঐ ঘরের জিনিসপত্র রাখলেও সেখানে শুধু ওই ঘরের জিনিসই আগুন লেগে সব পুড়ে যায়। কিন্তু মসজিদের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। কোথায় থেকে এর সূত্রপাত তার কিছুই জানেনা কেউ। তবে গত ৭-৮ মাস যাবত এই ঘটনা ঘটলেও রাতের বেলায় এখন পর্যন্ত আগুন লাগতে দেখা যায় নি। বিষয়টি নিয়ে ওই ঘরের পাশেই স্থানীয় দোকানদার বারেক পাটোয়ারী, মোঃ আব্দুল খালেক, আব্বাস খান, আবুল কাশেম, কবির হোসেন সহ আরো ক’জনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমি এবং আমরা নিজেরা দেখেছি আগুন ধরতে। এবং আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আগুনের সূত্রপাত কোথায় থেকে সেটা আমরা দেখি না। স্থানীয়রা আরো বলের, গত তিন চার দিন আগে হঠাৎ দুজন মহিলা ও শিশু বাচ্চার গায়ে আগুন লেগে যায়। এবং অন্য এলাকা থেকে আশা বোরকা পরা কেউ এই বাড়িতে ঢুকলেই তাদের বোরকার আগুন লেগে যায় বলে তারা জানান। তারা আরো বলেন, গত সাত/আট মাস ধরে এভাবে আগুন লেগে আসছে। নিজেদের সোবার ঘাটে, খাতাকম্বল সহ সমস্ত আসবাবপত্রে আগুন লাগছে। এ পর্যন্ত নিজ এলাকাসহ দূরান্ত থেকে বিভিন্ন কবিরাজ হুজুর এনে দাওয়াই চলছে। কিন্তু কোনভাবে আগুন থামছে না। কিছুদিন আগে তাদের বিভিন্ন আসবাবপত্র মসজিদের ভিতরে ও সামনে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেখানেও শুধু তাদের জিনিসগুলোতেই আগুন লেগে সব পুড়ে যায়। পার্শ্ববর্তী বাড়ির বয়োবৃদ্ধ হনুপা ও হাসমতের নেচার সাথে কথা হলে তারা বলেন, ছায়েদুল্লা পাটোয়ারীর ঘরের অন্যান্যদের সাহস জোগাতে সেখানে আমরা তিন দিন ছিলাম। ওই তিন দিনই আমাদের গায়ে আগুন লেগে যায় এবং পরনের কাপড় পুড়ে যায় বলে তারা জানান। বিষয়টি নিয়ে ঘরের মালিক ছায়েদ উল্লাহ পাটোয়ারীর সাথে কথা বলতে গেলে তিনি অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে যান। এবং ক্ষোভের সহিত বলেন গত সাত-আট মাস যাবত আমি বিভিন্ন জনের কাছে বলতে বলতে এখন ক্লান্ত হয়ে গেছি। এখন আর কারো কাছেই বলবো না শুধু আল্লাহর উপর এর বিচার দিলাম। স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোঃ লিয়াকত হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আগুন জ্বলতে আমি নিজে দেখেছি এবং তাদের বিভিন্ন আসবাবপত্রে যখন আগুন জ্বলে তখন আমি নিজে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছি। আগুন থেকে রক্ষা পেতে তাদের বিভিন্ন বেডিং পত্র মসজিদে এনে রাখা হয় কিন্তু সেখানেও আগুন লেগে সব পুড়ে যায়, যাহা আমি নিজে স্বচক্ষে দেখেছি। কিন্তু কই থেকে কোথায় থেকে আগুন লাগছে তা আমি বা কেউ দেখছে না। এ বিপদ থেকে রক্ষার জন্য কোরআন তেলাওয়াত, কুরআন খতম, গরু জবাই করে মেজবানি খায়ানো সহ আরো বিভিন্নভাবে দোয়া-দরুদ পাঠ করা হয়েছে এবং তাবিজ কবর ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও আগুন লাগা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ছায়েদুলা পাটোয়ারির পরিবার। ফরিদগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের লিডার কামরুল হাসান বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। এবং ওই বাড়িতে আগুন লেগে ছাই হওয়ার অনেক দৃশ্যমান প্রমান আছে। কিন্তু আমরা আগুনের কোন সূত্রপাত খুঁজে পায়নি। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য; ছায়েদ উল্লাহ পাটোয়ারীর ৫ছেলে ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। এবং ছেলেরা সবাই প্রবাসী।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com