সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:১৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
পুঁইশাক চাষে সফল সুফিয়া, আগ্রহী হচ্ছে অন্য কৃষকরাও অতিরিক্ত টোল আদায় করলেই ইজারা বাতিল-ভোলায় উপদেষ্টা সাখাওয়াত কৃতি ফিরোজীকে বাঁচাতে সাভারে চ্যারিটি কনসার্ট আওয়ামী লীগের সাথে দ্বন্দ্ব নাই, যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার চাই-আব্দুল আউয়াল মিন্টু জলঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের গণসমাবেশ সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপি লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শুরু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আগৈলঝাড়া বিএনপি’র উদ্যোগে আনন্দ র‌্যালি পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্তুদের অবস্থান কর্মসূচি জামালপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির আয়োজনে দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ ভুট্টা চাষে দেশের শীর্ষে চুয়াডাঙ্গা: ৫৯,৬৫৬ হেক্টর জমিতে আবাদ

সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে গড়ে তুলেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুমারী রেখা রাণী, এমপিওভুক্তর জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

নেই স্বামী সন্তান পরিবার পরিজন। শেষ জীবনে এসে কী খাবেন, কোথায় থাকবেন, করেননি তার কোন চিন্তা ভাবনা। নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পাঠ দানের অনুমতি পেলেও দীর্ঘ ১০বছরে এখনো হয়নি এমপিওভুক্ত। যার ফলে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীগণ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা কুমারী রেখা রাণী শেষ জীবনে এসে তার এই স্বপ্নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখতে সমাজের বিত্তশালীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। একরকম মানুষদের কাছে হাত পেতে তিনি তার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি চালু রেখেছে।
কুমারী রেখা রাণীর বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি গ্রামে। ১৯৭২ সালে কুমারী রেখা রাণী কলাবাড়ি ইউনিয়নের হিজলবাড়ি বিনয় কৃষ্ণ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। এসএসসি পাশের পরে অর্থ কষ্টে থমকে যায় তার লেখাপড়া। লেখাপড়ার ই”ছা থাকলেও অর্থের অভাবে এইচএসসিতে ভর্তি হতে পারেনি কুমারী রেখা রাণী । মেধাবী ছাত্রী হওয়া সত্বেও এইচএসসিতে ভর্তি না হতে পারায় কুমারী রেখা রানীর মাঝে এক ধরণের ক্ষোভের স”ষ্টি হয়। তখন তিনি মনে মনে দরিদ্র নারীদের শিক্ষায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পন করেন। কয়েক বছর পর এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় কুমারী রেখা রাণী নার্সিংয়ে ভর্তি হয়। ১৯৭৭সালে তিনি নার্সিং পাশ করেন। ১৯৮৩ সালে কুমারী রেখা রাণী সরকারি চাকুরী পান। শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন। চাকুরী জীবনের তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য অল্প অল্প করে সঞ্চয় করতে থাকেন।
২০১৪সালে অবসরে এসে কুমারী রেখা রাণী সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কলাবাড়ি ইউনিয়নের বুরুয়া গ্রামে ‘কুমারী রেখা রাণী গার্লস হাইস্কুল’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ২০১৮ সালে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২৩০জন ছাত্রী ও ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে।
দীর্ঘ ১০বছরে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমপিও না হওয়ার কারণে শিক্ষক কর্মচারীগণ বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে বলে জানিয়েছেন কুমারী রেখা রাণী।
তিনি বলেন, মেধাবী ছাত্রী হয়েও অর্থ অভাবে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারিনি। তাই নার্সিং পড়ার সময় প্রতিজ্ঞা করে ছিলাম যে, জীবনে যে ভাবেই হোক দরিদ্র নারীদের শিক্ষা লাভের জন্য আমি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবো। তাই আমি আমার জীবনের সমস্ত সঞ্চিত অর্থ দিয়ে শেষ জীবনে এসে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছি। শেষ জীবনে আমি কী খাবো, কোথায় থাকবো তার চিন্তা করিনি। ২০১৮সালে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পাঠদানের অনুমতি পেয়েছে। কিš’ এখন পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হয়নি। এমপিওভুক্ত না হওয়ার কারণে শিক্ষক কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাই আমি দ্রুত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির দশম শ্রেণির ছাত্রী সমাপ্তি হালদার বলেন, আমাদের এলাকার কাছাকাছি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাই। এই প্রতিষ্ঠানটি হওয়ার পরে আমরা এখানে লেখাপড়া করছি। এখানে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি না হলে হয়তোবা আমাদের লেখাপড়া করা হতো না। কষ্ট করে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করায় আমরা কুমারী রেখা রাণীর প্রতি কৃতজ্ঞ।
দশম শ্রেণির আরেক ছাত্রী মুক্তা সরকার বলেন, এই বিদ্যালয়ে আমরা যারা লেখাপড়া করি তাদের এখানে শিক্ষা গ্রহণে কোন প্রকার টাকা পয়সা দিতে হয়না। কুমারী রেখা রাণীই আমাদের লেখাপড়ার খরচ জোগায়। তিনি আমাদেরকে সন্তানের মতো ভালোবাসেন।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বাড়ৈ বলেন, আমাদের এখানে আগে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী ছিল। এখন ৮জন শিক্ষক ও ৩ জন কর্মচারী রয়েছে। বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত না হওয়ার কারণে দিন দিন শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা কমে যা”েছ। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো সম্ভব হবে না।
কলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজন বিশ^াস বলেন, কুমারী রেখা রাণী একজন সর্বত্যাগী মানুষ। সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন। তার কোন বাড়ি ঘর নাই। বিদ্যালয়টির একটি ছোট কক্ষে সে বসবাস করে। এখানের ছাত্রীদের নিয়েই তার দিন কাটে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের তিনি তার সন্তানের মতো ভালোবাসেন। কুমারী রেখা রাণীর স্বপ্ন তার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নারী শিক্ষায় দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে। তাই এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত করার মাধ্যমে কুমারী রেখা রাণীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নুর আলম সিদ্দিক বলেন, কুমারী রেখা রাণীর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তার এই বিদ্যালয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে এমপিওভুক্ত করতে হলে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সহযোগিতা প্রয়োজন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com