মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ১১:০১ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
আজ শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা প্রকাশ্যে ভোট দেয়ার ভিডিও করায় সাংবাদিকদের উপর হামলা দৃষ্টিনন্দন নতুন সড়কে বদলে যাবে ফরিদগঞ্জ চান্দ্রা-সেকদি-টুবগি এলাকার সূর্যগিরি আশ্রম শাখার উদ্যোগে দক্ষ জনশক্তি গঠনের আলোকে সেলাই প্রশিক্ষণ উদ্বোধন নগরকান্দা ও সালথায় দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আজ রাউজানে সার্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবহিতকরণ সভা রাঙ্গামাটিতে ইউপিডিএফ’র ডাকা আধাবেলা অবরোধ পালিত শেরপুরে কলেজ শিক্ষার্থীদের অভিভাবক সমাবেশ ও আলোচনা সভা সোনাগাজীতে স্কুল ভবন নির্মাণে বাধার অভিযোগে মানববন্ধন চট্টগ্রামে চুয়েটের সাথে তিনটি সংস্থার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

একজন মানবতাবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষু ভেন. প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরোর জন্য পরম শ্রদ্ধা

সুশীল চাকমা
  • আপডেট সময় রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
লেখক সুশীল চাকমা এবং মানবতাবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষু ভেন. প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো।

২০২৪ সালের ০১ ফেব্রুয়ারি। একটি দিন। একটি সময়ের সন্ধিক্ষণ। এ দিন ৭২ পেরিয়ে ৭৩Ñএ পা রাখলেন আদিবাসীদের মাঝে শিক্ষা বিস্তারের অগ্রদূত ভেন. প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো। ০১ ফেব্রুয়ারি আমার কাছে কেবলই একটি তারিখ নয় বরং একটি দীপ্তিদায়ক দিন কারণ এই দিন এমন এক গুণী মানুষের জন্মদিন যাকে খুব কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। একাধারে তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় পরমকল্যাণমিত্র, মানবতাবাদী, প্রজ্ঞাবান, মহানকর্মবীর, পরোপকারী। আমার জানা মতে, এই মহান বৌদ্ধ সন্ন্যাসী নিরহংকারী, ত্যাগী ও দয়ালু। পরম পূজনীয় শ্রদ্ধেয় প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো বহু প্রতিষ্ঠানের রূপকার। তিনি একজন সমাজ সেবক এবং চাকমা জাতির বা আদিবাসীদের দিকপাল। সৌভাগ্যবশতঃ দীর্ঘদিন যাবত এমন গুণী মানুষের সান্নিধ্য পেয়ে নিজেকে খবই ধন্য মনে করি। শ্রদ্ধেয় প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো চট্টগ্রামের ইতিহাসে আদিবাসীদের জন্য একজন মহাপুরুষ যিনি যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে শিক্ষার আলো বিলিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদে মাঝে। এক্ষেত্রে প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো আদিবাসী সমাজের জন্য শিক্ষা বিস্তারের অগ্রদূত, আলোকবর্তিকা এবং একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র যাকে বলা যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের জন্য ইতিহাসের ভেতর আরও একটি ইতিহাস।

তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষিত করতে পারলে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে দক্ষ করতে পারলে এবং তরুণদের জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানাতে পারলে একটি জাতি উন্নতির র্শীষে অবস্থান করে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের রক্ষা, কল্যাণ, উন্নতি এবং আদিবাসী জাতির ঐতিহ্যকে রক্ষার জন্য আজ তরুণ প্রজন্মকে শ্রদ্ধেয় প্রজ্ঞানন্দ ভান্তের দর্শন, চিন্তা-চেতনা, তাঁর নিঃস্বার্থ অবদান মনেপ্রাণে ধারণ করা অনস্বীকার্য। আমি মনে করি, এই মহান মানুষ আমাদের মাঝে না এলে আমরা আজও অনেক পিছিয়ে থাকতাম বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা। আমরা পেতাম না শ্রদ্ধেয় ভান্তের হাতে গড়া অনেক প্রতিষ্ঠান।
সুজলা-সুফলা, শস্য শ্যামলা শোভিত পৃথিবীর এক অপূর্ব দেশ বাংলাদেশ। এ দেশে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত তিন পার্বত্য জেলা-রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। শ্রীমৎ প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরোর জন্ম ১৯৫২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, খাগড়াছড়ি জেলাধীন দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়ায়। আলোকিত মানুষ ভেন. প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরোর পারিবারিক নাম বলেন্দ্র দেব চাকমা। তাঁর পিতা প্রয়াত নরেন্দ্র লাল চাকমা ও মাতা প্রয়াত ইন্দ্রপতি চাকমা। ভেন. ১৯৬৮ সালে দীঘিনালা উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক ও ১৯৭২ সালে হাটহাজারী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৭৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পালি ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। শ্রদ্ধেয় প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো ১৯৬৮ সালে মাধ্যমিক পাশ করার পর সদ্ধর্মাদিত্য ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের মহোদয়ের উপস্থিতিতে তারই উপাধ্যায়ত্বে ভিক্ষু হিসেবে দীক্ষিত হন। তার দু’বছর আগে ১৯৬৬ সালে মাইনী উপত্যকায় ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ পীঠস্থান বোয়ালখালী দশবল বৌদ্ধ রাজবিহারে এসে শ্রদ্ধেয় জ্ঞানশ্রী মহাথেরোর কাছে শ্রামণ্য ধর্মে দীক্ষিত হন। দীক্ষাগুরু জ্ঞানশ্রী মহাথেরোর পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেকে মানবতার সেবায় আত্মনিবেদিত করেন। সেই থেকে মহান ব্রত নিয়ে আজও কাজ করে যাচ্ছেন পাবর্ত্য অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি বিশেষত অনাথ, অসহায়, হত-দরিদ্র, ছিন্নমূল ও দুঃস্থ শিশুদের কল্যাণ ও শিক্ষা বিস্তারে।
প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরোর পরমারাধ্য গুরু জ্ঞানশ্রী মহাথের ১৯৭৪ সালে বোয়ালখালী ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হন। এর পর থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১২ বছর প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রমের কার্যনির্বাহী পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদে অধিষ্ঠিত হয়ে প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছিলেন যা কালের স্বাক্ষী হিসেবে এখনও তাকিয়ে আছে। ১৯৭৪ সালে মোনঘর প্রতিষ্ঠা করা হলে তিনি এর সাধারণ সম্পদক হন। মোনঘর পরিচালনা পর্ষদে প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে দীর্ঘদিন ধরে মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন। শ্রদ্ধেয় ভান্তে ২০০৪ সালে রাজধানী মিরপুরে বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজ নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। যা বর্তমানে ঢাকার বুকে দাঁড়িয়ে থেকে সমগ্র দেশের আদিবাসীদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
২০২৪ সালের ০১ ফেব্রুয়ারি, এ মহান ব্যক্তির শুভ জন্মদিন। এদিন ভান্তে ৭২ পেরিয়ে ৭৩ বছর বয়সে পর্দাপণ করেছেন। যদিও পরম পূজনীয় শ্রদ্ধেয় ভান্তে এইসব বিষয়ে এতো আন্তরিক নন তারপরও সবার অনুরোধে খুবই সাদামাটাভাবে শ্রদ্ধেয় ভান্তের ৭৩তম শুভ জন্মদিন পালন করা হলো। ক্ষুদ্র পরিসরে ভক্ত বা শিষ্যরা মিলে অমরা ক’জন অনুষ্ঠানে সামিল হলাম।
নিজের হাজারো ত্যাগ তিতিক্ষাকে স্বীকার করে ধর্মীয় ও অধুনিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত হয়ে ’প্রকৃত পক্ষে মানব’ হওয়ার শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন ভেন. প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো। আজ এই মহান সময়ে আপনার আজীবনকার মেধা, কর্মশক্তি আমাদের সবার কল্যাণের জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন তাই আমরা আপনার কাছে চিরঋণী। পাশাপাশি আপনার সুদীর্ঘ মানবজীবন চর্চিত সকল কুশল ও পূণ্যময় কর্মপ্রবাহ জন্ম জন্মান্তর আমাদের চলার পথে পাথেয় হোক; আমরা যেন আপনার মানবতার শক্তিকে ফুলে ফসলে সুশোভিত করতে পারি এই আর্শীবচন একান্তভাবে কামনা করছি। পরিশেষে আপনি আমৃত্যু নিরোগ, সুস্থ জীবন লাভ করে ধন্য হোন তথাগত সম্যক সম্বুদ্ধের অনন্ত কর্মশক্তির কাছে কায়মন বাক্যে এই প্রার্থনা করছি।
লেখক পরিচিতি:
প্রভাষক এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সচিব
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com