লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ঢাকা বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে চলছে বালু ক্রয়-বিক্রয়ের জমজমাট ব্যবসা। ফলে সড়কের ফুটপাত জুড়ে অনিয়ন্ত্রিত এ ব্যবসার কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গত ১০ বছরে এ সড়কে অন্তত ১০ জনের প্রানহানি ও দুই শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সবশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারী পাথর বোঝাই ট্রাক চাপায় স্থানীয় এক যুবক মারা গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে প্রতিদিন বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে ছয় চাকা সহ ভারী ট্রাকে পাথর সহ বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করছে। এছাড়াও বুড়িমারী স্থরবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে প্রায় ৩৫-৪০টি নাইটকোচ বাস মিনিবাস মাইক্রবাস প্রাইভেট কার সহ শত শত যানবাহন চলাচল করছে। আর এই মহাসড়কের কিছু অংশ দখলে নিয়ে হাজার হাজার টন বালু স্তপ করে রেখে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। এসব বালু অপরিকল্পিতভাবে স্থানীয় ধরলা নদী সহ বিভিন্ন শাখা নদী থেকে উত্তোলন করে ট্রাকটরের মাধ্যমে লোড করে সড়কের পাশে রাখা হচ্ছে। পরে সড়কের ওপরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে বালু বোঝাই করায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে অনেক সময় স্থলবন্দর হতে পণ্য পরিবহনের ভারী গাড়ি এবং নাইটকোচগুলো প্রয়োজনীয় সাইড নিতে ও দিতে পারে না। এতে মারাত্মক ঝুকি নিয়ে মোটরসাইলে, ইজিবাইক, রিক্সা ও অন্যান্য ছোট যাত্রীবাহী গাড়ি গন্তব্যে চলাচল করছে। এ সময় ভারী গাড়ির নিচে পড়ে কেউ গুরুতর আহত হচ্ছে আবার কেউ নিহত হচ্ছে। সঙ্কুচিত এ সড়কটির দু’পাশে দীর্ঘদিন থেকে এভাবে বালুর ব্যবসা চললেও প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে শুরু করে বাউরা ইউনিয়ন পর্যন্ত মহাসড়ক ও কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কের অন্তত শতাধিক স্থানে বালুর স্তপ করে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পাটগ্রাম পৌরসভা, পাটগ্রাম ইউনিয়ন, শ্রীরামপুর ও বুড়িমারী ইউনিয়নের ধরলা নদীর প্রবাহিত অংশের নিকটবর্তী প্রায় ১৫ টি গ্রামের অন্তত ২০ থেকে ২৫ টি আঞ্চলিক পাকা ও কাঁচা সড়ক দিয়ে বেপরোয়া গতির ট্রাক্টরের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত এসব বালু পরিবহন করা হচ্ছে। এতে একদিকে সড়ক গুলোতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে পথচারীরা আহত এবং নিহত হচ্ছে। জানা গেছে গত ১০ বছরে মহাসড়কে ১০ জনের অধিক প্রাণহানি এবং প্রায় দুই শতাধিক মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ঘুন্টি বাজার এলাকায় পাথরবাহী লরির পিছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে আমিনুর রহমান(৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি মহাসড়কের সাথে বালু রাখায় একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে পাথর নিয়ে ঢাকাগামী ট্রাকের চালক কুষ্টিয়ার ভেরামারার মিনারুল ইসলাম(৩৫) বলেন এক লেনের মহাসড়কের কিছু অংশ জুড়ে এভাবে বালু স্তপ করে রাখায় ভারী যানবাহন চলাচলে ঝুকির সৃষ্টি হচ্ছে এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। বুড়িমারী ইউনিয়নের ঘুন্টি বাজার এলাকার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম(২৮) বলেন মহাসড়কের পাশে এভাবে বালু রাখায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। অনুনোমোদিত ভাবে কেউ বালু রাখতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এ ব্যাপারে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলাম বলেন এ বিষযে আমি বালু ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেছি। তাদের বালু সরিয়ে নিতে বলেছি। যারা সরাবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নদী থেকে কেউ যদি নৌকা দিয়ে বালু তোলে সেক্ষেত্রে আমরা বাধা দিতে পারিনা। তবে কেউ যদি অন্য উপায়ে তোলে তাহলে আমাকে জানালে যারা তুলছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।