শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩ অপরাহ্ন

লজ্জা-শালীনতা

মতিউর রহমান
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২৪

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে সৃষ্টি করে প্রকৃতিগত সৌন্দর্যকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। এসব সৌন্দর্যের মধ্যে এক বিশেষ শোভা হচ্ছে লজ্জা বা শালীনতা। শরিয়তের দৃষ্টিতে লজ্জা এমন একটি বিশেষ গুণ যার দ্বারা মানুষ যাবতীয় খারাপ ও অপছন্দনীয় কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। ইসলাম ধর্মে লজ্জা ও শালীনতাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, যাতে করে মু’মিন বান্দা সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারে।
একবার নবী করিম সা: এক আনসারি সাহাবিকে দেখলেন, সে তার ভাইকে লজ্জাশীল না হওয়ার জন্য বোঝাচ্ছে। তখন রাসূল সা: তাকে বললেন, ‘তাকে এভাবেই লজ্জাশীল থাকতে দাও কেননা, লজ্জা ঈমানের অঙ্গ।’ (বুখারি-২৪, মুসলিম-৩৬) অন্য এক হাদিসে বর্ণিত আছে- রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘লজ্জা এমন একটি গুণ যা শুধু কল্যাণই বয়ে আনে।’ (মুসলিম-৩৭)
মোট কথা, মানুষ যত বেশি লজ্জাশীল হবে তত বেশি কল্যাণের অধিকারী হতে থাকবে। লজ্জা ওই সব গুণাবলির অন্যতম যেগুলো দ্বারা একজন মানুষ পরকালে জান্নাত লাভ করতে পারে। নবী করিম সা: বলেন, ‘লজ্জা ঈমানের অঙ্গ, ঈমানের স্থান হলো জান্নাত আর অশ্লীলতা হলো অবাধ্যতা-অন্যায়ের অঙ্গ, তার স্থান হলো জাহান্নাম।’ (তিরমিজি-২০০৯)
কুরআনের দৃষ্টিতে লজ্জা বা শালীনতার দু’টি পুরস্কার: ১. মহা প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি : আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ইরশাদ করেন- ‘নিজ লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী পুরুষ ও নারী এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী- আল্লাহ তাদের জন্য মাগফিরাত ও মহা প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন।’ (সূরা আহজাব-৩৫)
এ আয়াতে অত্যন্ত স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে যে, শালীনতার সাথে আল্লাহর স্মরণে জীবন অতিবাহিতকারী লোকদের জন্য আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা ও মহা প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন। প্রতিদান দ্বারা দুনিয়ার জীবনের বরকত ও পরকালীন নিয়ামতগুলো উদ্দেশ্য। কেননা, মাগফিরাত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- শালীনতা অবলম্বনকারী ব্যক্তির দ্বারা ঘটে যাওয়া অন্যান্য ভুলত্রুটি ও গাফিলতি আল্লাহ তায়ালা দ্রুতই ক্ষমা করে দেবেন।
২. পরিপূর্ণ সফলতার সুসংবাদ : আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘নিশ্চিতভাবে সফলকাম ওই সব মু’মিন বান্দা (যারা অন্যান্য আমলের পাশাপাশি) নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে।’ (সূরা মু’মিন-১)
এই আয়াতে সফলতা অর্জনকারী মু’মিনদের কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে, যার একটি হলো শালীনতাবোধ। এ থেকে বোঝা যায়, পরিপূর্ণ সফলতা কেবল শালীনতা বোধসম্পন্ন ব্যক্তিই অর্জন করতে পারে।
হাদিসের আলোকে শালীনতার গুরুত্ব
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- একবার নবী করিম সা: কুরাইশ যুবকদের লক্ষ করে বললেন, ‘হে কুরাইশ যুবকরা! তোমরা নিজ নিজ লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে। ব্যভিচার করবে না। জেনে রেখো! যে লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে সে জান্নাত লাভ করবে।’ (বায়হাকি-৫৪২৫)
ওই হাদিসে উভয় জাহানের রহমত, নবী করিম সা: অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় ঘোষণা করেছেন, যে ব্যক্তি স্বীয় লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে এবং ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকবে সে জান্নাতে চিরকালীন আরাম-আয়েশ তথা জান্নাত লাভ করবে।
রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস যখন আবু সুফিয়ানের কাছে জানতে চাইল- নবী করিম সা: কী কী বিষয়ে শিক্ষাদান করেন। যদিও আবু সুফিয়ান সে সময় মুসলিম ছিলেন না, তবুও তিনি সহজ-সরল ভাষায় নবী করিম সা:-এর শিক্ষার বিবরণ এভাবে উপস্থাপনা করেছিলেন- ‘হে বাদশাহ! মুহাম্মাদ আমাদেরকে সালাত, সদকা, শালীনতা ও আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার নির্দেশ দেন।’ (বুখারি-৫৯৮০)
এ থেকে বোঝা যায়, শালীনতাবোধের গুরুত্ব ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলোর অন্যতম; বরং এভাবে বলা যায়- ইসলামী সমাজব্যবস্থার ভিত্তি যেসব খুঁটির উপর প্রতিষ্ঠিত সেগুলোর মধ্যে একটি বিশেষ খুঁটির নাম হচ্ছে শালীনতাবোধ। পরিশেষে আমরা যে শিক্ষা পেলাম সেটি হলো- আমরা শালীনতার গুণে গুণান্বিত হওয়ার চেষ্টা করব, মানুষকে শালীনতাবোধ শিক্ষা দেবো। তাহলেই সফল হবে আমাদের জীবন। সুন্দর হবে আমাদের সমাজ।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী আইন গবেষণা বিভাগ, জামিয়া হুসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ, মিরপুর, ঢাকা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com