আশি থেকে নব্বই দশকে, আমার বাংলাদেশ-বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে প্রতিষ্ঠা করেন, যায় যায় দিন ম্যাগাজিনের সম্পাদক, প্রথীত যশা-জ্ঞানী শফিক রেহমান। ভালোবাসা দিবসে তিনি তার বিশেষ লেখা প্রকাশ হ’তো। প্রতিটি সংখ্যা-প্রতিটি লেখা আমি, আমার পরিবার পড়তে পেরেছি। যেমন- ফাগুনের ভালোবাসা, মৌজাকে ঢিল ইত্যাদি। আজ দেশের নূতন প্রজন্ম, মধ্য প্রজন্ম, কবি, সাহিত্যিক, উচ্চ বিত্তরা দিনটাকে সেলিব্রেটি করে-উন্মুক্তভাবে। টিভি, রেডিও, পত্র-পত্রিকায়- বিশেষ লেখা অনুষ্ঠান প্রচার করে। সত্যিকার অর্থে দিবসের প্রতিপাদ্য বা লক্ষ্য উদ্দেশ্য কী-তা বুঝতে ক’জন পারে॥ ভালোবাসা দিবসটি হলো মানুষের অন্তরে মানুষের প্রেম, ব্যর্থতা, শ্রদ্ধাভক্তি, মা-বাবা, শিশু বিষয়ে একে অপরকে অন্তর থেকে বোঝা বা অনুভব করা। সেটা গানে হউক, কথায় হউক, মান-অভিমানে হউক, সবকিছুই মনের অজানা কথাকে জানানো বা অন্যকে বোঝানো। গুগলে সার্চ দিয়ে বিশ্ব ভালোবাসার বিষয়টিকে জানা মুহুর্তের ব্যাপার। শিক্ষার প্রসারতা বা জ্ঞানের চর্চা করলেই বোঝা যাবে বিশ^ ভালোবাসা আমাদের সমাজে কোন পর্যায়ে এসেছে। ফুল কেনা, অন্যকে দেয়া, যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরীরা দিবসটা মনে করে ভালোবাসা দিবস হিসেবে। সবকিছুই আমাদের ভালোবাসা। সবকিছুই আমরা উত্তোরণ করতে পেরেছি বা পারবো, বিষয়টি মোটেই তা নয়। বর্তমান পৃথিবীতে যুদ্ধ-বিগ্রহ, শিশু-নারী হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, ইভটিজিং সহ নানা অপরাধমূলক তৎপরতাকেই এখন আমাদের দেশে ও বিশে^ চলছে॥ কোন সভ্যতা, কোন নৈতিকতা, কোন মানবিকতা, ক্ষমতাধরদের কাছে তুচ্ছ বিষয়। বাজারের খাদ্যপন্য সহ প্রতিটি জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি যারা প্রতিদিন, দেশের মানুষকে কষ্ট দেয় তাদের কাছে ভালোবাসা দিবস চিড়তার মত তিতা। তাই ভালোবাসা দিবসকে আমরা সকলে, মানুষের কল্যানে যেন এগিয়ে আসতে পারি॥ যাক এই কথা, এ বারে বিদ্যাদেবী স্বরস্বতী পূজা সনাতন ধর্মের, দূর্গা মাতার ২য় কন্যা-স্বরস্বতী দেবী॥ তার হাতে রয়েছে, বিদ্যা, সংগীত সাধনা ইত্যাদি। দেশের প্রতিটি বিদ্যাপিঠ, ধর্মীয় স্থান, পাড়া, মহল্লায় শিক্ষার্থীরা আর্থিক সহয়তা দিয়ে, তাদের বিদ্যাদেবীর পূজা দেয়, প্রসাদ দেয়, চরণ করে, নূতন সাঁঝে, দেবীর কাছে নিজেকে উপস্থাপনা করে, শিক্ষা সংগীত লাভের আশায়॥ আমার সমাজে সত্যিকার সাধনা করে, বিদ্যাদেবীর আশির্বাদ পেয়েছে, তারা সত্যিই সাফল্য পেয়েছে, যদিও সংখ্যা খুবই কম। কারণ হ’লো সাধনা বা অধ্যবসায় জ্ঞান-সংগীত চর্চা, জীবনের শুরু থেকেই কখনো তারা করেনী, তারাই দেবীর আশির্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, সেই সংখ্যাই বেশী। শেষ কথা হ’লো সকল ধর্মের প্রতি মানুষের যেমন অন্ধ বিশ্বাস, সাধনা-চর্চা, সময়-অপচয়, অর্থ ব্যয় করলেই স্রষ্টার দয়া পওয়া যায় না। প্রয়োজন সাধনার, জয় বিদ্যাদেবী॥ সকলকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে শুভেচ্ছা আর বিদ্যাদেবীর প্রতি শ্রদ্ধা রইলো। একে অন্যের প্রতি ভালোলাগা-ভালোবাসার প্রকাশ ও স্মৃতি বন্ধনে ফুলের শুভেচ্ছা মনের প্রকাশ পাওয়া, না পাওয়ার অন্তরঙ্গতা, নাকি যন্ত্রনাসহ আপনজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিবারকে দিবসের নাম কী ভালোবাসা দিবস! এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো আরো গভীর, আরো মনের মহাকাশ প্রবেশ করতে হবে। জেলখানার কয়েদিকে ভালোবেসে কিছুটা সময় সহযোগীতায় যে, নারী চরিত্রের সম্প্রীতির বন্ধনকে আপন করেছে, আজ মানুষের অন্তরে গেঁথে গেছে সেই ভালোবাসা দিবস। যার আদি তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি। অপরদিকে মানব জীবনের বসন্ত হ’লো প্রথম ফাল্গুন। ফাল্গুন মানে শরীর মনে যৌবনের দোলা। সব প্রেমিক যুগল, নর-নারী, যুবক-যুবতীরা বসন্তকে সামনে রেখে নিজেকে গোলাপের মত সৌরভ সৌন্দর্য্যে নিজেকে ছড়িয়ে দেয়। সত্যিকার অর্থেই বসন্ত ঋতু এক অনন্য মনের খোড়াক থাকে বসন্ত উৎসব বলে। শুভ হউক ফাগুনের ভালোবাসা, শুভ হউক বসন্ত উৎসব প্রানে প্রানে॥ ভ্যালেনটাইন দিবস, বসন্ত উৎসব ও বিদ্যাদেবীর পূজা এই তিনে মুগ্ধ হই সকলে সকলের তরে। উৎসব মানুষকে প্রেরণা দেয় নিজেকে প্রস্তুত করার এবং মানুষ ও প্রকৃতির প্রেমে। ধন্যবাদ॥
মু. খালিদ হোসেন মিলটন
কলামিস্ট ও সাংবাদিক
সভাপতি
প্রেসক্লাব, গলাচিপা।