সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ১২:০৪ পূর্বাহ্ন

অবসরেও আলো ছড়াচ্ছেন মথনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম

হুমায়ুন কবির (কালীগঞ্জ) ঝিনাইদহ
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ১০নং কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত সাকো বাজারসংলগ্ন এম এম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের সামনে অবস্থিত ৪৪ নং মথনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলটির প্রধান ফটক পার হয়ে পশ্চিম পাশের ২ নং ভবনের তৃতীয় শ্রেণীর পাঠদান কক্ষে সুঠাম দেহের অধিকারী একজন শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের গণিত শিখাতে দেখা যায় ।এসময় শ্রেণীকক্ষের সকল শিক্ষার্থী মনোযোগ দিয়ে শিক্ষকের কথা শুনছিল। উনি এই দিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম। গুণী এই শিক্ষক ভালোবেসে ১৯৮৩ সালের ২০ শে সেপ্টেম্বর বেছে নিয়েছিলেন শিক্ষকতা পেশাকে। সেই থেকে মানুষ গড়ার কারিগরের যথার্থ ভূমিকায় নিজেকে সবসময় নিয়োজিত রাখতেন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে মথনপুর সরকারি প্রাথমিক দিদ্যালয়ে যোগদানের পর বিদ্যালয়টির লেখাপড়ার পরিবেশসহ অন্যান্য সকল দিকে নিয়ে আসেন অভূতপূর্ব পরিবর্তন। শিক্ষার্থীদের পড়া লেখার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে আনন্দের সাথে পাঠদানের জন্য নেন বিশেষ উদ্যোগ।প্রাথমিকের দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীকে ৩ টি পাঠ্যবই পড়তে হয়। দ্বীতিয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী যখন তৃতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয় ; তখন তাদের মোট ৬ টি পাঠ্যবই পড়তে হয়। এ জন্য তৃতীয় ও চতুর্থ শেণীর শিক্ষার্থীদেরকে প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম প্রতিদিন দেড় ঘন্টা স্কুলে অতিরিক্ত ক্লাস করাতেন। যে কারণে শিক্ষার্থীদের বই পড়ার ভীতি কমে যেত। নিয়মিত অতিরিক্ত ক্লাস করায় ফলাফলও ভালো হতো। কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের সর্বমোট ১৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব সময় পড়ালেখাসহ সব দিক থেকে বিদ্যালয়টির অবস্থান থাকতো প্রথম। এবার অনুষ্ঠিত জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৪-এ ইউনিয়ন পর্যায়ে মোট ২৬ টি ইভেন্টের মধ্যে ২৩ টিতে পুরস্কার জেতার মধ্য দিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে বিদ্যালয়টি। অবকাঠামোগত ছোট খাটো শিক্ষা সহায়ক অনেক উন্নয়নমূলক কাজ প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম নিজ উদ্যোগ ও অর্থায়নে করতেন। শ্রেণীকক্ষগুলোতে উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ ,লাইট, ফ্যান,বেঞ্চ এবং শ্রেণিকক্ষের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, শ্রেণিকক্ষ গুলো শিক্ষা সহায়ক উপকরণ দ্বারা সাজসজ্জা করণসহ সব দিক পরিপাটি করে রাখতেন। সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের সাথে ছিলো তার অন্যরকম মিতালী। কর্ম পাগল এই শিক্ষক বিদ্যালয়টিতে যোগদানের পর মাত্র একদিন ছুটি নেন। এসব দিক বিবেচনায় আশেপাশের গ্রামে স্কুল থাকা সত্তেও অনেক অবিভাবক তাদের সন্তানকে এই স্কুলটি ভর্তি করেন। বতর্মানে বিদ্যালয়টিতে ৩১৫ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত পাঠগ্রহন করছেন। সিরাজুল ইসলাম যদি দেখেছেন কোন শিক্ষার্থী স্কুলে আসেনি, তাহলে তিনি ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে উপস্থিত হয়ে খোজখবর নিতেন। তার দক্ষ নেতৃত্বে বিদ্যালয়টি ২ বার উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ট স্কুলের গৌরব অর্জন করে। সকলের প্রিয় আপদামস্তক মানুষ গড়ার খাটি এক কারিগর মোঃ সিরাজুল ইসলাম অফিসিয়ালি ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ -এ অবসর গ্রহণ করেন। শেষ কর্ম দিবসে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের কাদিয়ে নিজে কেদে বাড়ি ফিরলেন তিনি।ব্যক্তিগত জীবনে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। একমাত্র ছেলে প্রোকৌশলী বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি অবসরে গেলেও প্রিয় শিক্ষার্থীদের টানে এবং স্কুলে শিক্ষার্থী অনুযায়ী শিক্ষক কম থাকায় নিয়মিত স্কুলে এসে শেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে স্কুলে পাঠদান করাচ্ছেন। বিদ্যালয়টিতে পড়ুয়া পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী প্রতিভা দেবনাথের সাথে কথা হলে সে অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে, সিরাজুল ইসলাম শুধু আমাদের স্যারই ছিলেন না আমাদের একজন ভালো বন্ধুও ছিলেন। আমরা স্যারকে খুব ভালোবাসি। বিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থী শারমিন খাতুন বর্তমান শিশু শ্রেণীতে পড়ুয়া সামিহা রাইসার অবিভাবক এই প্রতিবেদককে জানান, স্যারের মত ভালো মানুষ আর হয় না। স্কুলটির সবকিছুই তিনি পরিবর্তন করে দিয়েছেন। এখনো তিনি বিনা পরিশ্রমে পাঠদান করাচ্ছেন। আমরা তার দীর্ঘায়ূ কামনা করছি। মথনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, সময় হলে বিদায়তো নিতেই হবে। তবে অবসর সময়ে বসে না থেকে শিক্ষার্থীদের সাথে সময় কাটাতে স্কুলে আসি। স্কুল,ছাত্র-ছাত্রী আমাকে সবসময় টানে। আমি চেষ্টা করেছি, বাকিটা সকলে বলতে পারবে।আমৃত্যু শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাওয়ার আশা রয়েছে মনে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com