চলনবিলের বিস্তীর্ণ মাঠের সরিষার জমিগুলো হলুদ ফুলে সেজে উঠেছে। একই সাথে কৃষকের দুশ্চিন্তাও বেড়েছে। লোকজন জমির মধ্যে নেমে সরিষা নষ্ট করে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তোলে। নিষেধ করলেও শোনেনা। এরাই মনে হয় সরিষার মধ্যেকার আসল ভূত। কপালে চিন্তার ভাজ নিয়ে এসব কথা জানিয়েছেন, চলনবিল অধ্যূষিত তাড়াশ উপজেলার কৃষকরা। সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল গ্রামের কৃষক দেলবর খা, মোজাম্মেল হক, শরিফুল ইসলাম, আব্দুল মমিন, শিবলু, ছারোয়ার হোসেন, জালাল উদ্দীন ও মঞ্জু বলেন, একটা সময় ছিল যখন মাটির পাতিলে কালি ও চুন মেখে ভূতের মতো করে জমিতে রাখা হত। তা দেখে পশু-পাখি ও ছোট ছেলে মেয়েরা ভয় পেত। ফসলহানী কম হত। এখনকার দিনে লোকজন গবাদি পশু দেখে রাখেন, বাড়িতে বেঁধে রাখেন। শিশুরাও ফসলের মধ্যে নেমে আর দুষ্টমি করেনা। কৃষকরা আরো বলেন, চলনবিলে ঘুরতে এসে অধিকাংশ লোকজন ছবি তোলার জন্য সরিষার জমির মধ্যে নেমে পড়ে। এরপর তাদের ফসলের ক্ষতির কথা মাথায় থাকেনা। বরং জমির মধ্যে নেমে যেখানে ফুল বেশী দেখে দেখে বেছে বেছে সেসব জায়গাতে ছবি তোলে। কোনো বাঁধা মানেনা তারা। হাইহিল ও বুট জুতার নিচে পড়ে সরিষা গাছ ভেঙে যায়, ফুলও ঝড়ে যায়। চলনবিল অধ্যূষিত গুরুদাসপুর উপজেলার বড়াইগ্রাম থেকে তাড়াশের সরিষার জমিতে ছবি তুলতে এসেছেন সোহানুরসহ তিন বন্ধু। তারা নিজেদের ভূত মানতে নারাজ। কিন্তু ছবি উঠানোর সময় সরিষা নষ্ট হয় এ কথা অকপটে স্বীকার করেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, কুন্দইল গ্রামের পূর্ব মাঠে কুন্দইল সেতু এলাকার দুই পাশে ও কামারশন গ্রামের দক্ষিণ মাঠে লোকজন সরিষার জমির মধ্যে নেমে ছবি তুলছেন। অনেকে মাইক্রো বাস ও মোটরসাইকেল নিয়ে দল বেঁধে এসেছেন ছবি তোলার জন্য। এদিকে তাড়াশ উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, এ বছর চার হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বেশী হয়েছে। গত বছর ছিল ৬ হাজার ৩শ’ ১২ হেক্টর। এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সরিষার জমির আইলে দাড়িয়েও ছবি তোলা যায়। চলনবিলে ভ্রমণ পিপাসুদের সেদিক লক্ষ্য রাখা জরুরি।