সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৯:২৪ অপরাহ্ন

রমজানের আগমনি মাস রজব

নূর মুহাম্মদ রাহমান
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৪

হিজরি বর্ষের সপ্তম মাস রজব। রজব সম্মানিত মাস। আল্লাহ তায়ালা ১২ মাসের মধ্যে চারটি মাসকে ‘আশহুরে হুরুম’ তথা সম্মানিত ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস ১২টি আসমানগুলো ও জমিন সৃষ্টির দিন থেকে। সুতরাং তোমরা এ মাসগুলোয় নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।’ (সুরা তওবা : ৩৪)। সম্মানিত চার মাসের একটি হলো রজব। হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘১২ মাসে বছর। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি ধারাবাহিক- জিলকদ, জিলহজ, মহররম আর চতুর্থটি হলো রজব।’ (সহিহ বুখারি)
এ মাসগুলোকে হারাম মাস বলার দুটি কারণ। ১. এ মাসে হত্যা, মারামারি-কাটাকাটি, যুদ্ধবিগ্রহ হারাম। ২. এ মাসগুলো বরকতময়। উলামায়ে কেরাম বলেছেন, আশহুরে হুরুমের বৈশিষ্ট্য হলো- এসব মাসে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হলে বাকি মাসগুলোতে ইবাদতের তওফিক হয় বেশি বেশি। আশহুরে হুরুমে কষ্ট করে গুনাহ থেকে বিরত থাকতে পারলে অন্যান্য মাসেও গুনাহ পরিহার করা সহজ হয়। (আহকামুল কোরআন, জাসসাস : ৩/১১১)
ইবাদতের শ্রেষ্ঠ মাস রমজানের আগমনি বার্তা দেয় রজব। এ মাস শুরু হলে নবীজি (সা.) পবিত্র রমজান পাওয়ার জন্য বেশি বেশি দোয়া করতেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিতÑ রাসুল (সা.) রজব এলে বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত নাজিল করুন এবং রমজান আমাদের নসিব করুন।’ (আল-মুজামুল আওসাত : ৩৯৩৯)। মোল্লা আলী ক্বারি (রহ.)-এর মতে দোয়াটির মর্মার্থ হলোÑ এ মাসগুলোতে আমাদের আনুগত্য ও ইবাদতে বরকত দান করুন। আমাদের বয়স দীর্ঘ করে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিন। যাতে রমজানের রোজা এবং তারাবিসহ ইত্যাদির সৌভাগ্য অর্জন করতে পারি। (মিরকাতুল মাফাতিহ : ৩/১০২২)। হাদিসে আরও বলা হয়েছে, রজব মাস থেকে নবী করিম (সা.) রমজানের প্রস্তুতিস্বরূপ রোজা রাখা শুরু করতেন। রজব মাসের প্রথম রাতে দোয়া কবুল হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘পাঁচটি রাত এমন আছে যাতে দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না- ১. জুমার রাত, ২. রজবের প্রথম রাত, ৩. ১৫ শাবানের রাত, ৪. ঈদুল ফিতরের রাত ও ৫. ঈদুল আজহার রাত।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ৭৯২৭)। এ মাসের ইবাদতে সওয়াব অন্য মাসের তুলনায় বেশি। এ সম্পর্কে মুফতি শফি (রহ.) বলেন, ‘সব নবী-রাসুলদের শরিয়ত এ বিষয়ে একমত যে, এ চার মাসের প্রত্যেকটা ইবাদতের সওয়াব বেশি। এর মধ্যে কোনো গুনাহ করলে এর পরিণতি ও শাস্তিও বেশি।’ (মাআরিফুল কোরআন : ৪/৩৭)। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এ মাসের ব্যাপারে মানুষ বেশ কিছু ভুলের শিকার। বিশেষ করে দুটি বিষয় লক্ষণীয়-
শবে মেরাজে আমল!
রজবের ২৭ তারিখে (২৬ তারিখ রাত) নবীজি (সা.) মেরাজ বা ঊর্ধ্বাকাশে ভ্রমণ করেন। যদিও কিছু বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, নবী (সা.) মেরাজে যান রবিউল আউয়াল মাসে। মেরাজে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দিদার লাভ করেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে দুনিয়ায় প্রত্যাবর্তন করেন। সেখানে অবলোকন করেন সৃষ্টিজগতের অপার রহস্যময় অনেক বিষয়। এসব কারণে মুসলিম উম্মাহর কাছে এ মাসের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য অনেক বেশি।
শবে মেরাজে মহানবীর ঊর্ধ্বাকাশ ভ্রমণের কারণ বিশেষ মাহাত্ম্যের হলেও এ রাতে বিশেষ কোনো আমল নেই ইসলামে। কারণ মেরাজের ঘটনা নবুওয়াতের পঞ্চম বছরে ঘটেছে। যার অর্থ হলো, এ ঘটনার পর ১৮ বছর পর্যন্ত নবী (সা.) দুনিয়ায় ছিলেন; কিন্তু এ দীর্ঘ বছরগুলোতে কোথাও এ কথা প্রমাণিত নেই যে, তিনি মেরাজের রাতে কোনো বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন কিংবা উদযাপন করার মতো কিছু বলেছেন। না নবীজির কোনো বক্তব্য এ ব্যাপারে আছে, না তাঁর সময়কালে এ রাতে জাগ্রত থাকার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। না তিনি নিজে জাগ্রত থেকেছেন। না সাহাবায়ে কেরামকে এর প্রতি তাগিদ করেছেন। না সাহাবায়ে কেরাম নিজেরা এর প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই এ রাতে ইবাদতের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া বিদাত। তাই তা বর্জনীয়। (ইসলাহি খুতুবাত : ১/৬০-৬২)।
২৭ রজব রোজা! কিছু মানুষ রজবের ২৭ তারিখে রোজা রাখার প্রতি অনেক গুরুত্ব দেয়। রোজাটিকে অনেক ফজিলতপূর্ণ মনে করে। অথচ এ রোজার ব্যাপারে সহিহ সূত্রে একটি বর্ণনাও প্রমাণিত নয়। ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেছেন, রজব মাসে বিশেষ করে মেরাজের কারণে কোনো রোজার বিশেষ ফজিলত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। (তাবয়িনুল আজাব, পৃষ্ঠা : ১১)। এ ছাড়া হজরত ওমর (রা.)-এর আমল পাওয়া যায় যে, তিনি স্বীয় খেলাফতকালে যখন দেখতে পেলেন, ২৭ রজবে মানুষ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে রোজা রাখছে, তিনি সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বের হলেন এবং একজন লোককে গিয়ে জোরপূর্বক বললেন, আমার সামনে খাও এবং এ কথার প্রমাণ দাও যে, তোমরা রোজাদার না। হজরত খুরাশা ইবনুল হুর থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি হজরত ওমর ইবনে খাত্তাবকে দেখেছি, তিনি রজব মাসে রোজা রাখার কারণে লোকদের হাতে পেটাতেন। এমনকি তাদের খাওয়ায় বসিয়ে দিতেন এবং বলতেন, রজব! রজব কী? রজব মাস যাকে জাহেলি যুগের লোকেরা বিশেষ সম্মান করত; কিন্তু ইসলাম এসে বিষয়টা প্রত্যাখ্যান করেছে।’ (কানজুল উম্মাল : ২৪৫৭৫)।
মূল কথা হলো, রজব মাসে আলাদা নির্দিষ্ট নামাজ বা রোজা নেই, যা একমাত্র রজব মাসে বা মেরাজের রাতে আদায় করতে হয়। নফল নামাজ এবং নফল রোজা নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত বছরের যেকোনো সময় আদায় করা যায়। আর রজব যেহেতু সম্মানিত মাসের অন্তর্ভুক্ত, এ সময় আমল করলে অধিক সওয়াবের আশা করা যায়, তাই অধিক পরিমাণে নফল নামাজ ও রোজা পালনে সচেষ্ট থাকবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com