দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জে ৩৪ প্রার্থীর ২৭ জনই জামানত হারিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী একটি নির্বাচনী এলাকায় যত ভোট পড়ে তার শতকরা সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট কোনো প্রার্থী না পেলে মনোনয়ন দাখিলের সাথে জমা দেয়া জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হয়। নারায়ণগঞ্জের ৫টি সংসদীয় আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ৩৪ জন প্রার্থী বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই ৩৪ প্রার্থীর ২৭ জনই তাদের নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটের সাড়ে ১২ শতাংশ হারে ভোট পান নাই। এই ২৭ জন প্রার্থীর নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিলের সময় প্রদেয় জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের নয়জন প্রার্থীর সাতজনই জামানত হারাচ্ছেন। এই সাতজন প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব (সোনালী আঁশ) তৈমুর আলম খন্দকার। তার প্রাপ্ত মোট ভোট ৩ হাজার ১৯০। এই আসনে মোট ভোট পড়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ৬২৪। সেই হিসেবে তৈমুর আলম মাত্র ১.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন গাজী গোলাম দস্তগীরের ছেলে গাজী গোলাম মূর্তজা (ঈগল)। তিনি পেয়েছেন মাত্র ৩৯১ ভোট। এই আসনের মোট প্রদত্ত ভোটের হিসেবে গোলাম মূর্তজা ১ শতাংশ ভোটও পান নাই। একই অবস্থা জাকের পার্টির মোহাম্মদ যোবায়ের আলম ভূঞা (গোলাপ ফুল) ৬০৪ ভোট, স্বতন্ত্র মো: জয়নাল আবেদীন চৌধুরী (ট্রাক) ২৯৬ ভোট, মো: হাবিবুর রহমান স্বতন্ত্র (আলমিরা) ১৬৫, ইসলামিক ফ্রন্টের এ কে এম (চেয়ার) শহীদুল ইসলাম ৮২০ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। অপর দিকে জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ১ হাজার ৫৬৫ ভোট পেয়েছেন। অন্য প্রার্থীদের চেয়ে কিছু ভোট বেশি পেলেও তিনিও হারাচ্ছেন জামানত।
নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে ৫ প্রার্থীর চারজনই জামানত হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির আলমগীর সিকদার লোটন (লাঙ্গল) দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ ৭ হাজার ২৫৬ ভোট পেয়েও জামানত হারিয়েছেন। মো: আবু হানিফ হৃদয় তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ) ৬৪৫ ভোট পেয়েছেন। তিনিও জামানত হারিয়েছেন। এছাড়া জামানত হারিয়েছেন পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকের মো: শাহজাহান জাকের। তার প্রাপ্ত মোট ভোট ১ হাজার ৫৩৮। স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের হাজী মো: শরিফুল ইসলাম। তার প্রাপ্ত মোট ভোট ১ হাজার ৪২৮।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের ৮ প্রার্থীর ছয়জনই জামানত হারিয়েছেন। এই আসনে জামানত হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এএইচএম মাসুদ (ঈগল)। তিনি পেয়েছেন ২৫৯ ভোট। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এর এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান (নোঙ্গর)। তিনি পেয়েছেন ৪৬৭ ভোট। বিকল্পধারা বাংলাদেশের কুলা প্রতীকের প্রার্থী নারায়ণ দাস পেয়েছেন ২৫১ ভোট। বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মোহাম্মদ আসলাম হোসাইন একতারা প্রতীকে নির্বাচন করে পেয়েছেন ৭৬৪ ভোট। মো: আরিফ বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি) ১৬৩, মো: মজিবুর রহমান (মানিক) বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন (বিটিএফ) (ফুলের মালা) ৪৮৭।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনেও ৮ জন প্রার্থী বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এখানেও ৭ প্রার্থী তাদের জামানত হারিয়েছেন। এই আসনের প্রদত্ত মোট ভোটের হিসেবে ৭ প্রার্থী কাঙ্খিত হারে ভোট না পাওয়ায় হারাচ্ছেন জামানত।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের জামানত হারানো প্রার্থীরা হলেন তৃণমুল বিএনপির মো: আলী হোসেন (সোনালী আঁশ, প্রাপ্ত ভোট ১৯৮৭), বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্টির মো: গোলাম মোর্শেদ রনি (ডাব, প্রাপ্ত ভোট ৫৫১), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, জাসদের মো: ছৈয়দ হোসেন (মশাল, ১ হাজার ২৩ ভোট), জাকের পার্টির মো: মুরাদ হোসেন জামাল (গোলাপ ফুল, ৭ হাজার ২৬৯ ভোট), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) (আম, ৭২৭ ভোট), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো: সেলিম আহমেদ (বিএসপি) (একতারা, ১ হাজার ৪১৮ ভোট), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মো: হাবিবুর রহমা (চেয়ার, ১ হাজার ৯৫৫ ভোট)।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মোট প্রার্থী চারজন। এখানে তিনজনই হারিয়েছেন তাদের জামানত। জামানত হারানো প্রার্থীরা হলেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের এ এম এম একরামুল হক (চেয়ার, ৬ হাজার ৬৭৬ ভোট), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ছামছুল ইসলাম (একতারা, ১ হাজার ৭১৮ ভোট), তৃণমূল বিএনপির মো: আবদুল হামিদ ভাসানী ভূঁইয়া (সোনালী আঁশ, ১ হাজার ৮৩১ ভোট)।