রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১২ অপরাহ্ন

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার : রুশ রাষ্ট্রদূত

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মানতিৎস্কি বলেছেন, বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্ক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে দৃঢ় ও শক্তিশালী প্রমাণিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টকে’ তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি ‘২০২৪ সালটিও সমানভাবে আশাব্যঞ্জক বলে মনে হচ্ছে’ বলে উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশী অংশীদারদের সাথে একত্রে তারা দুই দেশের জনগণের স্বার্থে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো সম্প্রসারণ ও বৈচিত্র্যময় করতে আগ্রহী। তিনি আরো বলেন, ‘এ বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই যে, আমাদের সব পূর্বশর্ত এবং একই প্রতিশ্রুতি রয়েছে।’
অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার রাশিয়ার।’
তিনি জানান, ২০২৩ সালের জানুয়ারি-নভেম্বরে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘রাশিয়া রেলপথ, সড়ক নির্মাণ, ভবন, ধাতুবিদ্যা এবং অন্যান্য শিল্প ক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি সরবরাহের মাধ্যমে নিজেদের রফতানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে আগ্রহী।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পশ্চিমা দেশগুলোর কৃত্রিম ও বিপরীতমুখী প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মস্কো বাংলাদেশে প্রধান কৃষি-শিল্পজাত পণ্য, প্রধানত গম ও সার রফতানি অব্যাহত রেখেছে।’ বাংলাদেশ ২০২৩ সালে রাশিয়া থেকে ২৭ মিলিয়ন টন শস্য আমদানি করেছে।
রাষ্ট্রদূত মানতিৎস্কি বলেন, রাশিয়ার পক্ষ থেকে ভোজ্য তেল, মটরশুঁটি, ছোলা ও মসুর ডাল দিয়ে রফতানি পণ্যের তালিকা বৃদ্ধি করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের সহযোগিতার মেরুদ- হলো জ্বালানি। ২০২৩ সালেও বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে প্রকল্প অব্যাহত রেখেছে গ্যাজপ্রম। ভোলা দ্বীপে আরো তিনটি কূপ খনন সম্পন্ন হওয়ায় মোট খননকৃত কূপের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০টিতে।
গ্যাস উত্তোলন এবং নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধানের জন্য কোম্পানির প্রস্তাবগুলো বিবেচনাধীন রয়েছে।মানতিৎস্কি বলেছেন, ‘প্রক্রিয়াধীন আরো প্রস্তাবনা এবং প্রকল্প রয়েছে, যেমন আরো স্থানীয় পরিশোধনের জন্য রাশিয়ান এলএনজি এবং অপরিশোধিত তেল সরবরাহ, রাশিয়ান সৌরশক্তি প্রযুক্তি, স্থানীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর আপগ্রেড এবং আরো অনেক কিছু।’
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প শিডিউল অনুযায়ী এগিয়ে চলছে। সাম্প্রতিক মাইলফলকগুলোর মধ্যে, ইউনিট-২-এ প্যাসিভ তাপ অপসারণ সিস্টেমের ইনস্টলেশন রয়েছে।
প্রথম ইউনিটটি এই বছরের শেষের দিকে পরীক্ষামূলক অপারেশন শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “প্রকল্পের সাধারণ ঠিকাদার জেএসসি ‘এএসই’র নিরাপত্তা সবসময়ই অগ্রাধিকার পেয়েছে। রাশিয়ান বিশেষজ্ঞরা সবচেয়ে উন্নত প্রকৌশল সমাধান এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে।”
তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে স্থাপিত একই ভিভিইআর-১২০০ রিয়্যাক্টর ইতোমধ্যে রাশিয়ায় চালু রয়েছে, যা তাদের দক্ষতা ও নির্ভরযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে।
ভূমিকম্প থেকে শুরু করে বিমান দুর্ঘটনা পর্যন্ত প্রায় সবকিছুতেই এরা বেঁচে থাকতে পারে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুক্তি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জ্বালানি নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
পারমাণবিক জ্বালানি পরিবেশ বান্ধব, কোনো কার্বন নিঃসরণ করে না এবং দূষণ করে না।
এটি সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য ও পরিষ্কার। রাশিয়া পরমাণু প্রকল্পের পুরো জীবনচক্রে আমাদের বাংলাদেশী অংশীদারদের সহায়তা করবে- যার মধ্যে রয়েছে চুল্লির জ্বালানির দীর্ঘমেয়াদী সরবরাহ, প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণ এবং পারমাণবিক বর্জ্য পরিচালনার জন্য আমাদের বাধ্যবাধকতা।
তিনি বলেন, রূপপুর একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়েও বেশি কিছু। কয়েক ডজন বাংলাদেশী কোম্পানি নির্মাণ কাজের জন্য তাদের সেবা ও উপকরণ সরবরাহ করে।
তিনি বলেন, এনপিপি প্রকল্পটি স্থানীয়দের জন্য ১৮ হাজারেরও বেশি কর্মক্ষেত্রের মাধ্যমে অর্থনীতির একটি নতুন খাত তৈরি করবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, রাশিয়ায় পরমাণু বিশ্ববিদ্যালয় এবং রূপপুরের শিক্ষাকেন্দ্রে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রাশিয়া বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপুল সংখ্যক দক্ষ প্রকৌশলী যুক্ত করতে সহায়তা করছে যা কেবল পারমাণবিক শিল্পেই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও অর্থবহ অবদান রাখতে সক্ষম।
তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, জানা গেছে যে কিছু পশ্চিমাপন্থী মহল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পকে কলঙ্কিত করার পরিকল্পনা করছে।
মানতিৎস্কি বলেন, অর্জনগুলোর দিকে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে স্থানীয় সুযোগ-সন্ধানী সাংবাদিকরা স্বল্পস্থায়ী বিবেচনার জন্য আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতীককে ক্ষুণ্ণ করতে প্রস্তুত।
তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরনের কোনো প্রকল্পে অনিবার্য ছোটখাটো ত্রুটিগুলোকে অতিরঞ্জিত করে এবং এর সুফলের দিকে চোখ বন্ধ করে রাখে।
ইউক্রেন ও ইউক্রেন পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি রাশিয়া-বাংলাদেশ বিষয়ের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, গত বছর পশ্চিমা দেশগুলোর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক অসহিষ্ণুতা দেখা গেছে। অন্য সবার মতামতকে উপেক্ষা করে নিজেদের কায়েমী স্বার্থের উপর ভিত্তি করে যারা এখনো বিশ্বে তাদের ক্ষয?িষ্ণু আধিপত্যকে আঁকড়ে ধরে আছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, পশ্চিমারা সৎ চুক্তি করতে উদ্বেগজনক অক্ষমতা প্রদর্শন করেছে এবং একটি অনির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘ ও অন্যান্য বহুপক্ষীয় মঞ্চে রাশিয়া সার্বভৌম সমতা ও অবিভাজ্য নিরাপত্তার নীতির ভিত্তিতে সমস্ত রাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ বিকাশের পক্ষে মত দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া পশ্চিমাদের সাথে সম্মানজনক সংলাপ ও বাস্তবসম্মত সহযোগিতার সুযোগ বজায় রেখে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার পরিকল্পনা কার্যকরভাবে ব্যর্থ করে দিয়েছে।’
নভেম্বরে রুশ প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের একটি যুদ্ধজাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে শুভেচ্ছা সফর করে। গত ৫০ বছরের মধ্যে এই প্রথম রুশ নৌবাহিনীর জাহাজ বাংলাদেশের বন্দরে প্রবেশ করল।
১৯৭২-১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে মাইন অপসারণ ও মুক্ত করার কাজে নিয়োজিত দুজন প্রবীণ রুশ নাবিক ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে বিজয় দিবস উদযাপনে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন ডিক্যাব সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com