পান জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন পানের আবাদ বাড়ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পান চাষিদেও সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান কৃষি বিভাগ।
জানাগেছে, নড়াইল জেলায় সাধারনত দুই প্রকার পান চাষ হয়ে থাকে। মিষ্টি পান ও সাচি পান। তবে জেলায় মোট চাষের ৮০ ভাগই মিষ্টি পানের চাষ হয়ে থাকে। চলতি বছরে জেলায় ৫’শ ২৩ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ করেছেন কৃষকেরা। আর এ চাষের সাথে জড়িত রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। এক হেক্টর জমিতে বছরে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকার পান বিক্রি করা যায় বলে জানাগেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পান পোন হিসাবে বিক্রি হয়ে থাকে। ৮০ টি পানে এক পোন হয়। এক পোন পান ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্তু বিক্রি হয় পানের মান ভেদে। জেলার উৎপাদিত পান নড়াইল শহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র রুপগঞ্জ হাট। এখানে প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার পানের সবচেয়ে বড় হাট বসে।
এছাড়া মাইজপাড়া হাট, তুলারামপুর হাট, চালিতাতলা হাট, লোহাগড়া উপজেলার লোহাগড়া বাজার, এড়েন্দা, দিঘলিয়া বাজার, লাহুড়িয়া হাট, শিয়েরবর হাট, কালিয়া উপজেলার কালিয়া বাজার, বড়দিয়া বাজার, চাঁচুড়ি বাজার, নড়াগাতি বাজারসহ জেলার অন্তত বিশটি হাটে পাইকারি ও খুচরা পান বিক্রি করা হয়।
নড়াইল পৌরসভার উজিরপুর গ্রামের পান চাষি মন্টু ঘোষাল(৬০) বলেন, বাবা, ঠাকুর দাদারা পান চাষ করে সংসার চালাতেন। আমিও পান চাষ করে জীবন যাপন করছি। পান চাষে কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এবছর পানের চাষ আরও বাড়াবো।
তিনি আরও বলেন, ৫০ শতক জমিতে পান চাষ করেছি প্রায় তিন বছর আগে। গত বছর আড়াই লাখ টাকার পান বিক্রি করেছি। এবছরও প্রায় লক্ষাধিক টাকার পান বিক্রি করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। প্রতিহাটে সপ্তাহে দুইদিন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার পান বিক্রি করি।
এ গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই পান চাষ করে থাকে অথবা পানের বরজে কাজ করে জীবন যাপন করে থাকেন বলেও জানান তিনি। অনিল বিশ^াস বলেন, উজিরপুর গ্রামের প্রতিটি বাড়ির কেউ না কেউ পান চাষ বা বরজে কাজ করে থাকে। পান বরজে কাজ করা আমাদের আদি পেশা। করোনার সময়ে পান চাষে লস হইলেও এখন আমরা লাভের মুখ দেখছি বলেও জানান তিনি।
পান চাষি মালিডাঙ্গা গ্রাম থেকে পান বিক্রি করতে আসা উত্তম রায় বলেন, পান চাষ করতে প্রথম বছরে খরচ বেশি হয় ১ একর জমিতে প্রথম বছরে ১ লক্ষ ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। ২য় বছর থেকে খরচ খুবই কম। প্রতি বছর খরচ বাদে একর প্রতি প্রায় ৩ লক্ষ টাকা লাভ হয়। এর উপর নির্ভর করে আমার সংসার চলছে।
কম খরচে অধিক লাভ হয়, সেজন্য দিন দিন পান চাষ বাড়ছে জানিয়ে চন্ডিতলা গ্রামের শংকর চক্রবর্ত্তি বলেন, পান একবার চাষ করলে ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্তু ক্ষেত থেকে পান তোলা যায়। এতে করে লাভের পরিমান বেশি হয়, খরচ কম হয়। পান ক্রেতা ব্যাবসায়ী মাধব দে বলেন, আমি নড়াইলসহ বিভিন্ন হাট থেকে পান কিনে ঢাকা, খুলনা, পাবনাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করি। পানের মান ভেদে ৮০টাকা থেকে ১২০ টাকায় কিনে ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকা পর্যন্তু বিক্রি করে থাকি। এতে বিক্রেতা ও আমারা যারা ব্যবসায়ী আদাদেরও ভালো লাভ হয়। পান ব্যবসায়ী বিকাশ সাহা বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে পানের ব্যবসা করে আসছি। নড়াইলের পান সুস্বাধু হওয়ায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নড়াইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেনন, নড়াইল জেলার মাটি পান চাষের জন্য উপযোগী । পান চাষে কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন পানের আবাদ বাড়ছে। পানের তেমন কোন রোগ বালাই নেই বললেই চলে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে নড়াইলের পান। চলতি বছরে জেলায় ৫’শ ২৩ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান এ কৃষিবিদ।