‘পাকিস্তান আমলেও ব্যবসায়ীরা পার্লামেন্টে ছিলেন। স্বাধীনতার পরেও ছিলেন। এখনো আছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এখন যে ব্যবসায়ীরা সংসদে আসছেন, তাদের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক আছে কি না? আমি বলবো, এসব ব্যবসায়ীর সংসদ সদস্যের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। যে কারণে তাদের মধ্যে জনদায়ও কাজ করে না।’ বলছিলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম শরিক নেতা এবং জোটের হয়ে চতুর্থবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের প্রায় ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী বলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই জাগো নিউজের পক্ষ থেকে মতামত গ্রহণ করা হয় রাশেদ খান মেননের। জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু মতামত দিয়েছেন। জাগো নিউজের সৌজন্যে দৈনিক খবরপত্রে পত্রস্থ করা হলো।-বার্তা সম্পাদক)
নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের প্রায় ৯০ শতাংশই কোটিপতি এবং একাদশ জাতীয় সংসদের তুলনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ী ও কোটিপতি সংসদ সদস্যের সংখ্যা বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। একজন রাজনীতিবিদ ব্যবসা করতেই পারেন। আবার একজন ব্যবসায়ীও রাজনীতি করতে পারেন। এতে দোষের কিছু না। কিন্তু রাজনীতি করেন না, রাজনীতি বোঝেন না, মানুষের সঙ্গে যার বোঝাপড়া নেই তাকে টাকার জোরে হঠাৎ করে সংসদে নিয়ে এলেন, এটি গণবিরোধী ভাবনা। সংসদের সবাই ব্যবসায়ী হলে মানুষের কথা কে বলবেন? এ প্রসঙ্গে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হচ্ছে, রাজনীতি আর রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। যার হাতে টাকা আছে, সেই পার্লামেন্টে আসার সুযোগ পাচ্ছেন। গণমানুষের প্রতিনিধি হয়ে আসা সংসদ সদস্যের সংখ্যা এখন খুবই কম। আর এটি যে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেই ঘটেছে, তা নয়। আরও আগে থেকে হয়ে আসছে। সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি বেড়েছে। আর এটি এখন ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে।’
কেন সংসদে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বামপন্থি এই রাজনীতিক বলেন, ‘সমাজ, রাজনীতি এখন পুঁজি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। যে অর্থব্যবস্থা আমরা প্রতিষ্ঠা করে চলছি, তাতে ক্ষমতায়ন প্রশ্নে গণমানুষের উপস্থিতি খুবই কম এখন। পাকিস্তান আমলেও ব্যবসায়ীরা পার্লামেন্টে ছিলেন। স্বাধীনতার পরেও ছিলেন, এখনো আছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এখন যে ব্যবসায়ীরা সংসদে আসছেন, তাদের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক আছে কি না? আমি বলবো, এসব ব্যবসায়ী সংসদ সদস্যের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। যে কারণে তাদের মধ্যে জনদায়ও কাজ করে না। গোটা বিশ্বই তো এখন ভোগবাদী নীতিতে বিশ্বাসী। পাশেরজনের খবর কেউ রাখি না। এর জন্য বামপন্থিদেরও দায় আছে। নইলে সমাজের এই পরিণতি হবে কেন?’
রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে থাকলে আজকের এত সংকট তৈরি হওয়ার কথা ছিল না। কারা এই ব্যবসায়ীদের কাছে রাজনীতি জিম্মি করে তুলছে, সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে রাজনীতি বলতে আর কিছুই থাকবে না। সাধারণ মানুষ তার অধিকার নিয়ে আর কথাও বলতে পারবেন না।
ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে গণমানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘একজন রাজনীতিবিদ ব্যবসা করতেই পারেন। আবার একজন ব্যবসায়ীও রাজনীতি করতে পারেন। এতে দোষের কিছু না। কিন্তু রাজনীতি করেন না, রাজনীতি বোঝেন না, মানুষের সঙ্গে যার বোঝাপড়া নেই তাকে টাকার জোরে হঠাৎ করে সংসদে নিয়ে এলেন, এটি গণবিরোধী ভাবনা। সংসদের সবাই ব্যবসায়ী হলে মানুষের কথা কে বলবেন? মানুষের দুঃখবোধ নিয়ে কে আলোচনা করবেন? কারণ ব্যবসায়ীরা তো তাদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বোঝেন না। সংসদে অনেক গার্মেন্ট ব্যবসায়ী এসেছেন। শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষের কি সম্পর্ক তা সবাই জানি।
সংসদ হচ্ছে এই শ্রমিকদের অধিকার আদায় নিয়ে আলোচনা করার জায়গা। গার্মেন্ট মালিকরা সেখানে কি আলোচনা করবেন?’ ‘রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে থাকলে আজকের এত সংকট তৈরি হওয়ার কথা ছিল না। কারা এই ব্যবসায়ীদের কাছে রাজনীতি জিম্মি করে তুলছে, সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে রাজনীতি বলতে আর কিছুই থাকবে না। সাধারণ মানুষ তার অধিকার নিয়ে আর কথাও বলতে পারবেন না। তবে এর জন্য জনগণকেও দায় নিতে হবে। তাদের হাতেই বিকল্প বাছাই করার সুযোগ রয়েছে। অধিকার আদায়ে সোচ্চার হবে নাকি ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়বে, তা জনগণকেই ঠিক করতে হবে’ বলছিলেন রাশেদ খান মেনন