ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় মাটি ও উত্তোলিত বালি বিক্রির হিড়িক পড়েছে। আইন অমান্য করে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাঠ থেকে ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি (টপ সয়েল) এবং বসতবাড়ির আশে পাসে পুকুর কিংবা সংস্কারের নামে মাটি কেটে এবং বালি উত্তোলন করে বিক্রি করছেন ভূমিখোর একাধিক চক্র। এসব ভূমিখোররা ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় ব্যবহার করে এসব অবৈধ মাটি এবং বালির বানিজ্য করে থাকেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
স্থানীয় ইটভাটাসহ রাস্তার পাশে, ব্যক্তি মালিকানায় থাকা নিসু জমি ভরাট কিংবা বসত ভিটা ভরাটে এসব মাটির চাহিদা থাকায় চড়া দামে বিক্রি করে তারা কামিয়ে নেচ্ছে মোটা অংকের টাকা। দিনের পর দিন কৃষি জমির মাটি ও বসতবাড়ির আশে পাশে মাটি কাটার ফলে মাটির উর্বরতা যেমন হারাচ্ছে; তেমনিভাবে হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশের ভারসাম্য। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কালীগঞ্জের পৌর ও ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে সন্ধ্যা নামতেই মাটি কাটা এবং বালি উত্তোলনের তৎপরতা শুরু হয়। রাত গভীর হলেই এস্কাভেটর লাগানো হয়। নির্বিচারে মাটি কাটার ফলে জমিগুলো ক্রমশ চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। স্থানীয়রা জানায়, মাটিখেকোরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। মাঝেমধ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে নামমাত্র অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেলেও কিছু দিন পর আবার শুরু হয় মাটি কাটা কিম্বা বালি উত্তোলন। মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত লাইসেন্স বিহীন ট্রাক্টর মাটি কিংবা বালি বোঝাই করে গ্রামীণ, পৌর ও মহাসড়কের বিভিন্ন রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ওই গাড়ি থেকে পড়া মাটি রাস্তায় চলাচলের ব্যাপক অসুবিধার সৃষ্টি করে। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাগুলোতে সৃষ্ট কাদামাটির কারণে দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা পরিষদ, ভূমি অফিস এবং থানা যাতায়াতের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাটি কারবারিরা সোর্স লাগিয়ে রাখে। এসব সোর্সদের কাজ হচ্ছে প্রশাসননের গতিবিধির ওপর নজরদারির মাধ্যমে অভিযানের আগাম তথ্য জানিয়ে দেওয়া। সরেজমিনে উপজেলার শিমলা রোকনপুর ইউনিয়নের ছোট শিমলা বাজার সংলগ্ন মাদ্রাসার সামনে জোড়া ব্রিজের মুখে বাওড়ে বড় পুকুর খননের নামে রাতভর ভেকু মেশিনে মাটি কেটে বিক্রি করছেন আব্দুল হক নামের এক ব্যক্তি। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, মাটি কাটা কিংবা বালি উত্তোলনের জন্য সরকারি অনুমোদন না থাকলেও রাস্তার কাজে এই বালি ও মাটি দেওয়া হয়। এ কারনে অসুবিধা হয় না। গাড়ি প্রতি ১২ শত টাকা দরে আমি মাটি বিক্রি করি। আর বালি ১২ টাকা সেপ্টি হিসাবে ধরা হয় এবং গাড়ি প্রতি বালি ২৫ শত টাকা দরে বিক্রি করছি। আমার অনেক বালি তোলা আছে।আমি রাতের বেলায় কাজ শুরু করি। এদিকে সুন্দরপুর দূর্গাপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামের স্বপন নামের এক ব্যক্তি পুকুর সংস্কারের নামে রাত ১১ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।স্বপন বাবুর সাথে কথা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, আমি স্থানীয় সজল মেম্বরের কাছে পুকুর লীজ দিয়ে দিয়েছি। সে তার লোকজন নিয়ে মাছ চাষের সুবিধার জন্য মাটি কাটছে। সাত্তার হোসেন নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, কালীগঞ্জে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। রাতারাতি মাটি কেটে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নিচ্ছে ভূমিখোররা। এগুলো দেখার কেউ নেই। অতিসত্বর এই ধরনের কাজ বন্ধ করতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) হবিবুল্লাহ হাবিব বলেন, মাটি কেটে বিক্রির নানা অভিযোগ প্রতিদিনই পাচ্ছি। কোথাও কোথাও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচলনা করে জরিমানাও করা হচ্ছে। তবুও তারা থামছে না। আপনি বললেন আমি দেখছি।অবশ্যই এ ধরনের কাজের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।