শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:১৫ অপরাহ্ন

বিশ্ববাজারে এ বছর কি তেল-গ্যাসের দাম কমবে?

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩ মার্চ, ২০২৪

কারখানা সচল রাখা থেকে শুরু করে খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণ, মানুষ ও পণ্য পরিবহন, ঘরবাড়ি উষ্ণ বা শীতল রাখার জন্য উন্নত সমাজে আমাদের প্রচুর পরিমাণে জ্বালানির প্রয়োজন হয়। সে কারণে জ্বালানির দাম বাড়লে আমাদের জীবনযাত্রার খরচও বেড়ে যায়। করোনাভাইরাস মহামারির সময় বিষয়টি আরও স্পষ্টভাবে নজরে আসে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু পরও জ্বালানির দাম বেড়ে গেছিল। এটি সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতির নতুন ঢেউ তৈরি করে, যার প্রভাব আমরা এখনো অনুভব করছি। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরে জ্বালানির দাম কোথায় দাঁড়াতে পারে?
জ্বালানি তেলের দাম: ২০২২ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি সর্বোচ্চ ১৩৯ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল এবং গড় মূল্য ছিল প্রায় ১০০ মার্কিন ডলার। সেই হিসাবে গত বছর জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কম ছিল। ২০২৩ সালে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৯৮ মার্কিন ডলার, আর গড় ছিল ৮৩ মার্কিন ডলার করে।
তেলের দাম বাড়ানোর জন্য জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর প্রভাবশালী সংগঠন ওপেকের পক্ষ থেকে নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরও গত বছর বিশ্ববাজারে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। তাছাড়া ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের কারণে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা তো ছিলই।
সম্প্রতি ইন্ডাস্ট্রি নিউজ সার্ভিস এনার্জি ইন্টেলিজেন্সের এক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, আগামী এক বছরে তেলের চাহিদা প্রতিদিন প্রায় ১১ লাখ ব্যারেল বৃদ্ধি পাবে। তবে তারা মনে করছে, ওপেকভুক্ত দেশগুলোর বাইরে থেকে তেলের যে সরবরাহ পাওয়া যাবে, সেটি দিয়ে এই বাড়তি চাহিদা মেটানো যাবে। এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, এ বছর জ্বালানি তেলের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে। যদিও ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) সতর্ক করেছে, মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা তেলের বাজারে সংকট তৈরি করছে। কারণ, সমুদ্রপথে বিশ্বে যত তেল পরিবহন করা হয়, তার এক-তৃতীয়াংশই যায় ওই পথ দিয়ে। ফ্রান্সের একটি তেল পরিশোধন কেন্দ্র। ছবি: এএফপিফ্রান্সের একটি তেল পরিশোধন কেন্দ্র। ছবি: এএফপি
গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিস্ট্যাড এনার্জির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ লিওনের মতে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বছর প্রায় ৮০ মার্কিন ডলারে প্রতি ব্যারেল তেল কেনা যাবে। তবে এক্ষেত্রে একটি বড় কিন্তু রয়েছে। ধরা যাক, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরম মাত্রায় পৌঁছে গেছে। সেক্ষেত্রে প্রধান প্রশ্ন হলো- সৌদি আরব কী করবে? আইইএ’র হিসেবে, সৌদি আরব হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক দেশ, যাদের প্রতিদিন প্রায় ৩২ লাখ ব্যারেল অতিরিক্ত তেল উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।
লিওন বলেন, আমরা মনে করি না, সৌদি আরব প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ১৫০ মার্কিন ডলারের ওপরে নিয়ে যেতে চাইবে বা বাড়ানোর অনুমতি দেবে। সেক্ষেত্রে দামও খুব বেশি বাড়বে না। তেমনটি ঘটলে ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম হয়তো ৯০ থেকে ৯৫ মার্কিন ডলার পড়তে পারে। আবার তেলের দাম কমেও যেতে পারে। যদি অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে কম হয় এবং তেলের চাহিদা কমে যায়, সেক্ষেত্রে ওপেকের সদস্যরা উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। তবে সেই সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন জর্জ লিওন।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় না, ওপেক প্লাসের এই নি¤œগামী চাপ সামলানোর মতো যথেষ্ট শক্তি বা সংহতি রয়েছে। সেক্ষেত্রে, ব্যারেলপ্রতি জ্বালানি তেলের দাম ৭০ ডলারেও নেমে আসতে পারে বলে মনে করেন এ গবেষক।
প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম: এ বছর গ্যাসের দাম বাড়বে নাকি কমবে, সেটি অনেকাংশেই ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর নির্ভর করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গত দুই বছরে সেখানকার বাজারে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। আগে ইউরোপের মোট আমদানি করা গ্যাসের প্রায় ৪০ শতাংশ সরবরাহ করতো রাশিয়া, যেগুলো মূলত পাইপলাইনের মাধ্যমে নেওয়া হতো। কিন্তু দেশটি ইউক্রেনে হামলা চালানোর পরে গ্যাসের সরবরাহ ব্যাপকভাবে কমে যায়। অন্যদিকে, বেড়ে যায় দাম, যা সারা বিশ্বেই গ্যাসের দামের ওপর প্রভাব ফেলে। কারণ, রাশিয়ার কাছ থেকে গ্যাস না পেয়ে ইউরোপের দেশগুলো গ্যাসের নতুন সরবরাহকারীর খোঁজ শুরু করে। এখন অবশ্য পরিস্থিতি বদলে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং কাতারের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গাস (এলএনজি) এখন রাশিয়ার বাজার ধরে ফেলেছে। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যেন কোনোভাবেই গ্যাসের সংকট তৈরি না হয়। তাছাড়া গ্যাসের চাহিদাও কিছুটা কমেছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে অক্সফোর্ড ইনস্টিটিউট অব এনার্জি স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. জ্যাক শার্পলস বলেন, আমরা সত্যিকার অর্থেই ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পরে সেটির একটা ব্যবস্থা করেছি। এখন আমরা রাশিয়ার পাইপলাইন গ্যাস ছাড়াই বাঁচাতে শিখে গেছি।
তিনি বলেন, ইউরোপ এখন এলএনজি আমদানির সক্ষমতা বাড়িয়েছে এবং চাহিদা কমিয়েছে। বাজারও সেটি মানিয়ে নিয়েছে। এখন আমাদের বাজার কেবল ভারসাম্যপূর্ণই নয়, বরং দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কারণ আমরা কোনো সংকটজনক পরিস্থিতিতে যেমন নেই, তেমনি আমাদের উদ্বৃত্ত গ্যাসও নেই।
এর মানে ঝুঁকি এখনো রয়েছে। কারণ, যদি গ্যাসের সরবরাহে কোনো সমস্যা হয় বা হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বেড়ে যাতে পারে।
লোহিত সাগরে সৃষ্ট উত্তেজনা এরই মধ্যে এলএনজি আমদানিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। কাতার ও ইউরোপের মধ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার মধ্যে যাতায়াতকারী মালবাহী জাহাজগুলো আগে সাধারণত মিশরের সুয়েজ খাল ব্যবহার করে চলাচল করতো। কিন্তু ওই অ লে উত্তেজনা বৃদ্ধির পর এখন জাহাজগুলোকে আফ্রিকার দক্ষিণ উপকূল ঘুরে যেতে হচ্ছে। ফলে সময় এবং খরচ দুটোই বেশি লাগছে। অবশ্য এখন পর্যন্ত এটি বিশ্ববাজারে গ্যাসের দামের ওপর সামান্যই প্রভাব ফেলেছে বলে দেখা যাচ্ছে। কারণ বাজারে এখনো প্রচুর এলএনজির সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু সামনে যদি চাহিদা বাড়তে থাকে এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বেড়ে যেতে পারে। সূত্র: বিবিসি বাংলা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com