শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০১:৪৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
চিতলমারীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রাণ নাশের হুমকি : থানায় জিডি গজারিয়ায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চমক দেখালেন মীনা খাগড়াছড়িতে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান আজিজ উদ্দিন বগুড়া ও জয়পুরহাটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জামালপুর সদর উপজেলা পরিষদে বিজন কুমার চন্দরকে বিজয়ী ঘোষণা ডিমলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন মেলান্দহে দুগ্ধ সমবায় প্রকল্পের সদস্যদের মাঝে ঋণের চেক বিতরণ গলাচিপায় জেলেদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরণ তারাকান্দায় অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে বিএনপির ত্রাণ নুরে আলম সিদ্দিকী শাহীন নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত

উৎপাদন কম, পাইকারি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে বাজার

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

বরিশালে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন না থাকায় দ্রব্যমূল্যের বাজার চলে যাচ্ছে পাইকারি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। বিশেষ করে চাল, আলু ও পেঁয়াজ বিক্রির বাজারদর অনেকটা পাইকারদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। জেলায় ভরা মৌসুমেও নিয়ন্ত্রণহীন এসব পণ্য। গতকাল বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বরিশাল জেলার চালের একমাত্র পাইকারি বাজার ফরিয়াপট্টি ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় শতাধিক দোকানে বিভিন্ন জাতের চালের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। তবে, এসব চালের অধিকাংশই আসে দেশের উত্তরা ল থেকে। জেলায় যেসব চাল উৎপাদন হয় তা এখানে তেমন একটা বিক্রি হয় না। কেননা এখানকার উৎপাদিত অধিকাংশ ধানই মোটা জাতের। আর এ বাজারে চিকন চালের বেশি চাহিদা। তাই চাহিদা মেটাতে উত্তরা ল থেকে আনতে হয় চাল। এতে করে নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে সেসব চাল।
পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চিকন চাল হিসেবে পরিচিত মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকা কেজি দরে। এরপর সবচেয়ে চাহিদা সম্পন্ন আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে। আমন বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৪৭ টাকায়। পাইজাম ৫০ টাকা কেজি দরে। ব্যবসায়ীদের দাবি, বিক্রয়মূল্যের চেয়ে ২ টাকা কম দরে মিল থেকে চাল কিনতে হচ্ছে তাদের। কেনার উপর পরিবহন খরচ হিসাব করেই বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেন দাবি করে তারা বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন মিলমালিকরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বরিশালেও প্রচুর ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। কিন্তু সেসব চালের স্থানীয় বাজারে তেমন চাহিদা নেই। এখানে বেশি ফলন হয় আউশ, আমন ও বোরো জাতের ধান। এসব জাতের চালের দাম তুলনামূলক কম। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে বরিশাল জেলায় আউশ, আমন ও বোরো চাল উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৭৯৫ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে চাহিদা ছিল ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৩২৫ মেট্রিক টন।
নগরীর ফরিয়াপট্টি এলাকার পাইকারি চাল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাকির ট্রেডিং’র স্বত্বাধিকারী মুশফিকুর রহমান শাওন বলেন, নতুন ও পুরাতন চালের মূল্য ভিন্ন ভিন্ন। পুরাতনের চেয়ে নতুন চালের দাম তুলনামূলক কম হয়ে থাকে। বাজারে সব ধরনের চালই থাকে। বরিশালের চাহিদা অনুযায়ী চিকন চালের যোগান স্থানীয়ভাবে না হওয়ায় উত্তরা ল থেকে আনতে হয়। আর সেখানকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন মিলমালিকরা। তাদের নির্ধারিত দামের ওপর খরচ ধরে বরিশালের বাজারে বিক্রি করা হয়।

বরিশালেও অনেক চাল উৎপাদন হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে জাতের চাল এখানে উৎপাদন হয়, তা এখানকার বাজারে তেমন চাহিদা নেই। এসব চাল এখানে তুলনামূলক কম দামেই বিক্রি হয়। আর বরিশালে চালের অতিরিক্ত মজুত থাকে না। কেননা মিলমালিকরা একেক সময় চালের একেক দাম নির্ধারণ করায় মজুত করা সম্ভব হয় না। এদিকে, চালের মতই একইভাবে আমদানি-নির্ভর হওয়ায় বরিশালের বাজারে আলু ও পেঁয়াজের দামও থাকে চড়া। এখানকার কৃষকরা ধান উৎপাদন করলেও আগ্রহ নেই আলু ও পেঁয়াজ চাষে। চাহিদার অর্ধেক পরিমাণও পেঁয়াজ, আলু উৎপাদন হয় না বরিশালে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে জেলায় আলু উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১২ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন। আর পেঁয়াজ ১৩৮০ মেট্রিক টন, যা চাহিদার অর্ধেক পরিমাণও নয়। তাই এখানকার ব্যবসায়ীদের বাধ্য হয়ে রাজশাহী, মুন্সীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পেঁয়াজ ও আলু এনে চাহিদা পূরণ করতে হয়। আর সেই সুযোগটাই ব্যবহার করেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। পরিবহনসহ নানা খরচের অজুহাত তুলে চড়া দামে বিক্রি করেন এ দুটি পণ্য। নগরীর একমাত্র পাইকারি আলু ও পেঁয়াজের বাজার পোর্ট রোড ঘুরে দেখা গেছে, ভরা মৌসুমেও সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ২৬ ও লাল ২৭ টাকা কেজি দরে। আর মেহেরপুরের পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ এবং ফরিদপুর অ লের বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৮৮ টাকা কেজি দরে।
এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, বরিশাল জেলায় উৎপাদিত আলু ও পেঁয়াজ এই পাইকারি বাজারে আসে না। অন্য জেলা থেকে আনায় দাম একটু বেশি পড়ে। তবে, অভিযোগ আছে স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য মজুত করে দাম নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।
জানতে চাইলে পোর্ট রোড এলাকার পেঁয়াজ ও আলুর পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স পায়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এনায়েত হোসেন বলেন, দক্ষিণা লে কোল্ড স্টোরেজ না থাকায় কাঁচামাল অর্থাৎ আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন সিন্ডিকেট করা যায় না। বরিশালের বাজারে এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে তিনি ভিন্ন কারণ ব্যাখ্যা করেন। বলেন, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি ও সড়কে চাঁদাবাজির কারণে বরিশালে বাজারে আলু, পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে যায়। শুধু বরিশাল জেলার প্রবেশদ্বার গৌরনদী থেকে নগরীর পাইকারি বাজারে পণ্য আসতে প্রতিটি পরিবহনকে গুনতে হয় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। এই চাঁদা মাসিকও হয়ে থাকে। চাঁদা রোধ করা না গেলে বরিশালে পণ্যের দাম কমানো সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। আশার কথা হলো, মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠা শুরু করলে এ পণ্যের অস্বাভাবিক দামও কমতে শুরু করবে। কিন্তু একই সাথে জানান, দেশীয় পেঁয়াজ বাজারমূল্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে না। মূলত ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ায় দেশের বাজারে এই প্রয়োজনীয় পণ্যটির অস্বাভাবিক মূল্য।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. মুছা ইবনে সাঈদ বলেন, স্থানীয়ভাবে সব পণ্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ উৎপাদন না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা অনেকটা ইচ্ছেমত দামে বিক্রি করেন চাল, আলু, পেঁয়াজের মত গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। আবার কৃষক সরাসরি পণ্য পাইকারি বাজারে বিক্রি না করায় ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বরিশালে চাল চাহিদার চেয়েও বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে। কিন্তু চিকন চালটা এখানে তেমন একটা উৎপাদন হয় না। ফলে অন্য জেলা থেকে এসে বিক্রি করার অজুহাতে দাম বৃদ্ধি করছে। আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির খবর পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি।– রাইজিংবিডি.কম




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com