একাডেমিয়া পাবলিশিং হাউজ লিমিটেড (এপিএল) প্রকাশিত পাঁচটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ উপলক্ষে ২৬ ফেব্রুয়ারি, রোজ সোমবার, বিকাল ৪টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্ন্থ উন্মোচন মঞ্চে মোড়ক উন্মোচন করা হয়। প্রকাশিত নতুন বইগুলোর মোড়ক উন্মোচন করেন প্রফেসর ড. মাহবুব আহমেদ, প্রফেসর ড. আবু খুলদুন আল মাহমুদ, কবি মহিবুর রহমান, অধ্যাপক ড. মাসুদ আলম, ড. মমতা হেনা, রাজিয়া আক্তার চৌধুরী, রওশন জান্নাত, ইমদাদুল হক, আব্দুল কাদের জিলানী প্রমুখ । উদ্বোধনী বক্তব্য দেন এপিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এম. আবদুল আজিজ।
ইমদাদুল হক অনূদিত চারটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। বইগুলো হচ্ছে- অভিচিন্তন: একটি ইসলামী মনোআধ্যাত্মিক চর্চা, আত্মার খোরাক: একজন চিকিৎসকের আবেগীয় আচরণ থেরাপি, অনূদিত মানব মনস্তত্ত্বের কুরআনী ধারণা এবং প্যারেন্টিং (৩য় খন্ড): চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব গঠন কৌশল। ইমদাদুল হক জয়পুরহাট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ সেখানেই। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। বর্তমানে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন। স্বপ্ন দেখেন এক সোনালী প্রজন্ম বিনির্মাণের। তার প্রতিটি নিশ্বাস আর ভাবনার অনুরণনে আধুনিক যুবমানসের যাতনা ও চেতনা। তাই তার ধ্যানে-জ্ঞানে শিশু ও বয়োসন্ধিকালের মনস্তত্ত্ব।
অভিচিন্তন: একটি ইসলামী মনোআধ্যাত্মিক চর্চা এর লেখক মালিক বাদরি। মালিক বাদরি মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থ্যট অ্যান্ড সিভিলাইজেশন-এর মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি একজন বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী থেরাপিস্ট। আরবি ও ইংরেজি ভাষায় লিখিত তার অনেক বই এবং গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। Islam and Analytical Psychology, Islam and Alcoholism, The Dilemma of Muslim Psychologists, Contemplation: An Islamic Psychospiritual Studz গ্রন্থগুলো তার ইসলামী মনোবিজ্ঞান বিষয়ক মৌলিক প্রকাশনা। মালিক বাদরি ইসলামি চিন্তাধারার গভীরতা ও প্রশস্ততা উভয়টি প্রকাশের ক্ষেত্রে স্মরণীয় অবদান রেখেছেন। তিনি ইসলামের আধ্যাত্মিকভাবে উচ্চতর, সম্পূর্ণ মানবিক ও সত্যিকারের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পুনরুদ্ধারের পথ র্নিদশে করেছেন। অভিচিন্তন এমন একটি বই যা জীবনকে বলে দিতে পারে। শুধু তাত্ত্বিক উপায়ে নয় বরং হৃদয় স্পর্শ করে এমন পদ্ধতিতে। সাধারণত মনোবিজ্ঞান হিসেবে বিবেচিত বিষয়ের মধ্যে এটি আধ্যাত্মিকতাকে অনুপ্রবিষ্ট করে। এটি মুসলমানদেরকে তাদের উচ্চ আহ্বান অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা রাখে।
আত্মার খোরাক: একজন চিকিৎসকের আবেগীয় আচরণ থেরাপি বইটি নবম শতাব্দীর বহুবিদ্যা বিশারদ আবু যায়েদ আল বালখি রচিত মাসালিহুল-আবদান ওয়াল আনফুস শীর্ষক পাণ্ডুলিপির দ্বিতীয় অংশের ইংরেজি বই ঝঁংঃবহধহপব ড়ভ ঃযব ঝড়ঁষ- এর বঙ্গানুবাদ। আজ থেকে এগারো শতাব্দীরও বেশি আগে মনস্তাত্ত্বিক ব্যাধিগুলো নিয়ে লেখক যে বিষয়গুলোর আলোকপাত করেছেন, তা আমাদের অনেকের কাছেই রীতিমতো বিস্ময়কর। বইটিতে আল-বালখি মানসিক রোগের উপসর্গ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শরীর ও আত্মাকে কীভাবে স্বাভাবিক সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় সেসম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি মানুষের মানসিক চিকিৎসার প্রকৃতি সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি তুলে ধরেছেন। এটি তার একটি আশ্চর্যজনক কীর্তি যে, তিনি মানসিক রোগের যে অবস্থাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন, তার অনেকগুলোই ক্লিনিক্যালভাবে সংজ্ঞায়িত হওয়ার আগে শুধু তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক বিশ শতকের কিছু অগ্রগতি ছাড়া বহু শতাব্দী ধরে অজানা ছিল এবং এর কোনো চিকিৎসা ছিল না। স্ট্রেস, বিষণ্নতা, ভয় ও উদ্বেগ, ফোবিয়া ও অবসেসিভ-কম্পালসিভ ইত্যাদি মানসিক ব্যাধি নির্ণয় এবং আবেগীয় আচরণ রোপির মাধ্যমে চিকিৎসার যে পদ্ধতি তিনি দিয়েছেন তা আধুনিক মনোবিজ্ঞানের পদ্ধতির সাথে সম্পর্কযুক্ত ও সংগতিপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী মানুষের মাঝে উদ্বেগ এবং মেজাজের ভারসাম্যহীনতার ক্রমবৃদ্ধির এই যুগে বইটির খুবই ব্যবহারযোগী হিসেবে বিবেচিত হবে।
মানব মনস্তত্ত্বের কুরআনী ধারণা বইটি র্বতমান প্রক্ষোপটে খুবই গুরুত্বর্পূণ। বর্তমানে মানবজাতি সংকটের মধ্যে রয়েছে। আমারে মধ্যে খুব কম লোকই বুঝতে সক্ষম যে, আমাদের জীবন এবং বৃহত্তর বিশ্বের সমস্যা কোথায়। কীভাবে এটি ঘটল এবং কীভাবে মানুষ মানবতা থেকে এতটা ‘বিচ্ছিন্ন’ হয়ে গেল? কেন হতাশা, উদ্বেগ, ভয় ও আত্মহত্যার মতো মনস্তাত্ত্বিক ব্যাধিগুলো বাড়ছে এবং কেন পশ্চিমা প্রচলিত চিকিৎসাগুলো এর গতি থামাতে অক্ষম হচ্ছে? এটিকে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের নিজেদের জীবনের উদ্দেশ্য অন্বেষণ করতে এবং সেই মূলনীতি বাকি মানবতার কাছে পৌঁছে দিতে প্রথমে নিজের দিকে তাকাতে হবে। আধুনিক পশ্চিমা মনোবিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং অনেককে সাহায্য করতে পারে এমন থেরাপির বিকাশ সত্ত্বেও ‘মানব আত্মা’ এবং আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রটি মূলত অনাবিষ্কৃত রয়েছে। এর কারণ হলো, তাদের পক্ষে মানুষের মনকে বাহ্যিক উদ্দীপনায় সাড়া দেয় এমন ‘মেশিন’ বিবেচনা করা আরো সুবিধাজনক। মানব মনস্তত্ত্বের কুরআনী ধারণা বইটি সম্পাদনা করেছেন ড. জাফর আফাক আনসারী। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ইসলামাবারে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সাইকোলজিতে যোগদানের আগে তিনি করাচি এবং পেশোয়ার বিশ্বব্যিালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সাইকোলজি, ইসলামাবাদে দশ বছর ধরে অধ্যাপক ও পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাকিস্তান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (১৯৮৪-১৯৮৮) এবং ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব সাইকোলজিস্ট-এর সভাপতি ছাড়াও তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার (আইআইইউএম) মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি সাইকোলজিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট এবং এডুকেশনাল সাইকোলজি বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। ড. হিশাম আলতালিব, ড. আব্দুলহামিদ আবুসুলাইমান এবং ড. ওমর আলতালিব এর প্যারেন্টিং (৩য় খন্ড): চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব গঠন কৌশল বইটি সম্পাদনা করেছেন ফাতেমা মাহফুজ, রওশন জান্নাত ও ড. মুমতাহিনা। বইটি সন্তান প্রতিপালনে পিতা-মাতাকে সুদক্ষ করে তোলার গাইডলাইন। কীভাবে অভিভাবক সন্তানকে চরিত্রবান করে গড়ে তুলবেন সে সম্পর্কিত দরকারী বিষয়গুলো বর্ণনা করা হয়েছে। শিশু সন্তান লালন-পালনে দরকারী তাত্ত্বিক জ্ঞান ও বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দেয়া পরামর্শগুলো শতভাগ সময়োপযুগী। শিশুর সঠিক যত্ন ও যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত বিকাশ নিশ্চিতে সর্বশেষ গবেষণাগুলোর তথ্য-উপাত্তে এটি পরিপূর্ণ। বইটিতে চরিত্র, জ্ঞান, মূল্যবোধ ও দক্ষতা বিকাশের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সী সন্তানদের মধ্যে একটি বিশ্বাস-ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ার জন্য বাবা-মাকে উপযুক্ত নির্দেশিকা প্রদান করা হয়েছে। বইটিতে শিশুদের লালন-পালনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যার মোকাবেলায় ইসলামিক সমাধান প্রস্তাব করা হয়েছে।
বইগুলো হচ্ছে- আবদুল কাদের জিলানীর দার্শনিক কবি আল্লামা ইকবাল। লেখকের দর্শনধারার বই আল্লামা ইকবাল চিন্তা ও দর্শন” বইটি পাঠকসমাজে ফেলেছিলো ব্যাপক সাড়া। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন বই দার্শনিক কবি আল্লামা ইকবাল” বইটি প্রকাশিত হয়েছে এবারের বইমেলায়। ইকবাল ওরিয়েন্টাল এবং অক্সিডেন্টাল প্রাচ্য ও প্রতীচ্য সোসাইটির বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্যের মধ্যে একটি আত্মিকতা ও আত্মীয়তার মেলবন্ধন রচনা করতে চেয়েছিলেন। সেই যে জীবনের অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে তুলেছিলেন সেটাই জগৎ মনোমন্দিরে স্থাপন করতে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। তাঁর সমগ্র জীবন কাব্য ও দর্শন জীবনমঞ্চে উপবীত করেছিলেন-বিশেষ স্বাতন্ত্র্য চিহ্নিত ব্যক্তিসত্তার।উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সাল থেকে সৃজনশীল একাডেমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ের সিলেবাস সংশ্লিষ্ট বই প্রকাশ করে আসছে। বইমেলায় এপিএল এর স্টল নং ১৭৬।