ছয়ঋতুর বাংলাদেশে এখন গ্রীষ্মকাল চলছে। কাঠফাটা রোদ্দুর আর অসহ্য গরমে নিস্তেজ হয়ে পরেছে প্রাণিকুল। গ্রীষ্মের দাবদাহে হাঁসফাস করছে জনজীবন। তবে সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দিতে কৃষ্ণচূড়া ও সোনালু ফুল প্রকৃতিতে মেলে ধরেছে তাঁর আপন রঙ। চায়ের রাজধানী খ্যাত পর্যটন নগরী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের পথে-প্রান্তরে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম ফুল এবং সোনালুর অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। রবিবার (১৩ মে) বিকেলে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শহরের ভানুগাছ রোড, কালিঘাট রোডসহ উপজেলার বিভিন্ন অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও পথঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে চোখে পড়ছে কৃষ্ণচূড়া এবং সোনালু ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল শহরের ভানুগাছ সড়কের বিজিবি সেক্টর এর সামনে থেকে শুরু করে টি মিউজিয়াম এর আগ পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের উভয় পাশে সারি সারি চা-বাগান, সবুজ গাছ-গাছালী ও কচি পাতার ফাঁকে হলুদ বর্ণের সোনালু ও কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম ফুল প্রকৃতিকে দারুণভাবে সাজিয়ে তুলেছে। সড়কের পাশে কিংবা প্রতিষ্ঠানের পাশে ফুটন্ত কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুল ও সোনালুর দোল দেখে মনে হয় প্রকৃতির লাল-হলুদাভ উষ্ণ অভ্যর্থনা। এছাড়াও শ্রীমঙ্গল শহরের কালিঘাট রোড, ভানুগাছ রোড (পৌর সুপার মার্কেটের সামনে), কলেজ রোড, হবিগঞ্জ রোড, মৌলভীবাজার রোড, উপজেলার আশিদ্রোন, সিন্দুরখান, কালাপুর, সাতগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক এবং সিন্দুরখান হুগলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে কৃষ্ণচূড়া ও সোনালু গাছের অপরুপ সৌন্দর্যের দেখা মেলে। লাল ও হলুদ রঙের বাহারি শোভা ছড়িয়ে ঝুলে থাকা ফুলের সৌন্দর্য পথচারিদের মোহিত করছে বলে স্থানীয়রা জানান। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা শাহিন ও রফিক নামের দুই তরুণের সঙ্গে দেখা হয় বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট এর প্রবেশমুখে। এসময় তাদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, দুইতিন দিন আগে চলন্ত রাস্তায় দূর থেকে ফুলের সৌন্দর্য দেখে ভাবছিলাম ছুটির দিন বিকেলে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসবো। তাই আজ ছুটির দিন বন্ধু সাদমানকে নিয়ে রক্তিম আর হলুদের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছি। এ যেন প্রকৃতির অপার কারুকাজ। দর্শনার্থী শাহিন মিয়া বলেন, একসময় সোনালু গাছ প্রকৃতিতে অনেক বেশি থাকলেও ধীরে ধীরে তা কমে আসছে। গাছটি সাধারণত যত্ন করে লাগানো হয় না বরং সে নিজেই বেড়ে ওঠে অযন্তে অবহেলায়। যখন ফুল ফোটে তখন সবাইকে মুগ্ধ করে। তবে বেড়ে ওঠার সময় তেমন দৃষ্টিতে না পড়লেও ফুল ফোটার পর দেখে সবার মন-প্রাণ প্রশান্তিতে ভরে যায়। শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ আশিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে গ্রামে একসময় অনেক সোনালু গাছ চোখে পড়তো। এছাড়াও হাট, বাজার ও গঞ্জের চারপাশেও দেখা যেত হলুদিয়া সাজের সোনালুর উপস্থিতি। এখন হাতেগোনা কিছু গাছ দেখা যায় পথে প্রান্তরে। কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, এ গাছের কাঠ খুব একটা দামি নয় বলে কিংবা গাছটি খুব ধীরে বাড়ে বলেই কেউ আর তেমন উৎসাহ নিয়ে সোনালু গাছ রোপণ করেন না। প্রাকৃতিকভাবে যা হয়, তার ওপর ভর করেই হলুদ-সোনালি রঙের সৌন্দর্য বিতরণ করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে সোনালু।
কুঞ্জবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ একরামুল কবীর বলেন, গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে যেসব ফুল ফোটে তার মধ্যে সোনালু উল্লেখযোগ্য। কিশোরীর কানের দুলের মতো বৈশাখী হাওয়ায় দুলতে থাকে হলুদ-সোনালি রঙের থোকা থোকা ফুল। যখন ফুল ফোটে তখন কারো সাধ্য নেই এ গাছকে দৃষ্টি না দিয়ে এড়িয়ে যাবার। হলুদবরণ সৌন্দর্যে যেন মাতোয়ারা করে রাখে চারপাশের পরিবেশ। ভানুগাছ রোডের রাস্তার দু পাশে ফোটা সোনালু ফুলের সৌন্দর্যে শ্রীমঙ্গলে আসা পর্যটক এবং পথচারীরা মুগ্ধ হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কৃষ্ণচূড়া বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া। সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাসে কৃষ্ণচূড়া ফুটে। কৃষ্ণচূড়ার আদিনিবাস পূর্ব আফ্রিকায়। আর সোনালু ফুলের আদি নিবাস হিমালয় অঞ্চলে। সোনালু ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাসিয়া।